ভোটের আমেজ আয়কর মেলায়ও ছড়ানোর আশা

আগামী ১৩ নভেম্বর মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে আয়কর মেলা। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের মেলা।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2018, 01:00 PM
Updated : 10 Nov 2018, 01:00 PM

করমেলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা আয়কর রিটার্ন জমা দিতে আসবেন; তাদের কর্মী-সমর্থকদের পদচারণায় মুখরিত হবে মেলা প্রাঙ্গণ, এমনটিই প্রত্যাশা করছেন কর কর্মকর্তারা।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। বিভিন্ন দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত।

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আয়কর মেলাও চলবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত।

যারা প্রার্থী হবেন তারা কর মেলায় আয়কর বিবরণী জমা দিতে পারবেন; কর অফিসে যেতে হবে না।

মেলার সমন্বয়কারী এবং এনবিআর সদস্য (আয়কর প্রশাসন) জিয়া উদ্দিন মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত কয়েক বছরই ধরে নভেম্বর মাসে মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। এবার জাতীয় নির্বাচনের আগে মেলা হচ্ছে।

“মেলায় সবাই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। নির্বাচনের প্রার্থীরা জমা দিতে আসলে তাদের রিটার্নও সাদরে গ্রহণ করা হবে। এবার নির্বাচনের উৎসবের আমেজ আয়কর মেলাতে পড়বে।”

এবারের মেলার স্লোগান হচ্ছে- ‘উন্নয়ন ও উত্তরণ : আয়করের অর্জন’।

মেলা উপলক্ষে রোববার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। বিকেল ৩টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআর সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আয়কর মেলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরবেন রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

১৩ নভেম্বর সকাল ৯টায় রাজধানীর বেইলী রোডের অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গণে মেলা উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

গত দুই বছর কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনে মেলা অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা আবারও ফিরে আসছে বেইলী রোডের প্রাঙ্গণে।

মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় যানজট এড়াতেই এবার অফিসার্স ক্লাবে মেলা আয়োজন করা হচ্ছে জানন জিয়া উদ্দিন মাহমুদ।

“নির্বিঘ্নে বিপুল সংখ্যক করদাতা যাতে মেলায় আসতে পারেন সেজন্য এই সিদ্ধান্ত।”

এছাড়া আগারগাঁওয়ের নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনের কাজ চলায় এবার সেখানেও মেলা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

মেলার নতুনত্ব জানতে চাইলে জিয়া উদ্দিন বলেন, “এবারের মেলায় নতুন করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে অডিও ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে ওয়ার্কশপ হবে। নতুন করদাতা তৈরি ও রিটার্ন দাখিলে সাহায্য করতেই এই কর্মশালা।

“এতে সাধারণত কারদাতাদের মনে যে প্রশ্নগুলো আসে, তা সেট করা থাকবে। নতুন কোনো প্রশ্ন জাগলে সেই প্রশ্নের উত্তরও অন্তর্ভুক্ত হবে। এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলতে থাকবে, যা  হেল্প ডেস্কের মতো কাজ করবে। এটিই এবারের মেলার একমাত্র ব্যতিক্রম।”

তিনি জানান, রাজধানী ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে সাত দিন আয়কর মেলা হবে। এছাড়া সব জেলা শহরে চার দিন এবং ৩২টি উপজেলায় দুই দিন মেলা হবে। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে ৭২টি ‘গ্রোথ সেন্টারে’ এক দিন ভ্রাম্যমাণ মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিবছরের মত করদাতারা এবারের মেলায়ও আয়কর বিবরণীর ফরম থেকে শুরু করে কর পরিশোধের জন্য ব্যাংক বুথও পাবেন। তাদের জন্য মেলায় সহায়তা কেন্দ্রে অপেক্ষা করবেন কর কর্মকর্তারা। একই ছাদের নিচে সব সেবা মিলবে। করদাতা শুধু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে আনলেই হবে।

২০১০ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রামে আয়কর মেলার আয়োজন করা হয়। এরপর প্রতিবছরই মেলার পরিধি বেড়েছে।

জিয়া উদ্দিন মাহমুদ বলেন, করমেলার মাধ্যমে তরুণ ও দেশপ্রেমিক করদাতারা উদ্ধুদ্ধ হচ্ছে। করমেলার সুনাম দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। করসচেতনতা তৈরি এবং মানুষকে কর প্রদানে উদ্ধুদ্ধ করার ক্ষেত্রে করমেলা আন্তর্জাতিকভাবে রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

মেলায় নতুন করদাতারা ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নিতে পারবেন। আবার পুনর্নিবন্ধন করে ই-টিআইএন নিতে পারবেন পুরনো করদাতারা।

এছাড়া ই-পেমেন্টের জন্য পৃথক বুথ থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা, নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদের জন্য আলাদা বুথ থাকবে।

আগামী ১২ নভেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেরা করদাতাদের পুরস্কার দেয়া হবে। সেখানেও প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।