“কস্ট অব ডুয়িং বিজনেসকে বিবেচনায় রেখে ব্যবসা করতে হয়। কেউ লোকসান দিয়ে ব্যবসা করতে চান না। তাই বর্তমানে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে।”
Published : 13 Apr 2025, 10:30 PM
ব্যবসায়ীদের ঋণ নেওয়ার চাহিদা কমে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি কমতে কমতে ফেব্রুয়ারিতে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে ঠেকেছে।
আগের মাসে এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, জুলাই আন্দোলন শুরুর পর থেকেই বেসরকারি খাতের ঋণে নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে।
গত জুলাইয়ে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও সরকার পতনের মাস অগাস্টে তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে।
পরের মাস সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ, যেটি ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
নিম্নমুখী এ হার পরের মাসে কমে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে। আর নভেম্বরে আরও কমে হয় ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির তথ্য আছে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে। এসব তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এত কম প্রবৃদ্ধি গত দশ বছরে কখনও হয়নি।
এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে কোভিড মহামারীর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল।
প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানির চাহিদা কমলে ব্যাংক ঋণ কমবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ কম করায় মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কম হয়েছে। আর বিনিয়োগ কম হলে বেসরকারি খাতে ঋণ কমবেই।”
তিনি বলেন, “অগাস্টের পর দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে নতুন বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করার আগে অনেক ধরনের বিষয় বিবেচনায় নেন।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বাজারে অর্থপ্রবাহ কমিয়ে রাখার যে নীতি ঠিক করেছে, ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি এরই মধ্যে তার চেয়ে নিচে নেমে গেছে।
সংকোচনমূলক নীতি বজায় রাখার ধারায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছর জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের অর্থবছরের একই সময়ে মূলধন যন্ত্রপাতির ঋণপত্র বা এলসি খোলা কমেছে ৩০ দশমিক ১০ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে এলসি খোলা হয় ১১৫ কোটি ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৬৫ কোটি ডলার।
রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো টাকা ধার নেয়। একে বলা হয় ব্যাংকিং খাতের নীতি উপাদান (পলিসি টুলস)। এর সুদ হারকে বলা হয় নীতি সুদ হার (পলিসি রেট)। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে তারল্য ও বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করে।
রেপোর সুদ বাড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর তহবিল পাওয়ার খরচ আরও বাড়ে। তাতে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুদহার বেড়ে যায়।
এই সুদহার বেড়ে যাওয়াও বেসরকারি ঋণে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার একটি কারণ বলে মনে করেন মোহাম্মদ আলী।
তিনি বলেন, “ঋণের উচ্চ সুদহারও প্রবৃদ্ধি কমার কারণ। তবে উচ্চ সুদ থাকবেই, কারণ রেপো রেট ১০ শতাংশ। তাই ব্যাংক ঋণের সুদহার কমার কোনো কারণ নেই।”
২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিসুদহার বা রেপো রেট বাড়াচ্ছে। চলতি বছর জানুয়ারি-জুলাই ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর মুদ্রানীতি ঘোষণার দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতি কমা না পর্যন্ত নীতি সুদহার ১০ শতাংশে রাখা হবে। মূল্যস্ফীতি কমলে নীতিসুদহার কমানো হবে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, বর্তমানে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের সুদহার ধার্য করছে ব্যাংকগুলো, যা এক বছর আগেও ছিল ১১ থেকে ১২ শতাংশ।
অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এবিসিসিআই) সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জাম হোসেন বলেন, “ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণ করছে কম। এক বছর আগেও এ ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ শতাংশ। এখন ১৫ থেকে ১৬ শতাংশের নিচে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “কস্ট অব ডুয়িং বিজনেসকে বিবেচনায় রেখে ব্যবসা করতে হয়। কেউ লোকসান দিয়ে ব্যবসা করতে চান না। তাই বর্তমানে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে।”