ইউক্রেইনে হামলার পর পশ্চিমা বিশ্বের আরও কঠোর অবরোধের মুখে পড়তে যাচ্ছে রাশিয়া, দেশটির বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে অচল করতে বিশ্বের প্রধান আর্থিক লেনদেন পরিষেবা সুইফট থেকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ও এর মিত্ররা।
Published : 26 Feb 2022, 12:58 PM
কিন্তু এই সুইফট থেকে রাশিয়াকে বাদ দিলে তার কী হবে, আদৌ রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে কি না বা সুইফটে নিষেধাজ্ঞা দিলে রাশিয়ার বিকল্প কী ব্যবস্থা রয়েছে, তা তুলে ধরেছে যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ান।
সুইফট কী
সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফট হল আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রধান ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজভাবে পরিচালনায় ব্যাংকগুলো দ্রুত এবং নিরাপদে বৈশ্বিক লেনদেন করে থাকে।
সুইফট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ২০২০ সালে প্রতিদিন প্রায় ৩৮ মিলিয়ন লেনদেন হয়েছে, যা ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের লেনদেন সুবিধা দিয়েছে।
সুইফটের মালিকানা
সুইফট ১৯৭০ এর দশকে হাজার হাজার সদস্য প্রতিষ্ঠানের একটি সমবায় পরিষেবা। বেলজিয়াম ভিত্তিক এই পরিষেবা বাণিজ্য বিরোধের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকে। ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায় ন্যাশনাল ব্যাংক অব বেলজিয়াম এই পরিষেবার দেখভাল করে থাকে।
সুইফট নিষেধাজ্ঞা কেন এত গুরুতর হবে
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এমপিদের বলেছেন, সুইফ্ট থেকে বাদ পড়লে রাশিয়ার অর্থনীতির ক্ষতি হবে। সাধারণ লেনদেনগুলো সরাসরি ব্যাংকগুলোর মধ্যে পরিচালনার প্রয়োজন পড়বে অথবা নতুন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যাতে অতিরিক্ত খরচ ও সময় লাগবে।
যুক্তরাষ্ট্র কেন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে নারাজ
একটি কারণ হল, এটি রাশিয়ার ব্যবসার ওপর গুরুতর প্রভাব নাও ফেলতে পারে।
রাশিয়ার একটি বড় ব্যাংক ‘ভিটিবি’র প্রধান সম্প্রতি বলেছেন, তিনি লেনদেনের জন্য অন্যান্য চ্যানেল ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- ফোন, মেসেজিং অ্যাপ বা ইমেল।
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি এমন দেশগুলোর মাধ্যমেও রাশিয়া লেনদেন করতে পারে। যেমন, চীন সুইফটের প্রতিদ্বন্দ্বী নিজস্ব লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করেছে।
উল্টো সুইফটে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে এর প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের চিপস সিস্টেমের ব্যবহার বাড়বে। আরও ভয় হল- এটি বিশ্বব্যাপী রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে মার্কিন ডলারের স্থিতিক ক্ষতিগ্রস্তও করতে পারে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো বিকল্পগুলোর ব্যবহার বাড়াতে পারে।
বাইডেন বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা বাড়ালেও তিনি এখনই সুইফট থেকে রাশিয়াকে বাদ দিতে চাচ্ছেন না, কারণ এতে অন্য আরও দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সুইফট নিষেধাজ্ঞা অন্য দেশকে প্রভাবিত করবে কি না
বাইডেন প্রশাসনও উদ্বিগ্ন যে, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে রুশ ফার্মগুলোর মতো তাদের মিত্রদেরও ক্ষতি করতে পারে। রাশিয়া বিদেশে উৎপাদিত পণ্যের একটি বড় ক্রেতা। বিশেষ করে নেদারল্যান্ডস এবং জার্মানি থেকে কিনে থাকে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে অপরিশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কঠিন জীবাশ্ম জ্বালানির বড় সরবরাহকারী রাশিয়া। ইইউ নিষেধাজ্ঞা দিলে তার জন্য এসবের বিকল্প জোগানদাতা খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে।
সুইফট কি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় আবদ্ধ?
অতীতে সুইফট নিজেকে নিরপেক্ষ দাবি করে নির্দিষ্ট কিছু দেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
কিন্তু ২০১২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ফার্ম ও ব্যক্তিদের পরিষেবা দিতে সুইফটকে বাধা দেয়, যা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পূর্ব দৃষ্টান্তস্বরূপ।
রয়টার্স জানিয়েছে, সংস্থাটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা বলতে নারাজ সুইফটের একজন মুখপাত্র।