তিনি বলেন, “অর্থনীতিতে পুঞ্জিভূত সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন থেকে আমরা অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা জানতে পারছি, সবমিলিয়ে চাপের মধ্যে আছে অর্থনীতি।”
Published : 20 Feb 2025, 10:13 PM
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার না করলে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেছেন, “এনবিআরের সংস্কার না করে কর-জিডিপি অনুপাত না বাড়িয়ে যাই করা হোক না কেন, সেটি খুব বেশি কাজে আসবে না।”
বৃহস্পতিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) ‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাধান হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “সেজন্য আমাদের প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। আমাদের মোট ট্যাক্সের মাত্র এক তৃতীয়াংশ প্রত্যক্ষ কর। আমাদের এনবিআরএর সংস্কারে জিরো টলারেন্সে গিয়ে লুপ হোলগুলো বন্ধ করতে হবে।”
দেশের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এমন চ্যালেঞ্জ সবসময়ই থাকে। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই ধরনের বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ খুব কম দেখেছি। কোভিডের সময়ও এমন হয়নি।
“মানুষের প্রত্যাশার চাপের নিরিখে এখন মেলাতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমবে, ব্যাংক খাতে সুস্থতা আসবে ইত্যাদি প্রত্যাশা সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছে। মানুষের এ প্রত্যাশাকে অস্বীকার করা যাবে না।”
তিনি বলেন, “অর্থনীতিতে পুঞ্জিভূত সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন থেকে আমরা অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা জানতে পারছি, সবমিলিয়ে চাপের মধ্যে আছে অর্থনীতি।”
এই অর্থনীতিবিদের ভাষ্য, মানুষ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যে খরচ কমাচ্ছে।
“মূল্যস্ফীতি বাড়ার হার আগের তুলনায় কমে এলেও পণ্যের মূল্যস্তর কমছে না। এজন্য আমাদের বিনিয়োগ ও আয় বাড়াতে হবে, এছাড়া সামাল দেওয়া যাবে না। তা না হলে আমাদের ‘লো লেভেল ইকুইলিব্রিয়ামে’ যেতে হবে, যেটা সাধারণ মানুষের জন্য সুখকর নয়।”
এঙ্গোলা, ফিলিপিন্স ও মালয়েশিয়ার মত অনেক দেশ পাচার হওয়া টাকা ফেরত নিয়ে আসতে পেরেছে বলে তথ্য দেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো।
তিনি বলেন, “আমরা এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছি। টাকা যে ফেরত আনা যাবে না, এমন নয়। এর জন্য আমাদের ধাপে ধাপে বেশকিছু কাজ করতে হবে। তবে খুব দ্রুত আমাদের কিছু টাকা ফেরত আনা বা ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে হবে, যাতে পরবর্তীতে বলা যায়, অন্তবর্তীকালীন সরকার ফেরত আনায় কাজ করেছে।
“২০২৬ সালের নভেম্বরে আমরা এলডিসি থেকে উত্তরণ করে যাব। এটাকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ উত্তরণের ক্ষেত্রে যেসব ধাপ আমাদের বাড়ানো প্রয়োজন, সেগুলো আমরা ইতোমধ্যে করে ফেলেছি। ফলে আমাদের এখন ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’, ‘কস্ট অব ক্যাপিটালে’ এখনই নজর না দিলে আমাদের ভবিষ্যতে ভুগতে হবে। এগুলো অনেক বেশি হয়ে আছে, একটা দুষ্টচক্র এটাকে বাড়িয়ে রাখছে।
“আমাদের রপ্তানি হার নিম্নমুখী, দাম না। বিনিয়োগের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমছে, সবমিলিয়ে রপ্তানি খুব বেশি বাড়ছে না।”
সংস্কার কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়ে আগাতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দেশের ইন্সটিটিউশনগুলোতে সুশাসন নিশ্চিতে আমি খুব বেশি অগ্রগতি দেখছি না। এখনই সময় এগুলোকে ভালোর দিকে নিয়ে অর্থনীতিকে স্থিরতার দিকে নিয়ে যাওয়া।”