“আপনাদের প্রস্তাবের সঙ্গে আমরাও যোগ-বিয়োগ করব, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে’’, বাজেট নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের বললেন অর্থমন্ত্রী।
Published : 04 Apr 2024, 10:25 PM
রপ্তানি বাজার বড় করতে সরকারের অগ্রিম আয়কর বাদ দেওয়ার চিন্তার বিষয়টি জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। তিনি রাজস্ব আদায় বাড়াতে কর ন্যায়পাল পুনর্বহালের পক্ষে। জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে জোর পাবে কর্মসংস্থান।
আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের আগে বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিকেলে রাজধানীতে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এই সভার আয়োজক ছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, এফবিসিসিআই।
ফেব্রুয়ারির থেকে মার্চের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত এক মাস ধরে ব্যবসায়ীদের ১৬৫টি সংগঠনের সঙ্গে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছে এনবিআর। প্রতি বছরের মত এবারো শেষ সভাটি করা হল ব্যবসায়ীদের সব সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে।
এই আলোচনায় ব্যবসার খরচ কমানো, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, ‘‘বাজেট একটি চলমান প্রক্রিয়া। ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবনা আমরা বিবেচনা করব। আপনাদের প্রস্তাবের সঙ্গে আমরাও যোগ-বিয়োগ করব, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার ‘ন্যায্য পাওনা’ নিশ্চিত করতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, “উন্নয়নে কেউ বাদ যাবে না এমন নীতি বাস্তবায়ন করছেন শেখ হাসিনা। প্রত্যেকের অধিকার বাস্তবায়ন করার মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে।’’
অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘‘কর্মসংস্থান বান্ধব বাজেট তৈরি হবে।
“রপ্তানি বাজার বড় করতে অগ্রিম আয় কর বাদ দেওয়ার সময় হয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে ন্যায় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কর ন্যায়পাল পুনর্বহাল করার সময় হয়েছে। এক সময়ে দেশে কর ন্যায়পাল ছিল।’’
তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় পণ্যের দাম নিশ্চিতে সুরক্ষা নীতি নিয়ে আমাদের পর্যালোচনা করার সময় হয়েছে। স্থানীয় বাজারে দাম না পেলে রপ্তানি হবে দেশি পণ্য।’’
সভায় লিখিত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘‘করপোরেট কর ১০ থেকে ১২ শতাংশ। কিন্তু অগ্রিম আয়কর (এআইটি) হিসেবে যা কেটে নেওয়া হয় তা আয়কর রিটার্নে সমন্বয় হচ্ছে না।
“আমদানি করা কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ যাবতীয় শিল্প উপকরণের ওপর আরোপিত এইআইটি এবং ভ্যাট আইনের আওতায় আগাম কর (এটি) প্রত্যাহার করতে হবে।’’
নতুন আইনে বিষয়টি রহিত করে দেওয়া হয়েছে। এটি থাকায় করপোরেট করের সঙ্গে অগ্রিম আয়করের হার অনেক বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
মূল্যস্ফীতি এবং নিম্ন আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা লাখ টাকা বাড়িয়ে চার লাখ ৫০ হাজার টাকা করার দাবি করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও নারীদের জন্য এটি পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘‘বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতি একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়ালেও করোনা পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব এবং চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মধ্যেও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের গতিধারাকে এগিয়ে নিতে হচ্ছে।’’
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে আনা এনবিআরের লক্ষ্য বলে মনে করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম।
তিনি বলেন, ‘‘সামনে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন (স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ) আসছে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন মানেই হচ্ছে সবার সক্ষমতা বৃদ্ধি। এজন্য কর ছাড় কমিয়ে আনা হচ্ছে।
“ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে কর দেওয়ার। অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলোর মত আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের কর দেওয়ার মানসিকতা বাড়াতে হবে।’’
দেশে কর-জিডিপি অনুপাত কম জানিয়ে তিনি বলেন, “তাই কর আহরণ বাড়াতে আমরা কাজ করছি। কর দিতে গিয়ে কেউ ব্যক্তি পর্যায়ে সমস্যা দেখলে তা কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করেই সমাধান করতে পারেন। এই সুযোগ রয়েছে।’’
সভায় কৃষিজাত ভোগ্যপণ্য থেকে উৎসে কর না কাটা, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পসহ সব রপ্তানির বিপরীতে উৎসে কর হার এক শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মত শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করাসহ ৩৮১ প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই।
ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিন হেলালী, সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।