আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চলমান ‘টুকটাক, ছোটখাট, পিচমিল রিফর্ম’ দিয়ে দেশের তেমন কাজে আসবে না।
Published : 24 Feb 2025, 05:18 PM
নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করার পর উদার ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত বাণিজ্যে জোর দিবে; সেক্ষেত্রে ‘কঠিন সংস্কারের’ পথে হাঁটবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সোমবার রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টার ইনে এক সেমিনারে বিএনপি সরকারের সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “পারসেনালি আমরা যেটা চিন্তা করছি বিএনপির পক্ষ থেকে, আই ক্যান ক্যাটাগরিক্যালি টেল ইউ, উই আর গোয়িং টু সিরিয়াস ডি-রেগুলেশন; সিরিয়াস ডি-রেগুলেশন। সিরিয়াস লিবারালাইজেশন।
“আমরা গভর্নমেন্টের রোল কমিয়ে আনব। ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে, ইকোনমির ক্ষেত্রে আমরা গভর্নমেন্টের রোল কমিয়ে আনব অ্যাবসলিউটলি।”
‘রিকমেন্ডেশন বাই দ্য টাস্ক ফোর্স অন রি-স্ট্র্যাটেজিসিং দ্য ইকোনমি’ শীর্ষ সেমিনারটির আয়োজক ছিল বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি।
বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চলমান ‘টুকটাক, ছোটখাট, পিচমিল রিফর্ম’ দিয়ে দেশের তেমন কাজে আসবে না।
তিনি বলেন, “বালাদেশের ইকোনমির রিক্যালিব্রেট, রিসেট যদি করতে হয়, প্রথমেই নিয়ন্ত্রণমুক্ত ও উদারীকরণ করতে হবে অর্থনীতির। তখন দেশে কনফিডেন্স বাড়বে, বিদেশিদের কনফিডেন্স বাড়বে এবং এটাই একমাত্র পন্থা সামনে আগানোর।
“টুকটাক, ছোটখাট, এসব পিচমিল রিফর্ম করে কোনো কাজ হবে না। আপনাকে সামষ্টিক অর্থনীতিতে আসতে হবে। প্রথম ডি-রেগুলেশন। তারপর স্টেপ বাই স্টেপ অন্যগুলো।”
তিনি তার সরকারের সংস্কার ভাবনা তুলে ধরে বলেন, “এটা হবে যন্ত্রণাদায়ক সংস্কার। এটা হবে কঠিন সংস্কার। এখানে হয়ত কিছু প্রতিরোধও থাকবে এবং ভালোভাবে জানি, আমি বলতে চাচ্ছি, বাংলাদেশ এটা বাদ দিতে পারবে না।”
এ সময় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন যে, তিনিও (আমীর খসরু) তো ব্যবসায়ী, তার খাতের ব্যাপারেও একই মন্তব্য থাকবে কি না।
জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি মনে করি, আমাদের পার্টিতে একটি গভীর আলোচনা হয়েছে। একটি গম্ভীর বিতর্ক হয়েছে এবং এই বিষয়ে আমরা একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের অর্থনৈতিক নীতি ভবিষ্যতে আশা করি আপনি দেখতে পাবেন, আমাদের সংস্কার কর্মসূচির মধ্যে থাকবে। এ সবই আমাদের অর্থনৈতিক নীতির প্রতিফলন হবে।
“আমি মনে করি, যেকোনো অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার মৌলিক বিষয়, আপনাকে সেই নীতি অনুসরণ করতে হবে। যদি কোনো পণ্য প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পায়, সে তা আমদানি করুক, স্থানীয় সম্পদ দিয়ে হোক বা আঞ্চলিক সম্পদ ব্যবহার করে হোক, সেই শিল্প টিকে থাকতে পারে। সেই শিল্প সত্যিকার অর্থে টেকসই হবে, নইলে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেওয়া যা বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং ভোক্তার ওপর প্রভাব ফেলবে, তা হবে ক্ষতিকর।”
অভ্যন্তরীণ বাজারেও ‘মনোযোগ’ দেওয়ার পরামর্শ
রপ্তানি বহুমুখী করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারকে উপেক্ষা করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
তার ভাষ্য, “আপনি যদি চীনের মতো দেশগুলো দেখেন, চীন মূলত তার শিল্পায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে তাদের বিলিয়ন ডলারের একটি অভ্যন্তরীণ বাজার ছিল। চীনে আসা এফডিআইয়ের প্রধান প্রাথমিক আকর্ষণ ছিল চীনা বাজারে প্রবেশ করা।
“অটোমোবাইল নির্মাতাদের সবাই চীনে এসেছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে চীনকে অটোমোবাইলের বৃহত্তম প্রস্তুতকারক বানিয়েছিল। চীনের অভ্যন্তরীণ বাজার এর প্রধান আকর্ষণ ছিল। ইলেকট্রনিক গাড়ির ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম রপ্তানিকারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।”
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেন, “সর্বোপরি, আপনার যদি ১৭৫ মিলিয়ন মানুষ থাকে এবং এই অভ্যন্তরীণ বাজার প্রতি বছর ৬% হারে বৃদ্ধি পায়, এটি অবশ্যই একটি খুব আকর্ষণীয় বাজার। যারা বাংলাদেশে এফডিআই নিয়ে এসেছে তারাও সেই বাজারকে লক্ষ্য করে এসেছে।
“তাই এই বাজারটি পর্যাপ্তভাবে কাজে লাগানো হয়েছে কি না, এই নির্দিষ্ট বাজারে গুণগত উন্নতি করা যেতে পারে কি না এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে পরিপক্ব হওয়া এবং তারপর রপ্তানিতে পাঠানো যেতে পারে এমন পণ্য যেমন- সাইকেল…ওয়ালটন থেকে আসা দেশীয় ইলেকট্রনিক পণ্য এবং এই ধরনের পণ্য, এমন অনেক শিল্প রয়েছে যা পরিপক্বতা অর্জন করেছে এবং রপ্তানিতে পরিপক্বতা পাচ্ছে।”
তবে গত ৩০ বছর ধরে রপ্তানি বহুমুখীকরণের আলাপ হলেও তা না হওয়ার কারণ এবং নীতির ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায় তা নির্ধারণে সরকার ও একাডেমিক জায়গা থেকেও কাজের পরামর্শ দেন তিনি।
রেহমান সোবহান বলেন, “রপ্তানির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে ফোকাস কারা উচিত। এক সময় আমাদের শুধুমাত্র একটি সরকারি ইস্পাত কারখানা ছিল, চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানা, যা ১ লাখ টন খুব মৌলিক ইস্পাতসামগ্রী উৎপাদন করত। এখন বিএসআরএমের মতো যেকোনো বড় কারখানা ১ মিলিয়ন টন ইস্পাত উৎপাদন করবে এবং তারা আরও বৈচিত্র্যময় এবং অত্যাধুনিক পণ্য উৎপাদন করবে।
“সর্বশেষে, আমি বলব যে, আমরা সবাই দীর্ঘকাল ধরে এফডিআই নিয়ে কথা বলি এবং আমরা সত্যিই এফডিআই আকর্ষণ করতে সক্ষম হইনি। বাংলাদেশে থাকা এফডিআই বিনিয়োগকারীদের সাথে নিবিড় কথোপকথনের মাধ্যমে তাদের সমস্যা শুনে সমাধানে অগ্রসর হওয়া উচিত।”