ফের রেপো হার বাড়িয়ে সতর্ক মুদ্রানীতি

রেপো সুদ হার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ৬ শতাংশ হয়েছে। আর রিভার্স রেপো হার আগের ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2023, 10:49 AM
Updated : 15 Jan 2023, 10:49 AM

বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রতিকূলতার মধ্যে মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে বাজারে অর্থের জোগান আরও কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; এর অংশ হিসেবে নীতি সুদহার আরও এক দফা বাড়িয়ে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য ‘সতর্ক ও সঙ্কুলানমুখী’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে।

এ পরিবর্তনের ফলে এক দিন মেয়াদী রেপোর (পুনঃক্রয় চুক্তি) সুদ হার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ৬ শতাংশ হয়েছে। আর রিভার্স রেপো হার আগের ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমন, বিনিময় হারের চাপ নিয়ন্ত্রণ, সরকারের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়াজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে মুদ্রানীতিতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ব্যাংক রেট আগের মতই ৪ শতাংশে রাখা হয়েছে। তবে পরে আলাদাভাবে বিশেষ রেপো হার ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বলেন, “আমরা একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি।”

ব্যাংকগুলো যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে, তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদ হারে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়, তাকে বলে ব্যাংক রেট।

এসব নীতি হারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে তারল্য প্রবাহ আর অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে, যাতে বাজেটে ঘোষিত সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধির উপযুক্ত আর্থিক পরিবেশ তৈরি হয়, আবার বাজারে পণ্যমূল্যও সহনীয় মাত্রায় রাখা যায়।

কোভিড মহামারীর ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বড় ধরনের চাপে পড়েছে; ডলারের বিপরীতে মান হারিয়ে চলছে টাকা, মূল্যস্ফীতিও পৌঁছেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে।

রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানায় অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে; জ্বালানি সংকটের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের মত দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকিও বাংলাদেশের সামনে রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের জুন মাসে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে রেপো সুদ হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর তিন মাসের মাথায় সেপ্টেম্বরে তা আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়। নতুন মুদ্রানীতে তা পুরো ৬ শতাংশ করা হল।

মাঝে কিছুদিন বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও আইএমএফ এর পরামর্শে এখন আবার ছয় মাস অন্তর মুদ্রানীতি ঘোষণার পথে ফিরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ, অর্জন হয়েছে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ, হয়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।

সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ১ শতাংশ।

মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রা (এম২) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১০ শতাংশ, সে জায়গায় হয়েছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

আর ২০২৩ সালের জানুয়ারী-জুন সময়ের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩৭.৭ শতাংশ, যেখানে গত বছরে জুনে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে তা ধরা হয়েছিল ৩৬ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, গত জুনেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল।

সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ, গত জুনে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে যা ধরা হয়েছিল ১৮ দশমিক ২ শতাংশ।

মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রা (এম২) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ, জুনের মুদ্রানীতিতে ধরা হয়েছিল ১২.১ শতাংশ।

২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশে ধরে রেখেই মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে। তবে সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, নতুন মুদ্রানীতি সরকারের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।