স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ: ৫ বছরের প্রস্তুতিকালীন সুবিধা চায় বাংলাদেশ

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রস্ততি পর্বে পাঁচ বছর স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধাগুলো চাইছে বাংলাদেশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2021, 04:49 PM
Updated : 12 Jan 2021, 04:49 PM

সিডিপির আসন্ন ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার এক্সপার্ট গ্রুপ সভার এক বৈঠকে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএন-সিডিপির কাছে এই আহ্বান জানিয়েছে।

ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় দ্বিতীয়বারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ বা গ্রাজুয়েশনের মানদণ্ড পূরণ ও উত্তরণের সুপারিশ লাভ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

সেই সভার প্রস্তুতির অংশ হিসাবেই বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এই বৈঠক করে সিডিপি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সিডিপির কাছে ২০২১ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদী প্রস্তুতিকালীন সময় চাওয়া হয়।

“উত্তরণ পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধাগুলো আরও বেশি সময় অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানায়।”

১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোন দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করে।

সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী, উত্তরণের সুপারিশ লাভের পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতিকালীন সময় ভোগ করতে পারে।

আগামী মাসে ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় উত্তরণের সুপারিশ পেলে পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল শেষে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে।

উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে সস্তা ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। ফলে সেই সুবিধাগুলো উত্তরণের প্রস্তুতি পর্বে চাইছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবারের বৈঠকে একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থান তুলে ধরেন ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।

সভায় আশা প্রকাশ করা হয়, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সব মানদণ্ড পূরণ করবে।

“একইসঙ্গে উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সিডিপির কাছে ২০২১ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদী প্রস্তুতিকালীন সময় চাওয়া হয়,“ বলা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

প্রস্তুতির এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগসুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপনকালে ইআরডি সচিব বলেন, “বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হতে চলেছে, যখন সমগ্র জাতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে।

উপস্থাপনায় উত্তরণ পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখা, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো অর্জনের লক্ষ্যে উন্নয়ন অর্থায়নের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানান ইআরডি সচিব।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের হয়ে অংশ নেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দীন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা, জেনেভায় বাংলাদেশের জাতিসংঘ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান।

সিডিপির সভাপতি হোসে আন্তনিও অকাম্পোসহ সিডিপির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন গতিধারার ভূয়সী প্রশংসা করেন বলে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। (১) মাথাপিছু আয় (২) মানবসম্পদ সূচক (পুষ্টি, স্বাস্থ্য, মৃত্যুহার, স্কুলে ভর্তি ও শিক্ষার হারের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়) এবং (৩) অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক (প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আঘাত, জনসংখ্যার পরিমাণ এবং বিশ্ববাজার থেকে একটি দেশের দূরত্বসহ আটটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়)।

জাতিসংঘ ১৯৭১ সালে কিছু নির্ণায়কের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি হিসেবে পৃথকভাবে শ্রেণিবদ্ধ করে।

১৯৭১ সালে স্বল্পোন্নত দেশের সংখ্যা ছিল ২৫, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪৬-এ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এ নাগাদ বতসোয়ানা, কেপভার্দে, মালদ্বীপ, সামোয়া, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ও ভানুয়াতু উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে।