আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়ল এক মাস

অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন রিটার্ন জমার সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2022, 07:44 AM
Updated : 30 Nov 2022, 07:44 AM

ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বুধবার এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন। 

প্রতিবছরের মত এবারও ১ নভেম্বর থেকে আয়কর সেবা মাস শুরু করেছিল এনবিআর। নিয়ম অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জরিমানা ছাড়াই আয়কর বিবরণী দাখিলের সুযোগ ছিল করদাতাদের।

তবে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন এই সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিল। এফবিসিআইয়ের পক্ষ থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েও এ দাবি জানানো হয়েছিল।

বুধবার আয়কর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে এনবিআর চেয়ারম্যান ‘আয়কর সেবা মাস’ এক মাস বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলেন, এখন ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনা জরিমানায় রিটার্ন দেওয়া যাবে।

“আমরা চাইছি রিটার্ন জমা বাড়াতে। মানুষকে আরও বেশি সুযোগ দেওয়ার উ্দ্দেশ্যে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এনবিআরের সদস্য (আয়কর নীতি) ড. সামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ লাখ করদাতার আয়কর রিটার্ন রাজস্ব বোর্ডে জমা পড়েছে, গতবছর একই সময়ে জমা পড়েছিল ১৫ লাখ ৫০ হাজার রিটার্ন।

“এক মাস সময় বাড়ানোয় রিটার্ন জমার সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।”

দেশে বর্তমানে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারী নাগরিক আছেন ৮২ লাখের বেশি। ছরতি অর্থবছর থেকে ব্যাংক ঋণ নেওয়াসহ ৩৮টি সেবার ক্ষেত্রে আয়কর জমার প্রমাণপত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

২০১৬ সালে আয়কর অধ্যাদেশে পরিবর্তন এনে ৩০ নভেম্বর জাতীয় কর দিবসের পর রিটার্ন জমা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে মহামারীর কারণে গত দুই বছর ওই সময় একমাস বাড়ানো হয়েছিল, এবারও তাই হল।

এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, “করনেটের আওতা বাড়াতে হলে আধুনিকায়ন ও ডিজিটাইজেশন করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।

“সশরীরে উপস্থিত হয়ে কর্মকর্তাদের দিয়ে কর আদায়– এটা অবশ্যই কমাতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে কর দাতাদের আস্থায় আঘাত না দেওয়া। তারা যদি আপনাকে ক্ষতিকর মনে করে, তাহলে তিনি আপনার কাছে আসবেন না।”

মুসলিম চৌধুরী বলেন, “যে ব্যক্তি আপনার কাছে আয়কর দিতে আসবেন, তিনি যত টাকা দেখাতে চান দেখাক। আপনিও যতটুকু পারেন, তাকে সহযোগিতা করেন। তবে তার সবচেয়ে বড় সংকোচ, তার সকল সম্পদ যা তিনি রিটার্নে দেখিয়ে দিচ্ছেন। এই স্বচ্ছতাকে ভয় পাওয়া আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা।

“কারণ অনেক সময় মানুষ তার অপ্রদর্শিত অর্থ দেখানোকে নিরাপদ মনে করে না। তাই তাকে তার মত করে কর দেয়ার সুযোগের ব্যবস্থা করতে হবে।”

এখনই বাংলাদেশে রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা কমপক্ষে ৪০ লাখ হওয়া উচিত বলে মনে করেন মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক।

তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ডিজিটাইজেশন। আপনি তাকে ডিজিটাইজেশনের মধ্যে আনতে পারলে তার মত তিনি কর দিক।”

সাধারণ মানুষকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে উদ্বুদ্ধ করতে ফরমে প্রশ্ন কমিয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়ে মুসলিম চৌধুরী বলেন, “আপনি যত বেশি প্রশ্ন করবেন, সে তত বেশি অনাগ্রহী হয়ে যাবে।”

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ড. সামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বৈষম্য কমানোর অংশ হিসেবে’ উন্নত বিশ্বের মত বাংলাদেশেও রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে গত এক দশক ধরে নানা রকম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন ই ট্যাক্স সার্ভিস সেন্টার ও কর তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু, প্রান্তিক কর দাতাদের জন্য সহজ ও সংক্ষিপ্ত রিটার্ন ফরম প্রবর্তন এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি।

এছাড়া ২০১৩ সালে অনলাইন টিআইএন চালু করার পাশাপাশি বিশেষ টাস্কফোর্সের মাধ্যমে করজালের বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোকে করের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

এসব কারণে ২০১৫ সালের মাত্র ১৬ লাখ ৫০ হাজারের টিআইএন এখন ৮০ লাখ অতিক্রম করেছে।

একইভাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মাত্র ১০ লাখ ৯২ হাজারের রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ২৫ লাখ ৯০ হাজারে উন্নীত হয়েছে।

সরকারি-বেসিরকারি বেশ কিছু পরিষেবায় রিটার্ন দাখিলপত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করায় এবার সেই সংখ্যাও বেড়ে গেছে।

গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত নতুন রিটার্ন দাখিল থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ২ হাজার কোটি টাকা। সেখানে এ বছরের একই সময়ে আদায় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৪২ কোটি টাকা।

সামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রত্যেক দেশেই নন ফর্মাল ইকোনমি থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে বেশি। তাই প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিয়ে আমরা ফর্মালে নিয়ে আসতে কাজ করছি।”