সাধারণত অর্থবছরের প্রথমদিকে এডিপির ব্যয়ের পরিমাণ কম থাকে।
Published : 28 Oct 2024, 10:57 PM
জুলাই ঘিরে আন্দোলন, নৈরাজ্য আর অগাস্টে ক্ষমতার পালাবদলে তৈরি হওয়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে থমকে যাওয়া উন্নয়ন কাজের প্রভাবে এডিপি বাস্তবায়নের হার ১৫ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিন্মে নেমেছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রথম প্রান্তিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থ ব্যয় হয়েছে মোট বরাদ্দের মাত্র ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ; আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।
সোমবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নের সবশেষ তথ্য প্রকাশ করে।
এ বিভাগের ওয়েবসাইটে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে তথ্য পাওয়া যায়। এতে দেখা যায় ওই অর্থবছর থেকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এর থেকে কম এডিবি বাস্তবায়ন হয়নি।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে এডিপিতে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট পাস করেছিল।
মাঠ পর্যায়ের কাজে ঢিমেতালের পাশাপাশি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেয়।
এতে করে আগের সরকারের নেওয়া অনেক প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে চলমান অনেক প্রকল্পের কাজও স্থগিত হয়ে যায়। এসব মিলিয়ে এডিপির বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় কমে যায়, বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আইএমইডির হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, জুলাই থেকে শুরু হওয়া অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে টাকার অঙ্কে ১৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা।
একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে বাস্তবায়নের হার হয়েছে ২ দশমিক ১৮ শতাংশ বা ৬ হাজার ৭২ কোটি টাকা। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে এ হার ছিল ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
সাধারণত অর্থবছরের প্রথমদিকে এডিপির ব্যয়ের পরিমাণ কম থাকে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার তা কিছুটা বেশিই কম হয়েছে। এর আগের ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ হার ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ, ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিগত সরকার প্রথম প্রান্তিক থেকেই প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দিয়ে আসছিল। সবশেষ পাঁচ অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সরকারের তোড়জোড়ে এ হার বছর বছর কিছুটা বাড়ছিল।
তবে উল্টো ঘটনা ঘটে নির্বাচন সামনে রেখে অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে সংকোচন নীতি গ্রহণ করায়। এতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তা সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে আসে।
এরপর চলতি অর্থবছরের শুরুতে প্রথমে সরকারিতে চাকরিতে কোটা সংস্কার এবং পরে সরকার পতনেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সারাদেশ অচল হয়ে পড়লে মুখ থুবড়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি। এর রেশ পড়ে চলমান প্রকল্পের কাজেও।
অগাস্টে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিয়ে সরকারের পতন ঘটায়। তিন দিন কার্যত সরকার শূন্য থাকার পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হাল ধরে।
এরপর আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া প্রকল্পের কী হাল হবে তা নিয়ে বিদেশি সংস্থার মাঝেও দানা বাঁধে শঙ্কা। এর মাঝে আমলাতন্ত্র নতুনভাবে সাজাতে যেয়ে বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতির মাঝে দায়িত্বরত প্রকল্প পরিচালকরাও নির্দেশনার অভাবে ঢিমেতালে সময় পার করেন।
আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা থাকায় ও নানা শঙ্কায় গা ঢাকা দেন প্রকল্পের ঠিকাদাররাও; এতে পুরো থমকে যায় প্রকল্পের কাজ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাভাবিকভাবেই এর প্রতিফলন পরিসংখ্যানেও পাওয়া যাবে অনুমেয়ই ছিল, হালনাগাদ তথ্যে সেটিই এবার স্পষ্ট হল।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম একনেক সভায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আগের সরকারের ‘রাজনৈতিক কারণে’ নেওয়া প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনার কথা বলেন।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলেন, “বিগত সরকারের সময়ে একনেক সভায় বিপুল সংখ্যক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের গতি এক থাকত না।
“অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্পও থাকত। এখন সেসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাজেই আগে একনেক সভা মানেই যেখানে অর্থ ব্যয়ের কর্মযজ্ঞ ছিল, এখন সে পরিধি কমে আসবে।”
ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলো চালু থাকবে: অর্থ উপদেষ্টা
প্রকল্পের নিশ্চয়তা চায় জাপান, সালেহউদ্দিন বললেন 'চলবে প্রতিটি'