জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুতের যে লোড শেডিং এখন হচ্ছে, আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা চলতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
Published : 07 Jul 2022, 03:49 PM
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সবগুলো বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার প্রধান এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, “আগামী সেপ্টেম্বরে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। দামি তেলভিত্তিক ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবর্তে তখন সেগুলোকে কাজে লাগানো যাবে।”
অবশ্য এই সময়ের মধ্যে ‘সব ধরনের সাশ্রয়ী নীতিকৌশল’ অবলম্বন করে বিদ্যুতের চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা গেলে বিদ্যুতের সংকট ‘অতটা হবে না’ বলে মনে করছেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
বিতরণ কোম্পানির প্রতিনিধিরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য অফিস সময় কমিয়ে আনা, সন্ধ্যার পর পর সব ধরনের অনুষ্ঠান শেষ করা, এসি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার মত বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেন বৈঠকে।
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে জ্বালানি স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়েছে দেশে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে এখন আবার নিয়ম করে সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে (লোড শেড) করতে হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে বিদ্যুতের যে চাহিদা রয়েছে, উৎপাদন হচ্ছে তার চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ কম, যা লোড ব্যবস্থাপনার (লোডশেডিং) মাধ্যমে সমন্বয় করতে হচ্ছে।
২০০৯ সালের পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে ‘বড় পরীক্ষার’ মধ্যে পড়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, “যে এলএনজির দাম ছিল প্রতি ইউনিট ৫ ডলার, সেটা এখন ৪১ ডলার হয়ে গেছে। ৭১ ডলারের ডিজেল এখন ১৭৭ ডলারে উঠে গেছে। ব্লুমবার্গসহ কিছু মিডিয়া সেটা ৬০০ ডলারে পৌঁছে যাওয়ার আভাস দিচ্ছে।”
জ্বালানির কারণে এখন সারা বিশ্বে সংকট সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জাপানের মত দেশে লোড শেডিং শুরু হয়ে গেছে। জার্মানি বিদ্যুতের রেশনিংয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াও হচ্ছে।
“ব্রিটেন একটা অ্যাপ তৈরি করেছে- কোন এলাকায় কখন লোডশেড হতে পারে, সেই তথ্য দেওয়ার জন্য। উন্নত বিশ্ব অভিঘাতে পড়েছে, আমাদের আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই।”
আপাতত সমাধান ‘সাশ্রয়ী হওয়া’
সঙ্কট সমাধানে আপাতত মহামারীকালের মতো হোম অফিস চালু করা, অফিসের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে বলে জানান জ্বালানি উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “সব বিতরণ সংস্থাসহ খাত সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছি। যা বোঝা গেছে, একমাত্র বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার মাধ্যমেই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করা যায়।
“সবাইকে নিজ দায়িত্বে সাশ্রয়ী হতে হবে; এটা সরকার কিংবা প্রধানমন্ত্রী বলেছে বলে নয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজ দায়িত্ব থেকে এখন সাশ্রয়ী হতে হবে। বৈঠকে আমরা সাশ্রয়ী হওয়ার কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।”
বৈঠকের সুপারিশগুলো হচ্ছে-
>> ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে।
>> সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস-আদালতে কিংবা বাসায় এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামানো যাবে না।
>> আলোকসজ্জা আপাতত বন্ধ করতে হবে।
>> বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করতে হবে।
>> বাজার, মসজিদ, শপিংমলে বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।
>> যে কোনো রাতের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করতে হবে।
সঙ্কটের উত্তরণ কবে
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কবে সম্ভব হবে বলে সরকার মনে করছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, “উত্তরণটা কবে হবে সেটা নির্ভর করছে ইউরোপের যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপর। দেশের মধ্যেও এটা একটা যুদ্ধের মত অবস্থা দাঁড়িয়ে গেছে। সবাই সচেতন হলে মোকাবেলা সম্ভব।”
এখন বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি পৌঁছেছে জানিয়ে তিনি বলেন, কৃচ্ছ্র সাধনের মাধ্যমে চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াটে নামিয়ে আনা সম্ভব।
“আর তা করা গেলে দৈনিক হয়তো ৫০০ মেগাওয়াটের মতো লোড শেডিং হবে। সেটা রেশনিংয়ের মাধ্যমে অতিক্রম করা যাবে।“
এ পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) মতো সব বিতরণ কোম্পানিকে কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং হতে পারে, ওয়েবসাইটে তার তথ্য পরিবেশন করতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আগামী সেপ্টেম্বরের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “সেপ্টেম্বরে অনেক গুলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে। রামপালের ইউনিট চালু হবে, আদানি গ্রুপের একটি, এস আলম গ্রুপের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে।
“বড় পুকুরিয়া কয়লাখনিকে কেন্দ্র করে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, সেখানে উৎপাদন বাড়বে। ফলে সেপ্টেম্বরের পর দেশে হয়তো বিদ্যুতের সঙ্কটটা থাকবে না “
পুরনো খবর