“সরকারি খাতে অধিক মাত্রায় ঋণ গ্রহণ, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহকে সঙ্কুচিত করবে,’’ বলেন চেম্বারের সভাপতি সামীর সাত্তার।
Published : 18 Jun 2023, 09:42 PM
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে আগামী অর্থবছরের প্রথমার্ধে সরকারের ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমানো প্রয়োজন বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
রোববার আগামী জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের মুদ্রানীতির ওপর এক বিবৃতিতে এমন প্রতিক্রিয়া জানান ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনের সভাপতি সামীর সাত্তার।
এদিন বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন।
বিবৃতিতে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, সরকারি খাতে অধিক মাত্রায় ঋণ গ্রহণ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহকে সংকুচিত করবে।
সরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমানোর জন্য ব্যয়ে কৃচ্ছতাসাধন, সুশাসন, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনয়ন এবং অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।
ঘোষিত মুদ্রানীতি ‘সঙ্কোচনমূলক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মুদ্রানীতিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চাহিদা ও আমদানি কার্যক্রমে নজরদারি অব্যাহত রাখা এবং স্থিতিশীল বাণিজ্য পরিবেশ নিশ্চিতকরণের মতো বিষয়গুলোর উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘‘রেপো হার সাড়ে ৬ শতাংশ ও রিভার্স রেপো হার সাড়ে ৪ শতাংশ করার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেপো ও রিভার্স রিপো রেট এর কার্যকারিতা নিয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত নই। কারণ ইতোপূর্বেও এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, যা থেকে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাওয়া যায়নি।’’
ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ঋণের সুদের হারের সীমা ৯ শতাংশ তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যবস্থার ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সুদের হার দুই অঙ্কে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে সামীর সাত্তার বলেন, এতে বর্তমান বৈশ্বিক অস্থির অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনায় বেশ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। পাশাপাশি এ ধরনের উদ্যোগ বিশেষ করে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনের ব্যয় বাড়াবে।
ব্যাংক খাত হতে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমিয়ে আনতে কর আহরণের মাত্রা বাড়ানো উপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এতে ব্যাংক খাতের উপর সরকারের নির্ভরতা অনেকাংশে কমবে বলে জানান তিনি।
নতুন মুদ্রানীতিতে জুলাই – ডিসেম্বর সময়ের জন্য সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৪৩ শতাংশ ও বেসরকারি খাতে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এতে সরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়িয়ে বেসরকারি খাতে কমানো হয়।
বর্তমান মুদ্রানীতিতে জুন শেষে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ, যা গত মে মাস শেষে অর্জন হয়েছে ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
অপরদিকে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। এর বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ১১ দশমিক ১ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং গত মে পর্যন্ত এ হার ছিল ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
বিদেশি মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে সমন্বিত মুদ্রা বিনিময় হার দেশের মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল করবে বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।
মুদ্রানীতিতে রপ্তানিকারকের রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবের অর্থ নগদায়ন ৫০ শতাংশ কমানো ও ইডিএফ ঋণের সুদহার সাড়ে ৪ শতাংশ করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তিনি।
দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডির মতো অবৈধ চ্যানেল বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।