খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০২ টাকার বেশি

ডলার নিয়ে হাহাকারের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দিতে আরও ৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; তাতে খোলা বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্র্রার সংকট কমানো যায়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2022, 04:23 PM
Updated : 21 July 2022, 04:23 PM

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে ১০২ টাকা ৪০ পয়সায়; যা টাকার বিপরীতে ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় হার।

আমদানির চাহিদার বিপরীতে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহ তুলনামূলক কম হওয়ায় ডলার সংকটে ভুগছে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেন।

বৃহস্পতিবার চাহিদা মত ডলার পেতে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে আগের দিনের চেয়ে দর বাড়িয়ে প্রস্তাব করে।

তাতে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের মান আরো ৫০ পয়সা বেড়ে ৯৩ দশমিক ৯৫ টাকা থেকে ৯৪ দশমিক ৪৫ টাকা হয়। আর আন্তঃব্যাংক ও খোলা বাজারে ডলারের বিনিময় হারের পার্থক্য দাঁড়ায় সাড়ে ৮ টাকা; অতীতে যা সর্বোচ্চ ৫ টাকায় উঠেছিল।

পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ তুলে ধরে মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজও ব্যাংকগুলোর কাছে ৭০ মিলিয়ন (৭ কোটি) ডলার বিক্রি করা হয়েছে ৯৪ দশমিক ৪৫ টাকায়।”

কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিশ্বজুড়ে চাহিদা বাড়ায় পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান। যার কারণে বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় খরচ বৃদ্ধি পায়। বিশ্বজুড়ে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায় এবং ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়।

আমদানি চাহিদা বাড়ায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমছে; সঙ্গে কমছে টাকার মান।

বুধবারও আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন হয়েছিল ৯৩ দশমিক ৯৫ টাকায়। ওই দরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খোলাবাজারে তা ১০২টাকায় ওঠে।

প্রতিদিন আন্তঃব্যাংকে যে দরে ডলার কেনাবেচা করে ব্যাংকগুলো; তার মধ্যে সর্বোচ্চ দর বেছে নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করে।

ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলার কেনাবেচার বর্তমান পদ্ধতিতে যে দরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করে, তাকে আন্তঃব্যাংক ডলার রেট বা বিনিময় মূল্য ধরা হয়।

এই আন্তঃব্যাংক দরের সঙ্গে প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ৫ পয়সা পর্যন্ত বাড়াতে পারে ব্যাংকগুলো। সাধারণত চাহিদা তীব্র হলে সেটা করা হয়।

বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোতে আমদানি পর্যায়ে ‘বিলস ফর কালেকশনে (বিসি)’ ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৯৪ দশমিক ৫০ পয়সা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার সবগুলো ব্যাংকই এই দরে ডলার বিক্রি করেছে উদ্যোক্তাদের কাছে।

বৃহস্পতিবার সোশাল ইসলামী ব্যাংক নগদে ১০২ টাকায় ডলার বিক্রি করেছে। আর মেঘনা ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০১ টাকায়। বুধবারও সোশাল ইসলামী ব্যাংক নগদ অর্থে ডলার বিক্রি করেছিল ৯৮ টাকায় আর মেঘনা ব্যাংকে দর ছিলো ৯৯ দশমিক ৫০ টাকা।

ব্যাংকে ডলার সংকটের মধ্যে খোলা বাজারেও সরবরাহ কমেছে। রাজধানীর গুলশান, মতিঝিল ও পল্টন এলাকার মানি এক্সচেঞ্জগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ডলার বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১০২ টাকা ৪০ পয়সায়।

পল্টন এলাকার পুরনো ব্যাবসায়ী ও জনতা মানি এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. আমিনুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে ডলারের বিক্রির একটু চাপ ছিল। দুপুরে তা বাড়ায় ১০২ টাকায় বিক্রি করি। এক সময়ে ১০২ দশমিক ৪০ টাকায়ও বিক্রি করি। বিকেলে কিছুটা নরমাল হলেও ১০২ টাকায় বিক্রি করেছি, কিনছি ১০১ দশমিক ৫০ টাকায়।”

একই কথা জানালেন গুলশানের সিটি মানিচেঞ্জারের ব্যবস্থাপক হাসিবুর রহমান। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিকেলে সর্বোচ্চ ১০২ টাকায় বিক্রি করেছেন ডলার।

“হঠাৎ করেই ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে, সেই তুলনায় সরবরাহ কমে গেছে, তাই দাম বাড়তি।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে (ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে কেনাবেচা) গত বছরের এপ্রিলে ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। জুনে তা মাত্র এক পয়সা বাড়লেও আগস্টের পর টাকার মান দ্রুত কমতে থাকে।

১ অগাস্ট ডলারের বিপরীতে টাকার মান ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা, যা ৩১ অগাস্ট ৮৫ টাকা ২০ পয়সা হয়।

ওই মাসেই ২৫ অগাস্ট দেশের ইতিহাসে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। এরপর থেকে রিজার্ভ কমেছে।

গত মার্চে ডলারের বিপরীতে টাকার মান দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ২০ পয়সায়। এপ্রিলে হয় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা এবং মে মাসের ১০ তারিখে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় উন্নীত হয়।

গত ৩১ মে টাকার বিপরীতে ডলার লেনদেন হয় ৮৯ টাকায়। এরপর থেকে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত অর্থবছর শুরু হয়েছিল ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ নিয়ে। বৃহস্পতিবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত তথ্য অনুয়ায়ী গত ১৩ জুলাই পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়নের স্থিতি ছিল ৩৯ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন।

সাধারণত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে চাহিদা তৈরি বা সংকট দেখা দিলে বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছে নিট ২৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডলার কেনা-বেচা দুটোই করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০২০-২১ অর্থবছরে কিছু ডলার বিক্রি করলেও বাজার থেকে নিট ৭৭০ কোটি ডলার তুলে নেয়। অর্থাৎ ডলার সরবরাহ অতিরিক্ত হওয়ায় টাকার মান ধরে রাখতে ব্যাংকগুলোর কাছে থেকে এ পরিমাণ ডলার কিনে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০২১-২২ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করেছে।