“মানুষ খুব একটা খাচ্ছে না, তাই বেচাকেনা কম। বাজারেও মানুষের আগের মতো ভিড় নাই,” বলেন এক দোকানি।
Published : 26 Apr 2024, 10:36 PM
“শরীল ঘাইমা খালি পানি বাইর অয়। গলা শুকাইয়ে যায়, আর পানি খাইতে মন চায়। তয় পানির লগে লেবু চিপরাইয়া খাইলে শান্তি পাই। মনডা জুড়ায়। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি, তয় লেবুডায় খুব দাম না। তাই রোজ দুপুরে একটা খাই।”
কারওয়ান বাজারে শুক্রবারের তপ্ত দুপুরে বলছিলেন রিকশাচালক আব্দুল আলিম। এ বাজার থেকে তিনি এক হালি কলম্বো জাতের লেবু কিনেছেন।
এ জাতের লেবু ঢাকার ধামরাই থেকে এনে কারওয়ান বাজারে বেচছিলেন সেলিম।
তিনি বললেন, “এই লেবু ৮ থেকে ১০ টাকা দাম ছিল। দুইদিন ধরে দাম কমে ৫ টাকা হইছে। বাজারে কাঁচা আম বাড়লে বা বৃষ্টি হলে লেবুর দাম আরও কমবে। তখন ৫০ পয়সা পিস বিক্রি হবে।”
একই বাজারে বড় আকারের কলম্বো লেবু বিক্রি হচ্ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা হালিতে। এলাচি জাতের ছোট থেকে মাঝারি আকারের লেবু ১৫ টাকা হালিতে এবং বড় আকারের লেবু কিনতে গুনতে হচ্ছিল ২০ টাকা।
বিক্রেতা সবুজ মিয়া বললেন, “এগুলা চট্টগ্রামের মাল। ৮ টাকা হালি দরে আমরা কিনেছি। পাইকারিতে কেউ বেশি নিলে ১০ থেকে ১২ টাকা হালিতে বিক্রি করি। আর খুচরা ১৫ টাকা।”
আরেক লেবু বিক্রেতা কালাম বললেন, “লেবু তো আসলে সাইজে দাম কম বা বেশি হয়। যেটা সাইজে ছোট, সেগুলোর দাম তলানিতে। আর যেগুলোর সাইজ বড়, সেগুলোর দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা হালিতেও বিক্রি হয়। ছোট লেবু বেশি কিনে ফুটপাতের শরবত বিক্রেতারা।”
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গরমে লেবুর চাহিদা বেশি হলেও দাম কম। গত ৩-৪ দিনে ৩০ শতাংশ দাম কমছে।
“কমার কারণ হইলো সরবরাহ বেশি। পর্যাপ্ত লেবু আছে বাজারে।”
কালামের দোকান থেকে দুই টাকা হালি দরে একবস্তা লেবু কিনেছেন নয়ন ইসলাম নামে এক খুদে ব্যবসায়ী। তিনি সেগুলো বেচবেন মগবাজার এলাকায়।
নয়ন ইসলাম বলেন, “মগবাজারে আমি লেবুর ব্যবসা করি অনেক বছর ধরে। আমি কারওয়ান বাজার থেকেই সবসময় পাইকারিতে লেবু কিনে নিয়ে যাই।
“মগবাজারে ৮ থেকে ১০ টাকা হালিতে বিক্রি করব। কারণ আমার পরিবহন খরচ আছে। তাছাড়া আমার লাভও থাকতে হবে।”
আজাদুর রহমান ২ ডজন লেবু কিনলেন ৫০ টাকায়। তিনি বললেন, “বাসায় ফ্রিজে রেখে খাওয়া যাবে, তাই কম দামে পেয়ে একটু বেশিই কিনলাম। এই গরমে লেবুর চাহিদা অনেক বেশি। তবুও কম দামে পাচ্ছি।”
গরমে ক্রেতা কম
দাবদাহের কারণে খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। তার প্রভাব পড়ার কথা জানাচ্ছেন বিক্রেতারা। বলছেন, বিক্রিবাট্টা অনেকখানি কমে গেছে।
ফার্মগেটের তেজকুনিপাড়ায় মুদি দোকানি মোহাম্মদ আলী বলেন, “গরমে বেশি খাওয়া যায় না। তাই মানুষের খাওয়া-দাওয়াও কমে গেছে। ক্রেতার সংখ্যা কম।”
কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রেতা মহিউদ্দিন বলেন, “মানুষ খুব একটা খাচ্ছে না। তাই বেচাকেনা কম। বাজারেও মানুষের আগের মতো ভিড় নাই।”
দুই হাতে দুই ব্যাগ নিয়ে দোকান ঘুরে ঘুরে বাজার করছিলেন ব্যাংকার আলামিন হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুরো সপ্তাহের বাজার করব। বারবার বাজারে আসা যায় না। যে গরম পড়েছে, পরিবারের অন্য কেউ আসবে না।”
মিলছে কাঁচা আম
