বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণের পরিবেশ তৈরির পরিকল্পনায় অর্থবছরের প্রথম ভাগের মতই একইরকম ‘সতর্ক’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে জানুয়ারি-জুন মেয়াদের জন্য।
Published : 29 Jan 2017, 01:12 PM
গভর্নর ফজলে কবির রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, “আমরা অর্থবর্ষের প্রথমার্ধের উৎপাদন সহায়ক, সতর্ক নীতির ভঙ্গিটি অপরিবর্তিত রেখেছি।”
গত বছরের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। সেই সঙ্গে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে আটকে রাখার আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মুদ্রানীতির ঘোষণায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দেখে তাদের মনে হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পথেই রয়েছে।
জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের মুদ্রানীতিতে অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ। যার মধ্যে বেসরকারি ঋণে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সরকারি ঋণে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করেছিল।
জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতিতেও ঋণ প্রবৃদ্ধির একই প্রত্যাশা বজায় রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গভর্নর জানান, গত মুদ্রানীতিতে একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এর বিপরীতে অভ্যন্তরীণ ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ; যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৪ দশমিক ১ শতাংশ পয়েন্ট কম।
আর বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে এক দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট কম।
গভর্নর বলেন, “সাম্প্রতিককালে সরকারের ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ কমায় ব্যক্তিখাতে ঋণ যোগানোর পথ সুগম করেছে। তবে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ বাড়ায় দেশে বন্ড বাজারের বিকাশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হলেও রেমিটেন্স প্রবাহ ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।
পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক উল্লম্ফন নিয়ে সতর্কবাণী এসেছে নতুন মুদ্রানীতিতে।
গভর্নর বলেন, “মূলধন বাজারে ২০১০ সাল থেকে বিদ্যমান মন্দা প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াটি যাতে কর্তৃপক্ষের সুদৃঢ় নিয়ন্ত্রণে, সুস্থ ধারায় থাকে, সে বিষয়ে কার্যকর নজরদারি জরুরি। তা না হলে অতীতের মতো এবারও বিনিয়োগকারীদের গুরুতর ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে।”
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসে অনেকে সর্বস্ব হারিয়েছিলেন। এরপর গত ছয় বছর ধরে বাজার পড়তির দিকে হলেও গতবছরের শেষ দিক থেকে তেজিভাব দেখা যায়।
দীর্ঘদিন পর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ডিএসই সূচক সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়। পরিস্থিতি দেখে বাজার বিশ্লেষকদের অনেকেই অতীতের অভিজ্ঞতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হুজুগে না মেতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার কথা বলেন।
এবারের মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরে পুঁজিবাজারের আকার বাড়ছে। প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে লেনদেন বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। বর্তমানে দেশের জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান ১৫ শতাংশ। এটা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
গভর্নর বলেন, “পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ইতোমধ্যে সতর্কতামূলক উপদেশ জারি এবং বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বাড়াতে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। স্পন্সরদের শেয়ার ও অস্বাভাবিক উচ্চ প্রাইস আর্নিং রেশিওধারী শেয়ারগুলোর বিপরীতে মার্জিন ঋণ যোগানের ওপর বিধিনিষেধ আরোপও এক্ষেত্রে বাঞ্ছনীয় হতে পারে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাংকগুলোর ওপর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে, যাতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে তারা আইন নির্দেশিত মাত্রা মেনে চলে।
এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিক থেকেও তাদের গ্রাহকদের নেওয়া বিভিন্ন ঋণ সঠিক খাতে যথাযথ ব্যবহার হয় কি না- সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হবে বলে আভাস দেন তিনি।
“অস্বাভাবিক লাভের আশায় বিনিয়োগের যাতে অপব্যবহার না হয়- সে বিষয়ে নজরদারি জোরদার করতে হবে।”
বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ঘোষিত আর্থিক নীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে প্রতি অর্থবছরে দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল গত বছরের ২৬ জুলাই।
বরাবরের মতো এবারও নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।