“সারা পৃথিবীতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আমরা পৃথিবীর বাইরে না। আমাদের যা সামর্থ্য আছে সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবহার করছি এবং ভালো অবস্থানে আছি।”
Published : 06 Jul 2023, 07:15 PM
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ‘তুলনামূলক ভালোর দিকে’ যাচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কয়েক মাস আগের পরিস্থিতিতে তিনি ‘ভয়’ পেয়ে গিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রীর এ স্বীকারোক্তি আসে। এর আগে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে মুস্তফা কামাল বলেন, “যুদ্ধ কতদিন থাকবে, আমরা তখন বুঝতে পারি নাই তা। যেভাবে আমাদের শর্ট পড়তেছিল, আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
“এখন আমাদের ভয় ভেঙে গেছে। আমাদের ভয় ভেঙে গেছে সেই দিন, যেদিন আমরা যুদ্ধে নেমে গেলাম। এখন সব ঠিকাছে।”
আইএমএফ থেকে নেওয়া ঋণের অঙ্ক খুব বেশি নয় বলেও মনে করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “এটা তেমন বড় কোনো অংক নয়। আইএমএফ নামটা হয়ত অনেক বড়। কিন্তু কী দিয়েছে জানেন? দুই মাসের রেমিটেন্সের সমপরিমাণ টাকা দিয়েছে।”
বৈশ্বিক এই সংস্থাটি বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে। ২০২৬ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে এই ঋণ পাবে বাংলাদেশ। এই ঋণ পাওয়ার শর্ত মেনে ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশে, ব্যাংক ঋণের সুদ হারে ৬-৯ এর শর্ত তুলে দিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক চাপ কতদিন চলতে পারে?- এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, “কোন জায়গায় আপনি খারাপ দেখছেন? আমাদের একটা ব্যাংক যখন ফেইল করল, তখন তারা (আইএমএফ) বলল, এটা তো ফেইল করার কথা না। এখন এই বছর তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) তিনটা ব্যাংক ফেইল করেছে।
“এখন বৈশ্বিক অর্থনীতি বিবেচনা করলে এটা মানতে হবে যে, আমরা যা অর্জন করেছি সেটা অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো।”
‘মানুষ কি না খেয়ে আছে?’
ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, “আমরা যখন শুরু করেছিলাম তখন ইনফ্লেশন ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। শুরু যা করেছি এখন এর থেকে বাড়ে নাই তো।
“মানুষ কি কেউ না খেয়ে আছে? আমরা শুধু টাকার অংকে ইনফ্লেশন কমাচ্ছি না। এক লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ করা আছে। এক কোটি মানুষকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এটা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
“যাদের সামর্থ্য কম, তাদের জন্য ভ্যাট ট্যাক্স কমাতে হবে, যাদের খাবার নেই তাদের খাবার দিতে হবে। যাদের সামর্থ্য কম, তাদের কম দামে খাবার দিতে হবে।”
তাবে কি জিনিসপত্রের দাম সহনীয় আছে?
মুস্তফা কামাল জবাব দেন, “কোনটা অসহনীয়? সারা পৃথিবীতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আমরা পৃথিবীর বাইরে না। আমাদের যা সামর্থ্য আছে সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবহার করছি এবং ভালো অবস্থানে আছি। আরও ভালো অবস্থানে থাকলে আরও খুশি হতাম।”
জাইকার সঙ্গে কী কথা
এই প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, জাইকা তাদের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো দেখতে এসেছিল। তিনি বলেন, বড় বড় উন্নয়ন সহযোগীরা ‘এভাবে এসেই থাকে’।
“তাদের হিসাবে মাতারবাড়ি প্রকল্পের কাজ ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশা করছি অচিরেই বাকি ৫ শতাংশ কাজ হয়ে যাবে। আগে যে সমস্যা ছিল এখন সেগুলো নেই। আমাদের মূল সমস্যা ছিল জায়গা জমি নিয়ে।”
জাইকার সঙ্গে নতুন করে কোনো সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, “বাজেটে কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে জাইকা আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে। কিছু কিছু নতুন প্রকল্পও আসবে। সেখানে অধিকাংশই থাকবে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প। বাজেটে আমরা প্রযুক্তি সংক্রান্ত কিছু নতুন প্রকল্প রেখেছি। এর কিছু কিছু কাজ জাইকাকে দিয়ে করিয়ে নেব।
‘আপনাদের দোয়া দুরুদে সুস্থ হচ্ছি’
অনুষ্ঠানের শুরুতেই একজন সাংবাদিক অর্থমন্ত্রীকে বলে ওঠেন, “আপনার সঙ্গে আমাদের অনেক দিন পর দেখা। গত ঈদেরও অনেক আগে একবার দেখা হয়েছিল।”
উত্তরে মুস্তফা কামাল বলেন, “অনেক দিন পর আপনাদের সঙ্গে দেখা হল। আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আপনারা আমার জন্য অনেক দোয়া দুরুদ পড়েছেন, যাতে সুস্থ হয়ে যাই। এখন সুস্থ হওয়ার পথেই আছি; আলহামদুলিল্লাহ।”
এক সময় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে প্রতি সপ্তাহে সাংবাদিকদের ব্রিফ করতেন অর্থমন্ত্রী। কোভিড মহামারী শুরুর পর সেই ব্রিফিং অনলাইনে শুরু করেন তিনি।
মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর সব মন্ত্রণালয়ে সামনা-সামনি অনুষ্ঠান শুরু হলেও অর্থমন্ত্রী অনলাইনেই ওই ব্রিফিং চালিয়ে আসছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে অনলাইন ব্রিফিংয়ে আসাও বন্ধ করে দেন।
সর্বশেষ চলতি বছরের শুরুতে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঋণ সহায়তা নিয়ে একটি বৈঠক শেষে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রীকে আগের মত সরকারি ক্রয় কমিটির বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে আসার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, “আমি কম কথা বলার মানুষ। বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফিং করার জন্য লোক নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। তারাই ব্রিফ করবেন।”