জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের আগে ডিজেল আমদানিতে শুল্ক কমানো এবং সব ধরনের অগ্রিম কর তুলে নেওয়ার প্রভাব কতটা পড়ে তা যাচাই বাছাই করে দেখতে চায় সরকার।
Published : 29 Aug 2022, 06:00 PM
জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের আগে ডিজেল আমদানিতে শুল্ক কমানো এবং সব ধরনের অগ্রিম কর তুলে নেওয়ার প্রভাব কতটা পড়ে তা যাচাই বাছাই করে দেখতে চায় সরকার।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেছেন, শুল্ক ও কর ছাড়ের প্রভাব কতটা পড়ছে, তা দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে তারা জানতে পারবেন।
আর শুল্ক কমানোর পাশাপাশি কর তুলে নেওয়ায় জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ে ‘সুবিধা’ হবে বলে বলে আশা করছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
রোববার ডিজেল আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর পাশাপাশি সব ধরনের অগ্রিম কর তুলে নেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, ডিজেলে সব মিলে প্রায় ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে আমদানি শুল্ক ২২ দশমিক ৭৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
এর আগে ডিজেল আমদানিতে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক, অগ্রিম কর ও অন্যান্য করসহ মোট ৩৪ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হত।
সোমবার বিপিসির ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সংস্থার চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, “গতকালকেই এই সার্কুলারটা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের মূল্যের ওপর কী প্রভাব হবে এটা আলোচনা পর্যালোচনার পর্যায়ে আছে। এই ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
“এর ফলে টোটাল স্ট্রাকচারে কী ইমপ্যাক্ট হবে, এটা পর্যালোচনার না করে কিছু বলা যাচ্ছে না। টোটাল স্ট্রাকচারে ইমপ্যাক্টটা কী সেটা নিয়ে আমাদের এখানে যারা ভ্যাট ট্যাক্স নিয়ে কাজ করেন… সেটা হয়ত আরো দুই তিন লাগবে একটা আইডিয়া নিতে।”
সরকার গত ৫ অগাস্ট থেকে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫% বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করেছে। পেট্রোলের দাম ৫১.১৬% বেড়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেন ৫১.৬৮% বেড়ে ১৩৫ টাকা হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বাজার দর আগে থেকেই চড়ে ছিল, জ্বালালি তেলের দাম বাড়ানোর পর প্রায় সব ধরনের পণ্যমূল্য বেড়ে জীবনযাত্রা আরো কঠিন করে দিয়েছে।
দাম বাড়ানোর পর থেকেই সরকারের নীতি নির্ধারকরা বলে আসছেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে বাংলাদেশেও কমানো হবে। সোমবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে নসরুল হামিদও সাংবাদিকদের একথা বলেন।
তিনি বলেন, “কালকে কিছুটা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সেই সুবিধার কারণে আমরা হয়ত চিন্তা করছি যে তেলের মূল্য কিছুটা সমন্বয় করতে পারব।
“এখনো হিসাবটা যাচাই-বাছাই চলছে। আমরা আশা করছি যে, এখানে একটা পরিবর্তনে হয়তো আশা যাবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বিপিসির চেয়ারম্যান জানান, চলতি মাসের গত ২৮ দিনে প্রতি ব্যারেল পরিশোধিত ডিজেলের গড় দাম ছিল ১৩২ ডলার। এই হিসাবে, দাম বাড়ানোর পরও প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি করে ৯ থেকে ১০ টাকা লোকসান হচ্ছে।
দেশের জ্বালানি তেল আমদানির প্রায় ৭০ শতাংশই ডিজেল। এখনো তেল বিক্রিতে লোকসানের কথা তুলে দরে নসরুল হামিদ বলেন, “তেলের বাজার আবার বেড়ে গেছে। (প্রতি ব্যারেল) ১৫০ ডলারের ঊর্ধ্বে চলে গেছে, যেটা ১৩০ ছিল কিছুদিন আগে। এ অবস্থায় আমরা কতটুকু মূল্য সমন্বয় করতে পারব! কারণ এখানে ভর্তুকির একটা বড় অংশ যোগ হবে আবার।
“যখন ডিজেল ১১৪ ডলার ছিল তখন ৮ টাকার ওপরে লোকসান হয়েছে। এখন হয়ত সেই জায়গাটা আরো বাড়বে। তারপরও এটা রিডিউস (শুল্ক ও কর) করাতে কতটুকু অ্যাডজাস্ট হবে, সেটা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।
তিনি বলেন, “হয়ত আজ-কালকের মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত নেব। আমদানির ক্ষেত্রে যেটা কমানো হয়েছে সেটা খুচরায় গিয়ে কত হবে সেটাতো দেখতে হবে।”
কবে নাগাদ সমন্বয় হবে সেই প্রশ্নে বিপু বলেন, “আমিতো আশা করছি কাল পরশুর মধ্যে কতটুকু যেতে পারি সেটার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারব।”
তাহলে কি ধরা যায় যে তেলে দাম সমন্বয় হচ্ছে? উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আশা করছি।”
তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় নিজের আশঙ্কার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তেলের দাম আবারও বেড়ে গেছে। এটা আমরা আশাই করি নাই। আমরা মনে করেছিলাম, ট্রেন্ডটা নিচের দিকে যাবে।
“এখন এটাও ভয় পাচ্ছি, আরো বেড়ে যায় নাকি।”
রাশিয়া থেকে তেল আমদানির সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি
অপেক্ষাকৃত কম দামে রাশিয়া থেকে পরিশোধিত ডিজেল আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বিপিসির চেয়ারম্যান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা খুবই প্রাথমিক আলোচনার পর্যায়ে আছে। এ বিষয়ে এখনো কোনও মন্তব্য, মতামত দেওয়ার পর্যায়ে পৌঁছেনি।”
মাস তিনেক আগেও এর আগেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিল রাশিয়া, কিন্তু তা কিনতে বাংলাদেশ তখন রাজি হয়নি। এরপর বাংলাদেশের কাছে পরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব পাঠায় রাশিয়ার তেল উৎপাদন ও বিপণন কোম্পানি রোজনেফত। তাদের প্রস্তাব যাচাই করে দেখছে সরকার।
পরীক্ষারে জন্য রাশিয়া থেকে অপরিধোধিত তেলের নমুনাও বাংলাদেশে এসেছে বলে জানান এবিএম আজাদ।
“রাশিয়া থেকে ৫০/৬০ লিটারের মত অপরিশোধিত তেলের স্যাম্পল এসেছে। সেটা পোর্ট থেকে রিলিজ হয়ে ল্যাবে গেছে কিনা জানি না। সেটার সঙ্গে তেল আমদানির কোনো সম্পর্ক নেই।”
গত মে মাসে রাশিয়া অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রির প্রস্তাব দিলে ওই তেল বাংলাদেশের রিফাইনারিতে পরিশোধনযোগ্য নয় বলে জানিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল।
রাশিয়ার তেল বাংলাদেশে পরিশোধনযোগ্য না হলে নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন কেন- এ প্রশ্নের জবাবে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, “সেটা লিখিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে ছিল। এখন তারা বলছে, পরীক্ষা করে দেখা হোক, এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না।”