“অনেকে মনে করছে, আমরা সব ভিক্ষা করে নিয়ে আসছি, টাকা পয়সা। আমরা কিন্তু সব নিয়ম কানুন, শর্ত মেনে কাজ করছি।”
Published : 17 Feb 2025, 02:40 PM
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ‘মোটামুটি ভালো’ অবস্থায় আছে দাবি করে অর্থ উপদেষ্টা অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আইএমএফ এর পরের কিস্তির অর্থ ছাড় পেতে সরকার ‘মরিয়া’ হয়ে নেই।
সোমবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের একটি সেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আইএমএফ এর ঋণ নিয়ে কথা বলেন তিনি।
আইএমএফের কাছ থেকে এই ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাওয়ার জন্য আর্থিক খাতে নানা ধরনের সংস্কারের শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। চতুর্থ কিস্তিতে অর্থ পেতে শর্ত ছিল চারটি। এর মধ্যে বিনিময় হার ও রাজস্ব আহরণ নিয়ে শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আইএমএফ সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
সব শর্ত একসঙ্গে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের কিছু কিছু কাজ আছে। আমরা তাড়া করছি না। অনেকে মনে করছে, আমরা সব ভিক্ষা করে নিয়ে আসছি, টাকা পয়সা। আমরা কিন্তু সব নিয়ম কানুন, শর্ত মেনে কাজ করছি।
“তারা বললেই যে সব হবে তা না, আমরা কিন্তু সরকার। আমরা আমাদের মত করে করব, আমরা বলেছি সব একসাথে করতে পারব না।”
কথা ছিল, তৃতীয় পর্যালোচনা শেষ করে ৫ ফেব্রুয়ারি এর বোর্ড সভার পর ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছাড় করবে আইএমএফ। তবে সেই সভা ১২ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। ফলে চতুর্থ কিস্তি অনুমোদনের বিষয়টিও বিলম্বিত হচ্ছে।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা মোটামুটি ভালো আছে। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট পজিটিভ, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট পজিটিভ, রেমিটেন্স ভালো। এমন না যে, মরিয়া হয়ে উঠেছি আইএমএফ এর অর্থটা পেতে।
“আমরা বলেছি, আমরা একটু অপেক্ষা করব। একসাথে দুটো কিস্তি পাবে জুনে। তাহলে অঙ্কটা বড় হবে।”
একসঙ্গে দুই কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব একপক্ষের কি না, সাংবাদিকের এ প্রশ্নে তিনি বলেন,
“তাদেরও (আইএমএফ) সাজেশন ছিল, আমরাও বলেছি, শর্ত বাস্তবায়নে সময় লাগবে। সব একসঙ্গে না, সমঝোতার মাধ্যমেই হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে চলতি হিসাবে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) তিন কোটি ৩০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত আছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৩৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল।
চলতি হিসাব ঘাটতি থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়াতে সরকারকে ঋণ করতে হয়। তখন স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ণ শুরু হয়। আমদানি খরচ বেড়ে যায়।
গত ডিসেম্বর শেষে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্ত আছে ১৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের এই সময়ে যা ছিল ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
চলতি বছরের প্রথমক সাত মাসে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ সময়ে রেমিটেন্স এসেছে ১৫ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে তৃতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার ও শর্ত পরিপালনের অগ্রগতি দেখতে গত ৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা সফর করে আইএমএফ মিশন।
ওই সফর শেষে আইএমএফের প্রতিনিধি দল বলেছিল, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানো, আর্থিক খাতের সংস্কার ও অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে আগের ঋণের বাইরে নতুন করে ৭৫ কোটি ডলার দিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে তারা।
এ ঋণ আইএমএফের পর্ষদে অনুমোদন পেলে আগের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।