চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১ হাজার ৭৫২ ডলার হবে বলে প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। সেই সঙ্গে এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাজেটের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে রেকর্ড ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ হবে বলে সরকার আশা করছে।
Published : 03 Apr 2018, 01:42 PM
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধির এই হিসাব করেছে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই হিসাব তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৬১০ ডলার।
প্রায় এক দশক ৬ শতাংশের বৃত্তে ‘আটকে’ থাকার পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে। এরপর গত দুই অর্থবছর ধরেই প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। নয় মাসের প্রাক্কলন সেই প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন অনুযায়ী চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার দাঁড়াবে প্রায় ২৭৫ বিলিয়ন ডলারে। গত অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ২৪৮ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।
“মূলত রপ্তানি বাণিজ্য, রেমিট্যান্স আর রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি বাড়িয়েছে। সহায়ক সকল খাতের অবস্থা ভালো হওয়ায় প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন খাতের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের অর্থনীতির অবস্থা দিন দিন ভালো হচ্ছে।”
পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রাক্কলিত যে হিসাব দিয়েছে, তাতে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে। গত অর্থবছরের এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১১ শতাংশ।
এছাড়া শিল্প খাতে ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা গত অর্থবছরে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ ছিল।
কৃষিতে ৩ দশমিক ০৬ শতাংশ, মৎস্য খাতে ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ, নির্মাণ খাতে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ, হোটেল রেস্তোরাঁ খাতে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে এবার।
তবে সেবা খাতসহ বেশ কয়েকটি খাতের প্রবৃদ্ধি এবার কমবে বলে মনে করছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।
সেবা খাতে গত অর্থবছরের ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে এবার প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ খাতে গত অর্থবছরের ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশের জায়গায় এবার ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ; শিক্ষা খাতে ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশের জায়গায় ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ; স্বাস্থ্য ও সামাজিক কার্য়ক্রম খাতে ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশের জায়গায় ৭ দশমিক ০২ শতাংশ; আর্থিক খাতে ৯ দশমিক ১২ শতাংশের জায়গায় ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে এবার।
ব্যাংকিং খাতের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ, ইন্স্যুরেন্স খাতে ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং অন্যান্য আর্থিক খাতে ৯ দশমিক ০৫ শতাংশ। এর সবগুলোই আগের অর্থবছরের তুলনায় কম।
চলতি অর্থবছরে শুরুতে বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে ফসলহানির পরও কীভাবে কৃষি উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হল জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “ওটা গত অর্থবছরের হিসাবে এসেছে। চলতি অর্থবছরে নয়।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এদেশে কেউ বেকার নয়। যারা দিনে এক ঘণ্টাও কাজ করেন, তারা বেকার নন।