সব মিলিয়ে ১১০ কোটি ডলার পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে সরকার
Published : 04 Dec 2024, 02:01 AM
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ আগামী ‘ফেব্রুয়ারি-মার্চের’ মধ্যে হাতে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী অন্তর্বর্তী সরকার।
ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মঙ্গলবার প্রথম বৈঠকের পর এ সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
আন্তর্জাতিক সংস্থাটির পর্ষদের অনুমোদন পেলে বাড়তি অর্থ মিলিয়ে চতুর্থ কিস্তিতে মোট ১১০ কোটি ডলার পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।
সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি ও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির চাপ সামাল দিতে তৃতীয় কিস্তিতে পরিকল্পনার চেয়ে বাড়তি অর্থ ছাড় করেছিল আইএমএফ।
সেবার সব মিলিয়ে ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও পাওয়ার কথা ছিল ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘চতুর্থ কিস্তি আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে পেয়ে যাব আশা করছি। এবারও বাড়তি অর্থ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।’’
প্রতিনিধি দলের সফর শেষে আগামী ডিসেম্বরে আইএমএফের পর্ষদে চতুর্থ কিস্তির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ঢাকা ছাড়ার আগে সংস্থাটির কর্মকর্তারা তাদের প্রাথমিক মতামত জানিয়ে দেবেন।
সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘‘আজ মূলত তারা এসেছে রাজস্ব খাত, বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা, মূল্যস্ফীতি, এগুলো দেখার জন্য। এসব বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে আলাপ করেছে, এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলাপ করবে।’’
ঋণ চুক্তির পরিকল্পনা অনুযায়ী চতুর্থ কিস্তিতে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ আছে ৮ কোটি ৩৩ লাখ এসডিআর (আইএমএফ মুদ্রা)। চতুর্থ কিস্তি পেলে মোট ৩৫ কোটি ২৩ লাখ এসডিআর পেয়ে যাবে বাংলাদেশ, যা মোট ঋণের ৩৩ শতাংশ।
১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে সবশেষ তৃতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার ও শর্ত পরিপালনের অগ্রগতি দেখতে আইএমএফ মিশন এ সফর শুরু করেছে।
বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি। এ পর্যন্ত ঋণের প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
নতুন ৩০০ কোটি ডলার নিয়ে আলোচনা শুরু
এবার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন করে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ চাইবে বাংলাদেশ ব্যাংক, যেটা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে আইমএফের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
নতুন ৩ বিলিয়ন ডলারের আনুষ্ঠানিক আবেদন প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘চলমান ৪৭০ কোটি ডলার তো প্রথম প্যাকেজের। কিন্তু সংস্কার করতে হলে আমাদের আরও ফান্ড লাগবে। আমাদের অনেক কিছু সংস্কার করতে হচ্ছে যেমন ব্যাংকিং খাত, রাজস্ব খাত। এগুলো করতে আমাদের ফান্ড লাগবে।’’
আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে আছেন সংস্থাটির গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকস বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও, যিনি তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের সময়ও ঢাকা এসেছিলেন।
প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘তারা মূলত রাজস্ব আয় বাড়ানো, আর্থিক ঘাটতি, বাজেট লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি, মূলস্ফীতি— এগুলো দেখছে।
‘‘এর জন্য কী কী কৌশলগত পদক্ষেপ বাংলাদেশ নিয়েছে, আগামীতে কৌশলগত পদক্ষেপ কী নেওয়া হবে, সে বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছে।’’
ব্যাংক খাতের বিপুল খেলাপি ঋণ অর্থনীতিতে কোন ধরনের চাপ তৈরি করতে পারে, সে বিষয়েও সরকারের মনোভাব জানতে চেয়েছে প্রতিনিধি দলটি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন পদক্ষেপ নেবে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হয়।
উন্নয়ন সহযোগিরা দেবে ৬০০ কোটি ডলার
আইএমএফ এর পঞ্চম কিস্তি ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে আগামী বছরের মে মাসে। এর সঙ্গে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ওপেক ফান্ডসহ চলতি অর্থবছরেই ৬০০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার আশা করছে সরকার।
এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এদের মধ্যে কিছু দিন পরই আলোচনা করতে ঢাকা আসবে এডিবি প্রতিনিধি দল।”