“আমি বলি না যে ওয়াহিদ (পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ) খুব সিরিয়াস এতে। অন্যথায় তিনি আমাদের সাথে আজ এখানে থাকতেন।”
Published : 26 Feb 2025, 12:52 PM
অর্থনীতির সংস্কারে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বশীলদের এক হাত নিলেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, “আমি তাকে কখনো প্রকাশ্যে বলতে শুনিনি বা এখনও তিনি সাধারণের সামনে কোনো আলোচনা করেননি যে তিনি কী ধরনের সংস্কার চান।”
অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে টাস্কফোর্স এর প্রতিবেদন তৈরি হলেও এর কতটুকু কাজ হবে এবং কীভাবে হবে তা নিয়েও উপদেষ্টাদের ‘সিরিয়াসনেস’ দেখছেন না সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান।
তার ভাষ্য, “আজকাল তারা (উপদেষ্টারা) খুব কাজে ব্যস্ত, এবং আমরা এসব (সংস্কার সুপারিশ) ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের কাছে পাস করতে যাচ্ছিলাম।
“যা হোক, আপনাদের (অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে টাস্কফোর্স) এবং ওয়াহিদের জন্য শুভকামনা।”
সোমবার রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টার ইনে সিপিডির আয়োজনে ‘রেকমেন্ডেশন বাই দ্য টাস্ক ফোর্স অন রি-স্ট্র্যাটেজাইসিং দ্য ইকোনমি’ শীর্ষ সেমিনার বক্তব্য দিচ্ছিলেন এই অর্থনীতিবিদ।
১২ সদস্যের টাস্কফোর্সের সভাপতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ সেখানে বলেন, তাদের প্রস্তাব সব মন্ত্রণালয় ‘সিরিয়াসলি নেয়নি’।
তিনি বলেন, এক উপদেষ্টার কাছে গেলে তাদের বলা হয়, প্রস্তাব পড়ে দেখার সময় তাদের নেই।টাস্কফোর্সকে এসে যেন বুঝিয়ে দিয়ে যায়, কী লেখা হয়েছে সেখানে।
কে এ এস মুর্শিদের ভাষ্য, “প্রধান উপদেষ্টা ইনফ্যাক্ট সকল মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তত একটি হলেও সুপারিশ গ্রহণ করতে। যদিও সকল মন্ত্রণালয় সমানভাবে সিরিয়াসলি নেয়নি।
“এই সরকারে, ইন্টেরিম সরকারের আমলে ওরা কতটুকু কী করতে পারবে, আই থিংক তাদের ব্রেইন স্পেসের এখন প্রচণ্ড অভাব। এতগুলো কমিশন। তারপর আমাদের ফাইভ হান্ড্রেড রেকমেন্ডেশনস। তারা কোথায় যেতে চায়। কীভাবে এসব দেখতে চায় এবং কীইবা সেখানে মেকানিজম। এটা এক্সিস্ট করে না আসলে।”
তখন এক উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “একদিন একজন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে গেলাম। তিনি বললেন, ‘আপনারা এসে আমাদের বুঝিয়ে দেন, আপনারা কী লিখেছেন। আমাদের দু পাতা পড়াও সময় নাই’।
“দ্যাটস দ্য রিয়েলিটি। তো সেখানে আমাদের দিয়ে কাজটা কেনই বা করানো হল। এটা আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি। কারণ আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি, অবশ্যই বলব।”
এর পর এসব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রেহমান সোবহান বলেন, “আমি খুশি (সিপিডি) যে তারা উভয়ের জন্য আলোচনা শুরু করেছে। আমি আশা করি আপনারা এখানে যে আলোচনা তৈরি করেছেন, তার ওপর আমাদের গুরুতর বিতর্ক ছিল যে তারা কী উদ্ভাবন করেছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এর সুযোগ কতটা রয়েছে এবং সেসব কোন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে।”
পরিকল্পনা উপদেষ্টার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, “আমি বলি না যে ওয়াহিদ খুব সিরিয়াস এতে (সংস্কারে)। অন্যথায় তিনি আমাদের সাথে আজ এখানে থাকতেন।”
রেহমান সোবহানের ভাষ্য, “দেখি অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে কেউ সিরিয়াসভাবে সংস্কার প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে কিনা, যা তাদের জন্য টেবিলে উপস্থাপন করা হয়েছে।”
সরকারের ঐকমত্য কমিশনে টাস্কফোর্সের কাউকে না রাখারও সমালোচনা করেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
তিনি বলেন, “আমি জানি আপনি (কে এ এস মুর্শিদ) সমন্বয় কমিশন বা ঐকমত্য কমিশনের কাজে অন্তর্ভুক্ত নন। সুতরাং, আপনি স্পষ্টভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির ক্যাটেগরিতে। প্রথম সংস্কার প্রক্রিয়ায় আসলে এটা আমার উদ্বেগ। এবং আমি এর পর থেকে তা গ্রহণ করব।”
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “আপনি যদি সংস্কারের ব্যাপারে সিরিয়াস হন, অন্তত আপনার গ্রুপের সাথে অ্যাডভোকেসি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করুন এবং দেখুন কতটা সংস্কার আপনি ওয়াহিদের (পরিকল্পনা উপদেষ্টা) কাছে বিপণন করতে পারেন প্রথমে, এবং তারপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রফেসর ইউনুসের (প্রধান উপদেষ্টা) কাছে।”