বিজেএমসি বিলুপ্ত করে পাটকল চালুর প্রস্তাব

বিজেএমসি বিলুপ্ত করে বন্ধ পাটকলগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনায়ই প্রতিটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে চালু করার ‍প্রস্তাব এসেছে শ্রমিকদের এক আলোচনা সভায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2020, 12:40 PM
Updated : 3 Sept 2020, 12:45 PM

পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের এই আলোচনায় এই সুপারিশ করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোট শরিক দল জাসদের সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

গত জুন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিককে অবসরে পাঠিয়ে এগুলো বন্ধ করে দেয় সরকার।

এক্ষেত্রে পাটকলগুলোর ক্রমাগত লোকসানকেই কারণ দেখানো হয়েছে। লোকসানের জন্য পাটকলগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিজেএমসিকেই দায়ী করেন পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর।

সেই কথার সূত্র ধরে সাবেক মন্ত্রী ইনু সরকারের উদ্দেশে বলেন, “প্রত্যেকটা পাটকলকে একটা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করেন। সেগুলোর ব্যবস্থাপনার একটা আধুনিক পদ্ধতিতে আসুন। এ ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য যত টাকা লাগে দিন, উৎপাদন এমনিতেই বাড়বে।”

পাটকলগুলো পুনরায় চালুর কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তবে আগের মতো নয়, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে তা চালু করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

তবে শ্রমিক সংগঠনগুলোসহ বাম দলগুলো এর বিরোধিতা করে বলছে, এর মধ্য দিয়ে পাটকলগুলো ব্যক্তি মালিকানায় ছাড়ার পথ তৈরি করা হচ্ছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের এই আলোচনায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “পাটকলগুলো বন্ধ করলে আমরা একদিকে যেমন দক্ষ শ্রমিক হারিয়ে ফেলব, তেমনি শ্রমিকদের পক্ষেও মধ্যবয়সে এসে পেশা পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। আমাদের যে আন্তর্জাতিক বাজার, সেটিও আমরা আর ফিরে পাব না। তাই পাটখাতের ব্যাপারটাকে এখন এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।”

মেননের মতোই ভার্চুয়ালি সভায় যুক্ত ছিলেন ইনু। শ্রমিকদের অবসরে পাঠানোর জন্য যে ৫ হাজার টাকা সরকার বরাদ্দ করেছে, তা সেই টাকা দিয়ে পাটকলগুলো আধুনিকায়নের মাধ্যমে লাভজনক করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও পাট কমিশনের সাবেক সদস্য সহিদুল্লাহ চৌধুরী জানান, বর্তমানে বিজেএমসি পরিচালিত ২২টি কারখানার হেসিয়ান, সেকিং, সিবিসি এই তিন ধরনের মোট ১০ হাজার ৮৩৫টি তাঁত রয়েছে। আধুনিক স্বয়ংক্রিয় তাঁতের তুলনায় এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা অত্যন্ত কম। পুরনো হয়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদন ক্ষমতা আরও কমে গেছে। হেসিয়ান তাঁতের পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ টন, সেকিং তাঁতের ৩৯ টন, সিবিসি তাঁতের ১৮ টন।

তিনি বলেন, “চায়নিজ স্বয়ংক্রিয় তাঁত ব্যবহার করলে বছরে ৩৬ টন উৎপাদন করা সম্ভব। আর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সরবরাহ চুক্তি করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই পাটশিল্প নতুনভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।”

নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করলে বিজেএমসি আত্মনির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলেও মনে করেন এই কমিউনিস্ট নেতা।

“আমাদের হিসাব মতে, নতুন টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে গড় উৎপাদন ৬০ ভাগ বেড়ে যাবে। উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়মূল্য হেসিয়ান তাঁত থেকেই আসবে ১৩০০ কোটি টাকা। এছাড়া সেকিং ও সিবিসি থেকে আসবে প্রায় আরও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। ফলে বিজেএমসি তখন আত্মনির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। কোনো ধরনের সরকারের আনুকূল্য ছাড়াই সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক নিয়মে পরিচালিত হবে।”

আলোচনায় যুক্ত হয়ে বিজেএমসির আমলতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমলাতান্ত্রিক ও ভর্তুকি নির্ভর যে মডেলে আমরা যে রাষ্ট্রীয় খাত চালাচ্ছি, সে মডেল কার্যকর করে কিন্তু আমরা পাট শিল্পের স্বার্থ রাখতে পারব না।’

পাটকলগুলোতে উৎপাদন বাড়াতে চীনের সঙ্গে জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্রপাতি এনে মিলগুলো আধুনিকায়নের পরামর্শ দেন তিনি।

পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের জমিতে নতুন করে শিল্প এলাকা তৈরি করে সেখানে পাট ব্যবসার নতুন ক্ষেত্র বিস্তৃত করার প্রস্তাবও দেন তিনি।

এ আলোচনায় আরও যুক্ত হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশসহ পাটকল আন্দোলনের নেতারা।