অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, সরকারের বড় বড় প্রকল্প নিয়ে একটি আলাদা বাজেট করা হবে। আর তা হবে আগামী বাজেটের ‘নতুন’ ও ‘বিশেষ’ দিক।
Published : 03 Mar 2016, 09:24 PM
বৃহস্পতিবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রথম প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি বলেন, “আগামী বাজেটে নতুন যেটা করব, সেটা হল মেগা প্রজেক্টগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে।
“পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য মেগা প্রজেক্ট নিয়ে একটি আলাদা ক্যাপিটাল বাজেট করা হবে।”
কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আরও বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। আর এ কারণে আলাদা ক্যাপিটাল প্রোগ্রাম রাখা হবে। যেটাকে ক্যাপিটাল বাজেট বলা হবে।”
এজন্য ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে বলে জানান তিনি।
অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের সঙ্গে এই আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “এবার বড় আকারের বাজেটের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আকার হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো।”
চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তিন লাখ কোটি টাকার যে বাজেট সেটা কাটছাঁট হয়ে ৮ শতাংশ কমতে পারে বলে জানান তিনি।
“এবার ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে প্রত্যাশা করছি। পৃথিবীর কম দেশই এটা করতে পারবে।”
নতুন বাজেটে ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি), বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এবং সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা অংশ নেন।
ইআরজি চেয়ারম্যান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “এবার বড় বাজেট হওয়া উচিৎ। মেগা প্রজেক্টের জন্য আলাদা বাজেট একটি ভালো উদ্যোগ।
অর্থমন্ত্রীকে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “রিজার্ভ বাড়িয়ে লাভ হবে না, যদি সেটা বিনিয়োগে না আসে। বিনিয়োগ বাড়িয়ে আমদানি বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে রিজার্ভ কমলেও সমস্যা নেই।”
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম কম থাকায় সরকারের ৩ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হচ্ছে’- এমন তথ্য দিয়ে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে ১৫/১৬ হাজার কোটি টাকা বাড়তি খরচ হলেও সরকারের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সাচ্ছন্দেই আছে সরকার। মূল্যস্ফীতি বাড়েনি।”
প্রথম প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিআইডিএস মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ কৃষি খাতেও মেগা প্রজেক্ট নেওয়ার পরামর্শ দেন।
“তথ্য-প্রযুক্তি খাতে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আরও সম্ভবনা আছে। তবে এ খাতকে তৈরি পোশাকের মতো করতে হলে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে।”
মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশে নামিয়ে আনারও পরামর্শ দেন এই গবেষক।
বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কাজী সাহাবুদ্দীন বলেন, “আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশে আটকে আছে। এতেই আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি। কিন্তু এ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে ৭/৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দিকে যেতে হবে।”
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, ইআরজির নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির, বিআইডিএসের গবেষক নাজনীন আহমেদ, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইআরজির গবেষক হেলাল উদ্দিন, অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
প্রতিবারের মতো এবারও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা করবেন অর্থমন্ত্রী।
চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে অর্থবছর শুরু হয় পহেলা জুলাই। সাধারণত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন। এবার জুন মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার ২ জুন এবং পরের বৃহস্পতিবার ৯ জুন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ দুই দিনের যে কোনো দিন অর্থমন্ত্রী সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করবেন। তার ওপর আলোচনার পর ৩০ জুন তা পাস হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি হবে মুহিতের অষ্টম বাজেট। এর আগে এরশাদ সরকারের আমলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৮২-৮৩ এবং ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরের বাজেট দিয়েছিলেন তিনি। এ হিসাবে এবার ১০ম বাজেট দিতে যাচ্ছেন মুহিত।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২ বার বাজেট দিয়েছেন প্রয়াত এম সাইফুর রহমান।