আমের মৌসুমের আগে বাজারে কাঁচা আম পাওয়া যাচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের দোকানি নাছিম আহমেদ বলেন, “আমার কাছে টেকনাফের বার্মিজ জাতের কাঁচা আম রয়েছে। এগুলো বিক্রি করছি ৬০ টাকা কেজি দরে।
“অনেক ক্রেতা কাঁচা আম খোঁজে। তাই আমি কাঁচা আম বিক্রি করছি। আমের সিজন না হইলেও গরমে চাহিদা আছে।”
আম কিনতে এসেছেন রাজিব রায়হান নামে এক ক্রেতা। তিনি বলেন, “আমসত্ত্ব বানানোর জন্য আর কাঁচা আম ভর্তা খেতে আম কিনছি। এই গরমে আম ভর্তা খেতে দারুণ তৃপ্তি পাওয়া যায়।”
৫ কেজি আম ১৮০ টাকা দিয়ে কিনলেন আল মামুন। তিনি এ আম দিয়ে আমসত্ত্ব বানাবেন বলে জানান।
দাম বেড়েছে শসার
তিন দিনের ব্যবধানে দেশি শসার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর হাইব্রিড শসার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা।
কারওয়ান বাজারের শসা বিক্রেতা মজিবুর রহমান বললেন, “আমার শসা রংপুর থেকে আইছে। আইজক্যা একটু দাম বেশি। আমার নিজেরই কিনতে অইছে বেশি দামে। আমি দেশি শসা বেচতাছি ৪০ টাকা কেজিতে।”
পাশেই হাইব্রিড শসা বিক্রি করছিলেন আলাউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানালেন, তিন দিন আগেও হাইব্রিড শসা ছিল ১৫ টাকা কেজি। এখন ২০ টাকা কেজি। এই হাইব্রিড শসা ময়মনসিংহ ও রংপুরে চাষ হয়।
কারওয়ান বাজারে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছিল ৪০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ৩০ টাকা পিস, চাল কুমড়া ৪০ টাকা পিস, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা পিস এবং লাউয়ের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছিল।
ঢেঁড়স ৪০ টাকা কেজি, মরিচ ৫০ টাকা কেজি, টমেটো মানভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছিল ক্রেতাকে।
সবজি বিক্রেতা মহিউদ্দিন বলেন, “এখন সবজির দাম কমও না, বেশিও না। মাঝারি অবস্থায় আছে।”
একই বাজারে টমেটোর পাইকারি দর ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি। পাইকারি বিক্রেতা সাইদুল ইসলাম বলেন, “আমরা পাইকারিতে বেচি, তাই দাম কম। গরমে সব দ্রুত পেকে যায় ও নষ্ট হয়ে যায়। তাই কম দামেই বিক্রি করে দিচ্ছে চাষিরা। আমরাও অধিক লাভের আশায় রেখে দেই না।”
দাম বেশি মহাখালী কাঁচাবাজার ও ফকিন্নি বাজারে
কারওয়ান বাজার থেকে অল্প দূরত্বের তেজগাঁওয়ের ফকিন্নি বাজার এবং মহাখালী কাঁচা বাজারের দামের পার্থক্য চোখে পড়ার মতো।
এ দুই বাজারে টমেটো বেচতে দেখা গেছে ৫০ টাকা কেজিতে, ছোট আকারের লাউ ও ফুলকপি ৫০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ৪০ টাকা পিস, করলা ও লতি ৮০ টাকা কেজি, বেগুন মানভেদে ৭০ থেকে ৯০ টাকা ও হাইব্রিড শসা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল।
মহাখালী কাঁচা বাজারের দোকানি আব্দুল মালেকের ভাষ্য, “এখন গরমের কারণে সরবরাহ কম। সবজি নষ্ট হচ্ছে, তাই দাম বেশি।”
ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ৪ টাকা। ফার্মগেটের তেজকুনিপাড়ায় মুদি দোকানি মোহাম্মদ আলী বলেন, “আমার কাছে শুধু তীর সয়াবিন তেল আছে। এটার এক লিটার বোতলজাত তেলের দাম ৪ টাকা বাড়িয়ে এখন হয়েছে ১৬৭ টাকা।”
ফকিন্নি বাজারে মুদি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, “খোলা তেল কেজিতে বিক্রি করি ১৭০ টাকা কেজি। আগে ছিল ১৬৫ টাকা। এক সপ্তাহে ৫ টাকা দাম বেড়েছে।”