“ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংকিং খাতে এক রকম পরিবর্তন দেখা যাবে”, বলেন ব্যাংক মালিকদের সংগঠনের সভাপতি।
Published : 18 Sep 2024, 09:50 PM
ব্যাংকিংখাতের আইন শক্তিশালী করতে পারলে খেলাপি ঋণের ৬০ শতাংশ আদায় করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার। তিনি মনে করেন এসব ঋণের বেশিরভাগই ইচ্ছাকৃত খেলাপি।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন-বিএবির প্রধান।
গণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নতুন গভর্নর এবং বিএবির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসার পর এটাই দুই পক্ষে প্রথম বৈঠক।
বিএবি চেয়ারম্যান বলেন, “আইনের নানা রকমের ফাঁকফোকর রয়েছে। সে কারণে কারণে খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। আইনকে শক্তিশালী করতে পারলে ব্যাংকিং খাতের যে খেলাপি ঋণ রয়েছে, সেটার ৬০ শতাংশ আদায় করতে সক্ষম হব বলে আমি মনে করি।”
১৭ বছর পর গত বছর ৯ সেপ্টেম্বরে বিএবি নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে, সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকারকে।
২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে একটানা ১৭ বছর সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন এক্সিম ব্যাংকের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের উদ্যোক্তা নজরুল ইসলাম মজুমদার, যিনি সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন।
বিএবির নতুন চেয়ারম্যান বলেন, তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে নীতি প্রণয়ন করতে অনুরোধ করেছেন তারা।
“খেলাপি ঋণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনের দুর্বলতার কারণে এগুলো আদায় করা সম্ভব হয়নি। তাই গভর্নরের এসব বিষয়ে অ্যাড্রেস করতে হবে।”
বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট নিয়ে গভর্নর কিছু বলেছেন কিনা- এই প্রশ্নে আব্দুল হাই সরকার বলেন, “এ বিষয়ে গভর্নর ওয়াকিবহাল রয়েছেন।”
সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ‘সঠিক পথে’ আছে দাবি করে তিনি বলেন, “ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংকিং খাতে এক রকম পরিবর্তন দেখা যাবে।”
তারল্য সহায়তার জন্য ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলো প্রচলিত ধারার ব্যাংক থেকে টাকা ধার চাইছে। এতে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক আইনের লঙ্ঘন হয় কি না, এই প্রশ্নে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বিএবির ভাইস চেয়ারম্যানের মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, “বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছি। অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে।
“এটি কোনো একক ব্যাংকের বিষয় নয়। এক তৃতীয়াংশ ব্যাংক ইসলামী পদ্ধতিতে পরিচালনা হচ্ছে। তবে এ ধারার ব্যাংকগুলো কিছুটা সমস্যার মধ্যে পড়েছে। আমি মনে করি এ সমস্যা সাময়িক।”
গভর্নর হওয়ার পর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে আর অবৈধ তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে না। এতে ফার্স্ট ইসলামী সিকিউরিটিসহ বেশ শরিয়াহভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা যায়। এরপর গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্যারান্টি রেখে আন্তঃব্যাংক থেকে টাকা ধার নেওয়ার নির্দেশনা দেন।
এরপর শরিয়াভিত্তিক বেশ কয়েকটি ব্যাংক প্রচলিত ধারার ব্যাংকের কাছে ধার চেয়ে আবেদন করে। সোনালী ব্যাংকের কাছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আবেদন করে ইসলামী ব্যাংক।
মান্নান বলেন, “ভবিষ্যতে আমরা তারল্য সহায়তা নেব না, তারল্য সহায়তা দেব। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ব্যাংকিং সেক্টরের ইতিবাচক অবদান রাখতে সক্ষম হবে, তা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হবে।”
তাৎক্ষণিক সংকট কীভাবে কাটানো হবে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করছি। ব্যাংকটির যে জটিল সমস্যা তৈরি হয়েছে সেগুলো আমরা দুই সপ্তাহের মধ্যে কাটিয়ে উঠব।”
শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো সুদভিত্তিক ব্যাংকের কাছ ধার নেওয়ার আবেদন কোন নীতিতে করা হচ্ছে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে কাজ হচ্ছে। সরাসরি কিছু বলব না।”
শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলো ভেতর থেকে শক্তিশালী বলেও দাবি করেন তিনি।
আরও পড়ুন: