নৌপথ তৈরি না করলে এক্সপ্রেসওয়েতেও জট লাগবে: নৌ প্রতিমন্ত্রী

খালিদ মাহমুদ বলেন, “একটি ট্রাকে একটি কন্টেইনার আসে, কিন্তু একটি জাহাজ দুইশ থেকে তিনশ কন্টেইনার বহন করতে পারে। কাজেই নৌপথে কন্টেইনার নিয়ে আসার কথা ভাবতে হবে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2022, 02:20 PM
Updated : 27 Sept 2022, 02:20 PM

বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদকে ঘিরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে মন্তব্য করে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সবাই বন্দর ঘিরে আর সড়ক নিয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু একটি বিষয় নিয়ে কেউ কিছু বলেননি। তা হল অভ্যন্তরীণ নৌপথ।

“নৌপথ তৈরি না করলে, সিক্স লেইন বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ডাবল রেললাইন বা যাই বলেন না, সবকিছুতে জ্যাম লেগে যাবে। একটি ট্রাকে একটি কন্টেইনার আসে, কিন্তু একটি জাহাজ দুইশ থেকে তিনশ কন্টেইনার বহন করতে পারে। কাজেই নৌপথে কন্টেইনার নিয়ে আসার কথা ভাবতে হবে।”

দৈনিক ইত্তেফাকের আয়োজনে ‘দেশীয় বিনিয়োগে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কথা বলছিলেন প্রতিমন্ত্রী। চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে দেশীয় বিনিয়োগের অনেক সুযোগ আছে মন্তব্য করে বৈঠকে খালিদ মাহমুদ বলেন, “২০০৮ সালের পরে ৪২টি জাহাজ তৈরি করা হয়েছিল। এ জাহাজগুলো দেশীয় মালিকরা তৈরি করেছিলেন এবং তারা ব্যবসা করছেন।

“বন্দর নিয়ে এখন সরকারের কোনো চিন্তা নেই, আছে বাস্তবায়নে। সরকার চিন্তাভাবনার উর্ধ্বে উঠে গেছে। ২০২৬ অথবা ২০২৭ সালের মধ্যে অন্যরকম মেরিটাইম সেক্টর দেখা যাবে বাংলাদেশে, সম্পূর্ণ অন্য রকম…।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা বন্দরকে ঘিরে যে ইপিজেড করা হয়েছে। সেখানে দেশীয় যারা অর্থশালী বা বিত্তশালী তারা কিন্তু বিনিয়োগ করছে। চট্টগ্রাম বন্দরের আয় দিয়ে যে শুধু বন্দরের উন্নয়ন হচ্ছে, তা নয় কিন্তু। চট্টগ্রাম বন্দরের টাকা দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে।

“চট্টগ্রাম বন্দরকে আমরা সিঙ্গাপুরের মত বানাতে চাচ্ছি না। মাতারবাড়ী যে বন্দর পাব, সেখানে সব সুযোগ সুবিধা পাব। সেজন্য অনেকেই বলে থাকেন যে, মাতারবাড়ি হতে যাচ্ছে আগামী দিনের সিঙ্গাপুর, এবং সেটা হবে।”

মহামারীকালে চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে ৩০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “চট্গ্রাম বন্দরের টাকা দিয়ে পায়রা বন্দর হয়েছে। কাজেই চট্টগ্রাম বন্দর শুধু যে পণ্য ওঠানামা করে, তা নয়। বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ।”

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত ড্রেজিং করে নৌপথ চালু রাখতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান খালিদ মাহমুদ।

তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুর কাছে শিমুলিয়া যে ঘাট আছে, সেখানে কন্টেইনার টার্মিনাল ঘাট করা যায় কিনা, চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে দেশে তৈরি একটি জাহাজ ইংল্যান্ডে রপ্তানি করা হয়েছে। যেটা পাঁচ মিটার বরফ কেটে চলাচল করতে পারে। বাংলাদেশের সেই সক্ষমতা আছে। এই সেক্টরে যদি কেউ বিনিয়োগ করতে আসে, আসতে পারেন।”

মেরিটাইম খাতে বিদেশিরাও বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে জানিয়ে খালিদ মাহমুদ বলেন, “আমি অবাক হয়ে যাই, এত আগ্রহ এই সেক্টরে বিনিয়োগ করতে। গত কয়েকদিন আগে একটি আমন্ত্রণে ১৫ দিন আমেরিকায় ছিলাম; ১২ দিনই তাদের ‘ইনল্যাণ্ড ওয়াটার ওয়ে’ এবং ওয়াটার ম্যানেজম্যান্টসহ অন্যান্য বিষয়গুলো চুলচেড়াভাবে দেখেছি।

“প্রায় ৩৮টি আমেরিকান কোম্পানির সঙ্গে রাউন্ড টেবিল বৈঠক হয়েছে। তারা বাংলাদেশের বিনিয়োগের বিষয়ে জেনেছে এবং আগ্রহ দেখিয়েছে।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সমুদ্রে যেমন অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, আমাদের সীমানা নির্ধারণ হয়েছে, আমরা কিন্তু অর্থনীতি দরজাও খুলে দিয়েছি। এখানে বিনিয়োগ করার ‍সুযোগ আছে। দেশীয় বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আসুক তা আমরা চাই।”

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না- এমন বক্তব্যকে ‘অসত্য’ দাবি করে তিনি বলেন, “বারবার বলা হয়, বাংলাদেশে বিদেশ থেকে কোনো বিনিয়োগকারী আসতেছে না। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের চেয়ারে বসে দেখি, কী বলছে তারা।

“এত বিনিয়োগকারী আসছে, আমরা তো স্পেসটাও তৈরি করে দিতে পারছি না। অথচ বলা হচ্ছে বাংলাদেশে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ নেই। এটা সত্য নয়, পুরোপুরি অসত্য কথা।”

খালিদ মাহমুদ বলেন, পদ্মসেতু হওয়ায় মোংলা ও পায়রা বন্দরে ‘বিরাট সম্ভবনা’ তৈরি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথ বাড়িয়ে ১০ হাজার কিলোমিটারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এই নৌপথ ইতোমধ্যে রাজশাহী পর্যন্ত টার্গেট করা হয়েছে। এই নৌপথ হলে মালামাল পরিবহনের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।”

কেরানীগঞ্জের পানগাঁও কন্টিনার বন্দর কেন কাজে আসছে না- তা খুঁজে বের করতে একটি কর্মশালার প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।