রিয়াদে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘বৈশ্বিক সহযোগিতা, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য জ্বালানি’ বিষয়ক বিশেষ সভার আলোচনায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।
Published : 30 Apr 2024, 11:42 PM
বিভক্ত এক বিশ্বের মুখোমুখি হওয়া এড়াতে উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের বিভেদ আরও তীব্র হওয়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
সৌদি আরবে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, ভবিষ্যতে বিশ্ব ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সেটা অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে।
“কেননা, বর্তমানে বৈশ্বিক উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের বিভেদ বাড়ছে এবং সেটা খুব দ্রুতই বাড়ছে। আমরা যদি এটা না থামাই বা এটাকে মোকাবেলা পদক্ষেপ না নিই, তাহলে প্রযুক্তির উদ্ভাবনের বিশেষ এ সময়ে আমার শঙ্কা ভবিষ্যতে আপনারা খুব বাজে রকমের বিভক্ত পৃথিবীর মুখোমুখি হবেন।”
রিয়াদে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘বৈশ্বিক সহযোগিতা, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য জ্বালানি’ বিষয়ক বিশেষ সভার একটি পর্বে আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিয়া জাহিদির সঞ্চালনায় ওই অধিবেশনের আলোচনায় অংশ নেন ব্ল্যাকরক কোম্পানির চেয়ারম্যান ল্যারি ফিংক, ওলাইয়ান ফিন্যান্সিং কোম্পানির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান লুবনা এস. ওলাইয়ান ও জেনারেল অ্যাটলান্টিকের চেয়ারম্যান উইলিয়াম ফোর্ড।
বৈশ্বিক বিভক্তির মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর করণীয় বিষয়ে এক প্রশ্নে সালমান রহমান বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যা করতে বলা হচ্ছে, তারা তাই করছে। কিন্তু তার এমন সব বৈশ্বিক ঘটনায় ভুগছে, যার সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্রব নেই।
“আমি মনে করি আমাদের মতো দেশগুলো বৈশ্বিক আর্থসামাজিক ব্যবস্থার এমন প্রভাব থেকে কীভাবে মুক্ত থাকতে পারে বা সুরক্ষা পায়, সেটা দেখতে হবে।”
এক্ষেত্রে ২০১০ সালের পর প্রতিবছর বাংলাদেশ সাড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও কোভিড-১৯ মহামারীর পর ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের ধাক্কায় সেটা বাধাগ্রস্ত হওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদ্ষ্টো সালমান রহমান বলেন, ”মহামারীর মধ্যেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের বেশি হয়েছে। যখন রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হল, আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ানোর কারণে ডলার খুব শক্তিশালী হয়ে যায়।
“১২ বছর ধরে আমাদের মুদ্রা বেশ শক্তিশালী ছিল। কিন্তু ডলার শক্তিশালী হওয়ার কারণে রাতারাতি ২০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের থেকে শস্য আমদানি করতে পারি না। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না, কিন্তু আমরা তার প্রভাব টের পেয়েছি।”
‘উন্নয়নের পথে হুমকি হতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’
ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে বলেও অনুষ্ঠানে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেন, “অতিমাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তবে প্রযুক্তির সক্ষমতা ভাগাভাগি করলে সুফল পেতে পারে পুরো বিশ্ব। আগামী ৫ বছরে এআই এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে, যা আমাদের চিন্তার বাইরে।
“ভবিষ্যতে মানুষের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি। কর্মক্ষেত্রে মানুষকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হতে পারে।”
গ্রাম পর্যন্ত ফাইবার অপটিক বিস্তৃত করে ইন্টারনেট পরিসেবা বাড়ানোর মাধ্যমে ৭ লাখের বেশি তরুণ-তরুণীদের ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে।
কিন্তু এটা কী যথেষ্ঠ, সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “এ ধরনের পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। সত্যিই তা যথেষ্ঠ, আমার মতে, আমাদের তা সত্যিই (ভাবতে হবে)। এক্ষেত্রে আমি মনে করি সহযোগিতা থাকতে হবে।”
এসব ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের বিশেষ করে যাদের হাতে প্রযুক্তি রয়েছে তাদের আগামী দিনগুলোতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে, যা অন্যদের রক্ষার পাশাপাশি এ বিভক্তি ঠেকাতে পারবে।
গোলটেবিল আলোচনায় ব্ল্যাকরক কোম্পানির চেয়ারম্যান ল্যারি ফিংক বলেন, জনসংখ্যার সঠিক ব্যবহারের জন্য দরকার আইনের শাসন ও যথাযথ শিক্ষা ব্যবস্থা। এছাড়াও অধিকাংশ উন্নত দেশের জনসংখ্যা কম হলেও তারা প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে জনসংখ্যার ঘাটতি পুষিয়ে অর্থনৈতিকভাবে আরও এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রযুক্তির এই অভূতপূর্ব অগ্রগতির কারণে উন্নত বিশ্বের সাথে অনুন্নত বিশ্বের পার্থক্য আরও প্রকট হচ্ছে। আর বিনিয়োগকারীরাও যেখানে লাভ বেশি সেখানে বিনিয়োগ করছে। বিনিয়োগ সেখানেই যাবে যেখানে রিটার্ন আছে, আছে শক্তিশালী পুঁজিবাজার।”
ল্যারি ফিংক বলেন, “বিনিয়োগের মাধ্যমে শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠন করতে হবে। এটি আর্থিক খাতকে গতিশীল করবে। প্রযুক্তির কারণে সবকিছু দ্রুত বদলে যাচ্ছে। যেসব দেশে জনসংখ্যা কমছে, সেখানে প্রযুক্তির ব্যবহারে সামাজিক সমস্যা কম। যেসব দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, সেখানে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।”
বৈশ্বিক পরিস্থিতির ধারণায় মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে মন্তব্য করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিয়া জাহিদি বলেন, তবে প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, জ্বালানি খাতের রূপান্তর বা অবসরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
“তৃতীয়ত, বিনিয়োগ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ভিন্নভাবে কাজ করতে হবে বা আগের তুলনায় বেশি শ্রম দিতে হবে।”