এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দ্রুত আলোচনা শুরুর তাগিদ

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটার পর স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধাগুলো হারানোর ধাক্কা সামলে নিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে দ্রুত আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা শুরুর তাগিদ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2019, 12:57 PM
Updated : 20 Nov 2019, 12:57 PM

বুধবার রাজধানীতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে (এলডিসি) নিয়ে জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ সুপারিশ করেন।

দেবপ্রিয় বলেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল হয়ে গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় অর্থায়নে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে।

“কারণ বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে জলবায়ুর জন্য ঋণ ও অনুদান পায়। এডিপিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তাতে উল্লখযোগ্য অংশ থাকে কম সুদের বৈদেশিক ঋণ।

তিনি বলেন, বাজার সুবিধা ও প্রযুক্তির লভ্যতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে কীভাবে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণকে টেকসই করা যায় তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা চলছে।

“এই আলোচনাকে কার্যকর করতে জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে একটি সিদ্ধান্ত লাগবে। ওই সিদ্ধান্ত পেলেই বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা নিরাপত্তা পাওয়া যাবে।তাই বাংলাদেশের মসৃণ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে সমর্থন আদায়ের কাজ এখনই শুরু করতে হবে।”

পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে প্রতিবেদন নিয়ে সিপিডির মূল্যায়ন তুলে ধরেন জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে গেলে থেকে বাংলাদেশ বিদেশ থেকে অনুদান ও সবচেয়ে কম সুদের ঋণ আর পাবে না। অথচ গত এক দশকের ব্যাপক উন্নয়নে বৈদেশিক ঋণের উল্লেখযোগ অবদান আছে।

এই গবেষক বলেন, বাংলাদেশ কখনো বৈদেশিক দায়-দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। কিন্তু বৈদেশিক ঋণ ব্যবহারে যতটা দ্রুততা ও দক্ষতা দরকার সেটা হচ্ছে না।

বাংলাদেশে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রায় ৩৭ শতাংশ প্রধানত ঋণসহ বৈদেশিক সহায়তানির্ভর, যার প্রায় ৪৭ শতাংশ সামাজিক উন্নয়ন খাতে ও ৪৪ শতাংশ আর্থিক অবকাঠামোতে ব্যবহার হয় বলে তিনি জানান।

“অর্থাৎ আমাদের সামাজিক উন্নয়ন ও আর্থিক অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন বৈদেশিক ঋণের ওপর ভালভাবে নির্ভরশীল।এক্ষেত্রে সাশ্রয়ীভাবে বৈদেশিক অর্থায়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সময়ে এসেছে।”

অনেক দেশ সতর্ক হয়ে বিদেশি ঋণ না নেওয়ায় পরিমাণ বাড়তে বাড়তে একসময় দেনা পরিশোধ তাদের বাইরে চলে গেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বৈদেশিক সহায়তা নিরাপদ। 

তৌফিক বলেন, বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব আহরণ বাড়ানো। যে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণব্যবস্থা যতটা শক্তিশালী দাতারা তাদের দিকে ততটাই এগিয়ে আসে। কারণ তারা দেনা পরিশোধের নিশ্চয়তা খুঁজে পায়।

২০১৫ সালে বাংলাদেশে যে পরিমাণ কর আহরণ হয়েছিল তার ৩৬ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট কর রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ধরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৬১ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা।

সিপিডি গবেষক তৌফিক বলেন, “পাচার রোধ করার দক্ষতা অর্জন করে কর আদায় বাড়ানোর ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে। একইসঙ্গে আমাদের অর্থনীতির যেসমস্ত খাত বৈদেশিক সহায়তানির্ভর ছিল, সেগুলো যেন বিপদগ্রস্ত না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।”

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদ খাতুন ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসময় উপস্থিত ছিলেন।