দক্ষতার অভাবে বিভিন্ন খাতে ‘অপচয় বাড়ছে’ মত দিয়ে তিনি বলেন, “যদি অপচয় কমিয়ে আনা যায়, তাহলে বাজেট থেকে আরও বেশি সুফল পাওয়া যাবে।”
Published : 10 Jun 2024, 11:12 PM
বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা খরচ করার সক্ষমতা সব মন্ত্রণালয়ের আছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি মনে করেন, দক্ষতা নেই বলেই অপচয়ও বাড়ছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনায় সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ আয়োজিত আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৭ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট পেশ করেছেন, তাতে উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
এই উন্নয়ন বরাদ্দ বা এডিপি কখনো শতভাগ বাস্তবায়ন করা যায় না। চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়নের গতি আরও ধীর।
উপাচার্য মাকসুদ বলেন, “বাজেটে বরাদ্দের পুরো টাকা ঠিকভাবে খরচ করার মতো সক্ষমতা আমাদের সবগুলো মন্ত্রণালয়ের আছে কিনা—এটা বড় প্রশ্ন?”
দক্ষতার অভাবে বিভিন্ন খাতে ‘অপচয়ের পরিমাণ বাড়ছে’ মত দিয়ে তিনি বলেন, “যদি এই অপচয় কমিয়ে আনা যায়, তাহলে বাজেট থেকে আরও বেশি সুফল পাওয়া যাবে। সেজন্য দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।”
জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে কৃষি উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদও দিয়েছেন তিনি। বলেন, “তা না হলে ভবিষ্যতে খাদ্যনিরাপত্তা বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা আছে।”
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক মনে করেন স্বাস্থ্যে খরচ বরাবরই কম করে সরকার।
তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ জিডিপির দশমিক ৭ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী জিডিপির ৫ শতাংশ এই খাতে ব্যয় করা উচিত।
“তবে এ বরাদ্দও পুরোপুরি খরচ করতে পারে না। বয়স্ক লোকের সংখ্যা বাড়ছে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স, পরিবেশগত ঝুঁকি, ডায়াবেটিস বাড়ছে। সঠিক সময়ে বরাদ্দ, সেবার মান, মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।”
স্বাস্থ্যের পেছনে জনপ্রতি বছরে ৮৮ ডলার খরচ করা উচিত বলে মত দিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু আমাদের দেশে প্রায় ৪৫ ডলারের মত খরচ করা হয়। এর মধ্যে ১০০ টাকা ব্যয় করলে ৬৯ টাকাই জনগণ নিজের পকেট থেকে খরচ করে। সরকার দেয় মাত্র ২৩ শতাংশ।”
অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী নাহার বলেন, “এটা নয় যে বরাদ্দ অনেক। কিন্তু আমাদের মন্ত্রণালয়গুলোর খরচ করার সক্ষমতা নেই। আরেকটি বিষয় হলো টাকা খরচ করতে প্রস্তুতি লাগে। টাকাটা চলে আসে, কিন্তু সেটা ব্যয় করার প্রস্তুতি নেই।”
অর্থনীতি বিভাগের আরেক অধ্যাপক ও অর্থনীতির গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে, এ চাপ আরও বাড়তে পারে। এ সময় বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আরেকটু বাস্তবমুখী হওয়া দরকার ছিল ।”
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তিনি বলেন, “এ ধরনের লক্ষ্যমাত্রা ইতিবাচক হলেও বাস্তবভিত্তিক নয়। মূল্যস্ফীতি কমাতে গত দুই বছরে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো খুব একটা কাজে দেয়নি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সমন্বয়ের অভাব ছিল। বর্তমান বাস্তবতায় মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্য কতটা অর্জিত হবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।”
১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যারা সৎভাবে আয় করবেন তারা সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ হারে কর দেবেন, অন্যদিকে ১৫ শতাংশ করের বিনিময়ে কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হবে, এটা ন্যায়সংগত নয়।”
বাজেট ঘাটতি ও এডিপির পরিমাণ প্রায় সমান মন্তব্য করে সানেম প্রধান বলেন, “আমাদের উন্নয়ন বাজেট পুরোপুরি ঋণনির্ভর বলা চলে। ঋণ আনছি বিদেশি মুদ্রায়, টোল আদায় করছি টাকায়। ফলে ডলার আয় বাড়াতে হবে। এজন্য রেমিট্যান্স রপ্তানির পরিসর বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে এফডিআই সফলতা দুর্বল।
“স্পেশাল ইকনোমিক জোনের বিনিয়োগের উপর অতিরিক্ত ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে, আশা করব এটা হয়ত থাকবে না।”
বাজেটে শিক্ষা ও জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অর্থনীতি বিভাগের আরেক অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, “শিক্ষার অবকাঠামো বিনিয়োগ হয়। তবে শিক্ষার গুণগত মানে বিনিয়োগ হয় না। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও সার্বিক উন্নয়নে তেমন গুরুত্ব দেখা যায় না। এ পর্যায়ের শিক্ষকদের ভালোভাবে গড়ে তুললে সার্বিকভাবে শ্রম বাজারের জন্য উপযোগী জনশক্তি গড়ে উঠবে।”