দিনে বিদ্যুৎ যাচ্ছে কয়েকবার

জ্বালানি স্বল্পতায় উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় দেশজুড়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছেই; যদিও ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতির আশা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2022, 04:32 PM
Updated : 4 July 2022, 06:39 PM

রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে।

সে কারণে উৎপাদনে কমে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় রোববার দুঃখ প্রকাশ করে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় পোস্ট দিয়েছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

শতভাগ বিদ্যুতায়নের পথে এগিয়ে চলা বাংলাদেশে লোডশেডিং হারিয়ে গেছে বলেই সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল, এর মধ্যেই গত কয়েকদিন ধরে রাজধানী থেকে গ্রামাঞ্চলে প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার খবর মিলছে।

সোমবারও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার খবর আসছিল। এদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত তিনবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সরকারের ন্যাশনাল লোড ডেসপাচ সেন্টারের হিসাবে, সোমবার সারাদেশে ১৪ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮১৮ মেগাওয়াট উপাদনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এদিন চাহিদার তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, যা লোড ব্যবস্থাপনার (লোডশেডিং) মাধ্যমে সমন্বয় করতে হচ্ছে।

পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা মূলত গ্যাসের স্বল্পতার কারণেই হয়েছে। গত দুই দিনে হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ অনেকটা কমে যায়।

“আজকে থেকে উন্নতি হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ আজকে থেকে বাড়বে। তাতে আশা করি, পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকবে।”

পিডিবি চেয়ারম্যান এমন আশা করলেও পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী রোববারের তুলনায় সোমবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ আরও কমতে দেখা যাচ্ছে।

দেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলার দৈনিক গ্যাস প্রতিবেদনে সোমবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ সরবরাহের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এতে সোমবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য চাহিদা ধরা হয়েছে ২২৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের। কিন্তু এর বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ করা যাবে ৯১৩ মিলিয়ন ঘনফুট।

রোববার একই চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ৯৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। সেদিন সর্বোচ্চ চাহিদা ১৪২৫০ মেগাওয়াট ধরা হলেও ন্যাশনাল লোড ডেসপাচ সেন্টারের হিসাবে উৎপাদন হয়েছে ১২২৫২ মেগাওয়াট। বাকি ১৫০০ মেগাওয়াট অর্থাৎ ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে সামাল দেওয়া হয়েছে।

সোমবারের পূর্বাভাসে আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কম ১২৭৩ মেগাওয়াট অর্থাৎ প্রায় ৯ শতাংশ বিদ্যুৎ লোড ব্যবস্থাপনার (লোডশেডিং) মাধ্যমে সমন্বয় করার পূর্বাভাস রয়েছে।

সোমবার রাতে কিছুটা সময় বিদ্যুৎহীন ছিল ঢাকার মিরপুর ১২ নম্বর সেকশন।

এদিন সারাদেশের মধ্যে সব থেকে বেশি লোডশেডিং ধরা হয়েছে রংপুর অঞ্চলে। ওই অঞ্চলে চাহিদা ও সরবরাহে ১৯ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। এরপর চট্টগ্রামে ১২ শতাংশ, সিলেট ও ময়মনসিংহে ১১ শতাংশ করে, রাজশাহীতে ১০ শতাংশ, ঢাকা ও কুমিল্লা অঞ্চলে ৮ শতাংশ করে ঘাটতি দেখানো হয়েছে। তবে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে কোনও কমতি দেখানো হয়নি।

পিডিবির হিসাবে, ১৫২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২২ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ রয়েছে ১১৬০ মেগাওয়াট। তবে ক্যাপটিভসহ মোট উৎপাদন ক্ষমতা ধরা হয় সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের মতো।

এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৫১ শতাংশ, তেলভিত্তিক এইচএফও ও এইচডিও কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩৪ শতাংশ। কয়লা থেকে প্রায় ৮ শতাংশ, আমদানি থেকে ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে। বাকিটা পূরণ করে সৌর ও পানিভিত্তিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি।

পেট্রোবাংলার হিসাবে, আমদানি থেকে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ আসার কথা থাকলেও তা আসছে অর্ধেক। সোমবার আমদানি থেকে ৫০৭ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ আসবে বলে ধরা হয়েছে।

ইউক্রেইনে রাশিয়ার অভিযানের পর থেকে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে বেশকিছু দেশ সমস্যা মোকাবেলা করছে।