আলোচকদের পরামর্শ- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থিতিশীলতা আনতে হবে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ বাড়াতে হবে, কর-ঋণ খেলাপি ও ঘুষ বন্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা।
শনিবার বনানীর একটি হোটেলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) মাসিক প্রকাশনা ‘থিঙ্কিং এলাউডের’ প্রকাশনার চার বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে ‘লুকিং বিয়ন্ড এলডিসি গ্রাজুয়েশন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব পরামর্শ উঠে আসে।
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হলে আমরা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ইন্ডিয়া, চায়নাসহ বিভিন্ন দেশে পাওয়া বাণিজ্য সুবিধা হারিয়ে ফেলব, যার ফলে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি ১১ শতাংশ হ্রাস পাবে।
“এছাড়াও ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) বিধান অনুযায়ী মওকুফকৃত শুল্ক ও ভর্তুকি থাকছে না ২০২৭ থেকে।”
২০২৪ সাল নাগাদ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হতে যাওয়া বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি এখনই নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, “এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ‘ওয়ান ওয়ে জার্নি’, গেলে আর ফিরে আসা যাবে না। আমাদের বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে, নয়তো আমরা অন্যান্য দেশের সাথে বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকতে পারব না।
“শ্রমিকদের আবাসন ও কর্মক্ষেত্রে সুপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, মানুষের বৈষম্য কমাতে হবে। উন্নত দেশ নয়, অন্তর্ভুক্তমূলক বাংলাদেশ চাই।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঠিক করার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষিতদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ওপর জোর দেন তিনি।
বৈঠকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, “উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষে আমাদের প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে,
“সে লক্ষে ব্যাংকগুলোর উচিৎ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ বৃদ্ধি করা, নবীন উদ্যোক্তারা ঋণ পেলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, সেই সাথে ঋণখেলাপিও কমে যাবে।”
ঋণ-কর খেলাপি ও ঘুষখোরদের থামানো না গেলে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যহত হবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমেদ।
“বড় বড় হাঙ্গর-কুমিরদের টাকা দেওয়া হচ্ছে যা তারা কখনো ফেরত দিবে না, তাহলে তাদের কেন ঋণ দেওয়া হচ্ছে? সরকারি কর্মকর্তারা কর ফাঁকি দেন, ঘুষ খান সবাই জানে, তাহলে কেন থামানো হচ্ছে না?”
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিআইডিএসের মহাব্যবস্থাপক খান আহমেদ সৈয়দ মুর্শিদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সাদিক আহমেদ, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, সানেমের চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও মহাপরিচালক মুনির চৌধুরী, পিআরআইর এম এ রাজ্জাক, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক ও সায়েমা হক বিদিশা, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান এম আবু ইউসুফ ও বিভাগের অধ্যাপক কাজি মারুফ-উল ইসলাম, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মিনহাজ মাহমুদ।