একনেক সভায় এদিন ৪ হাজার ২৪৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
Published : 08 Jan 2025, 07:37 PM
মোংলা বন্দর ‘ভালো’ রাখতে পশুর চ্যানেল ‘সংরক্ষণে’ দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করবে সরকার।
এক হাজার ৫৩৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পে সরকার জোগান দেবে ১ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। বাকি ১৫৩ কোটি টাকা আসবে সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে।
প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বুধবার অর্থবছরের ষষ্ঠ ও অন্তর্বর্তী সরকারের পঞ্চম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে।
সভার পর এনইসি সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “মোংলা বন্দরে পশুর চ্যানেল সংরক্ষণ ড্রেজিং প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এটা মোংলা বন্দরকে ভালো রাখার জন্য। ড্রেজিং করতেই হয় চ্যানেলটা ঠিক রাখার জন্য। বন্দরটা যদি আরও বড় করতে চাই, এবং সেটার একটা পরিকল্পনা তো অবশ্যই আছে। পরবর্তী একনেক বা তার পরবর্তী একনেকে মোংলা বন্দর আরও বড় করার প্রকল্প, ওটা উত্থাপিত হবে।
“যে চ্যানেলটা আছে সেটা খুব গভীর না। অনেক ভিতরের দিকে এবং এই চ্যানেলটাকে… এটার এখন অনেক বিকল্প আছে, চ্যানেল যদি সংরক্ষণ করতাম, ড্রেজিং, এটা তো একবার করলে হয় না। এটা বছরে, দুই-তিন বছর পরপর করতে হয়। কিন্তু মুশকিল হল, তার পরিবর্তে যদি তীর সংরক্ষণ করেও করা যায় কিন্তু সেটা তো আবার সুন্দরবনের জমি অধিগ্রহণ করে, ক্ষতি হয়।”
এ প্রকল্প বিষয়ে একনেকে আলোচনার বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বলেছিলাম, আমাদের এখন একটা উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ। বাংলাদেশের, পুরো বাংলাদেশের প্রত্যেক অঞ্চলের যে পানি ব্যবস্থাপনা এবং বন্দরগুলো সচল রাখা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, যে লবণাক্ততা সমস্যা, এগুলো সব নিয়ে আবার বিশ্ব ব্যাংক এবং অন্য দাতা সংস্থা চাচ্ছে একটা সার্বিক পরিকল্পনা। এটা একবার করলেই যে হবে তা না।”
প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এদিন ৪ হাজার ২৪৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৬৩২ কোটি ১ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ২০৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪০৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে আরেকটি বড় প্রকল্প চট্টগ্রামের কর ভবণ নির্মাণ।
গত জুলাই থেকে জুন, ২০২৮ পর্যন্ত মেয়াদের এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৭ কোটি টাকা; যার পুরোটাই অর্থায়ন করবে সরকার।
পকল্পটি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “চট্টগ্রামের কর ভবনে আমাদের নৌ পরিবহন উপদেষ্টা গিয়েছিলেন এবং বলেছেন যে গত ১৫-২০ বছরে কেউ ওখানে, মানে কোনো মন্ত্রী ওখানে যায়নি। গিয়ে দেখা গেল, ওটা খুব জরাজীর্ণ অবস্থায়।
“তো চট্টগ্রামে কর ভবন নির্মাণ, এটা আমাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) নতুন প্রকল্প।”
সভায় আরও যেসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে সেগুলো হল-
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প’; ‘স্টাবলিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টেগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম প্রকল্প’।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প’; ‘সিলেট বিভাগে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প’।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রীজ পুনঃনির্মাণ/পুনর্বাসন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯নং কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন প্রকল্প।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘কনস্ট্রাকশন অব বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট মোনাসটারি কমপ্লেক্স অ্যাট লুমবিনি কনজারভেশন এরিয়া নেপাল প্রকল্প’।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ (৪র্থ সংশোধিত) প্রকল্প।
সরকারের আসল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ‘ভিত প্রস্তুত’
ব্রিফিংয়ে সংস্কার প্রস্তুতি বা নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়েও কথা বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, সংস্কার বা নির্বাচন প্রস্তুতি যেটিই হোক তার মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আসল লক্ষ্য হল একটা ‘ভালো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত’ প্রস্তুত করা।
উপদেষ্টা বলেন, “পুরো জাতিরই গড় বয়স একটু একটু বাড়তে থাকে এবং এজন্যই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের যে সময়টা, এটা হল উইন্ডো অব অপরচুনিটি। এটা সময়ের সুযোগ। এটাকে সর্বোচ্চ ব্যবহার না করতে পারলে… একটা কথা আছে না, ইউ হ্যাভ টু গেট রিচ বিফর ইউ ওল্ড।
“বার্ধক্যে পৌঁছানোর আগেই ধনী হতে হলে বার্ধক্যের আগেই ধনী হতে হয়। এ কারণেই আমার কাছে এটা অর্থনীতির দিক থেকে এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে।”
এক্ষেত্রে ভরসার জায়গা কী তা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আশা করি একটা সুশাসিত, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় যদি উত্তরণ ঘটে তাহলে আমরা এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব এবং বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা, সেটার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
“কিন্তু তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, একটা সুশাসিত, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় যাতে উত্তরণ ঘটাতে পারি, অন্তর্বর্তী সরকারের এটাই একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। সংস্কারের প্রস্তুতি বলি আর নির্বাচনের প্রস্তুতি যাই বলি, আমাদের আসল লক্ষ্য হল একটা ভালো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরির ভিত যাতে প্রস্তুত হয়।”