অস্থির ডলার বাজারে মানি এক্সচেঞ্জে ক্রেতা কম

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে 'কিছু কারসাজি' চিহ্নিত করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

শেখ আবু তালেববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2022, 05:32 AM
Updated : 28 July 2022, 05:32 AM

অস্থির বাজারে ডলারের বিনিময় হার সামান্য কমলেও ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে বিদেশি মুদ্রা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ঢাকার মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে।

মঙ্গলবার দেশে খোলা বাজারে ডলারের দর রেকর্ড ১১১ টাকায় উঠেছিল, বুধবার তা ১০৮ টাকায় নেমে আসে।

কিন্তু রাজধানীর মতিঝিল ও পল্টন এলাকার মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে ঘুরে ক্রেতা পাওয়া গেল কম। বিক্রেতা বললেন, দাম আরও বাড়তে পারে- এমন শঙ্কায় ক্রেতারা হয়ত সময় নিচ্ছেন।

বুধবার বিকালে পল্টন এলাকার মানি এক্সচেঞ্জগুলো ছিল একেবারেই ফাঁকা। অথচ দিনের বেলা এসব দোকানের বিভিন্ন ডেস্কের সামনে ক্রেতা ও ডলারের দর জানতে আসা মানুষের ভিড় লেগে থাকে। কোলাহলে দর নিশ্চিত হতে কথা বলে নিতে হয় কয়েকবার করে।

পাফ মানি এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “অনেক কষ্টে ব্যবস্থা করে ৩০০ ডলার এনেছি। কম্পিউটার চালু রেখে বসে আছি। কেউ পাসপোর্ট নিয়ে এলে এনডোর্স করে দেব। কিন্তু দ্যাখেন সব ডেস্ক ফাঁকা... কোনো লোক নাই।”

Also Read: ডলারের দামে 'কিছু কারসাজি' চিহ্নিত: অর্থমন্ত্রী

Also Read: ডলারের দরে উল্লম্ফন, খোলা বাজারে কিনতে লাগছে ১১১ টাকা

সরবরাহ সংকটে গত কয়েক মাস ধরেই টাকার বিপরীতে ডলারের দর বাড়ছে। খোলা বাজারে ডলারের এমন সংকট আগে দেখা যায়নি।

তবে খোলা বাজারে এ সংকটের সঠিক কারণ বোঝা যাচ্ছে না। বিক্রেতারা বিভিন্ন রকম কথা বলছেন। আবার ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে 'কিছু কারসাজি' চিহ্নিত করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

পল্টনের এক মানি এক্সচেঞ্জের মালিক বললেন, বিদেশ থেকে যারা ফেরেন, মূলত তারাই খোলা বাজারের কাগুজে ডলারের প্রধান উৎস। আর বিদেশগামীরা এ বাজারের মূল ক্রেতা।

ঈদের আগে অনেকে বিদেশে গেছেন, তারা ডলার কিনে নিয়ে গেছেন। আবার যারা ফিরেছেন, এই অস্থিরতার মধ্যে দাম আরও বাড়ার আশায় অনেকে ধরে রেখেছেন।

আবার যাদের প্রায়ই বিদেশে যেতে হয়, সঙ্কট প্রলম্বিত হতে পারে ভেবে তারা অনেকে মজুদ করে রেখেছেন, যাতে আবার বিদেশে যাওয়ার সময় বাড়তি দরে কিনতে না হয়।

ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক লেনদেন করেন ব্যাংকের মাধ্যমে। কিন্তু ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে নিয়মের ঝক্কি বেশি বলে পর্যটকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানি এক্সচেঞ্জ থেকেই ডলার সংগ্রহ করেন।

ডলারের দরের ঊর্ধ্বগতির কারণ খুঁজতে বুধবার মানি এক্সচেঞ্জগুলো পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। রাষ্ট্রীয় আরো কয়েকটি সংস্থার সদস্যদের এসে খোঁজ-খবর নিতে দেখা গেছে।

বুধবার বিকাল ৩টার দিকে পল্টন এলাকায় কথা হয় প্রবাস ফেরত মো. শাহীন আলমের সঙ্গে। ইউরো ও ডলার বিক্রি করতে এলেও তিনি বিক্রি না করেই ফিরে যাচ্ছিলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, “তারা ১০৬ টাকা ৫০ পয়সা দিতে চায় ডলারে…, তাই বিক্রি করিনি। আরো দেখব।”

মেক্সিমকো মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশারফ হোসেইন জানালেন, বুধবার দুপুরে বিক্রি দর ১০৮ টাকায় নামার পর আবার ১০৯ টাকায় উঠেছিল ডলার না থাকার কারণে।

“তবে এই দাম থাকবে না… সামনের সপ্তাহে নতুন ডলার আসবে বাজারে। ক্রাইসিসটা অল্প সময়ের।’’

এদিকে খোলা বাজারের সংকট দেখা দেওয়ায় মঙ্গলবারের চেয়ে ৬ থেকে ৮ টাকা বেশি দরে ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করেছে।

Also Read: খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০২ টাকার বেশি

Also Read: ডলার কিনতে লাগবে আরও টাকা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক নগদে ডলার বিক্রি করেছিল ১০২ টাকা ৫০ পয়সায়, বুধবার বিক্রি করেছে ১০৫ টাকায়।

বুধবার নগদে সর্বোচ্চ দরে ডলার বিক্রি করেছে এনআরবি ব্যাংক, ১০৯ টাকায়। আর ইস্টার্ন ব্যাংক ১০৮ টাকায়, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায় আর মিডল্যান্ড ব্যাংক ১০৬ টাকায় ছেড়েছে ডলার।

ব্যাংক ও খোলা বাজারে ডলারের দরের ব্যবধান এমনিতে ৪-৫ টাকা থাকে। মাঝে তা বেড়ে ৭-৮ টাকা হয়েছিল। বুধবার সেটা অনেকটা সমান হয়ে যায়, যা আগে দেখা যায়নি।