একই অভিযোগে পাঁচ হাজার এজেন্ট বাতিল, ১০ হাজার হিসাবের লেনদেন ব্লক এবং বিভিন্ন সাইট ও সোশাল মিডিয়ার পেইজ বন্ধ করার তথ্য তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।
Published : 09 May 2024, 09:05 PM
অনলাইনে জুয়া ও হুণ্ডি বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এর সঙ্গে অবৈধ অর্থ লেনদেনে জড়িত থাকার সন্দেহে তিন বছরে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানির ৪৮ হাজার ৫৮৬টি ব্যক্তিগত হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।
একই সঙ্গে হুণ্ডি সংশ্লিষ্টতা সন্দেহে এমএফএসের ৫ হাজার ২৯টি এজেন্টশিপ বাতিল এবং ১০ হাজার ৬৬৬টি এজেন্ট হিসাবের লেনদেন ব্লক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে লিখিত উত্তরে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নেওয়া এসব পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
দেশে মোবাইলে আর্থিক সেবা সহজ হওয়ার পর বিভিন্নভাবে এর অপব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় খবর হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। এরমধ্যে হুণ্ডি, অনলাইন জুয়ায় বিভিন্ন এমএফএসের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ লেনদেন বেড়ে যাওয়ার ঘটনা বেড়িয়ে এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত ও অভিযানে।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম. আবদুল লতিফের এ বিষয়ক এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী লিখিতভাবে সংসদকে ডিজিটাল লেনদেনের অপব্যবহার বেড়ে যাওয়া এবং সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে এমএফএস ও ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে লেনদেনের মাত্রা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
”প্রযুক্তিগত এই উন্নয়নের সুবিধা কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু চক্র অনলাইন জুয়া বা বেটিং, গেমিং, ফরেক্স বা ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং ও হুন্ডি প্রভৃতি অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন দেশ হতে মুদ্রা পাচার বেড়ে যাচ্ছে, অপরদিকে দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে এবং ফলশ্রুতিতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
অনলাইন জুয়া ও হুণ্ডির মাধ্যমে অর্থপাচার রোধসহ সব ধরনের অর্থপাচার রোধকল্পে বিএফআইইউ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা একযোগে কাজ করছে বলেও তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।
মাহমুদ আলী সংসদকে বলেন, অনলাইন জুয়া বা বেটিং এবং হুণ্ডির সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫৮৬টি ব্যক্তিগত এমএফএস হিসাব বিএফআইইউ স্থগিত করেছে। এ পর্যন্ত এ সংক্রান্ত অভিযোগে ৫ হাজার ৭৬৬ জন এজেন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিআইডিতে তথ্য পাঠানো হয়েছে।
হুণ্ডি লেনদেনে জড়িত সন্দেহে ৫ হাজার ২৯টি এমএফএস এজেন্টশিপ বাতিল এবং সংশ্লিষ্টতা সন্দেহে ২১টি মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান ও এদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৩৯টি হিসাবের তথ্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে অবৈধ হুন্ডি, গেমিং, বেটিং, ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এমএফএস কোম্পানিগুলো বিএফআইইউ এর নির্দেশনায় এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৬৬৬টি এজেন্ট হিসাবের লেনদেন ব্লক করেছে।
একই অভিযোগে ১০৯৬টি ওয়েবসাইট, ১৮২টি অ্যাপ এবং ফেইসবুক, ইউটিউব ও ইন্সটাগ্রামসহ ১০০২টি সোশাল মিডিয়া পেইজ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সরবরাহ করা হয়েছে।
হুণ্ডি প্রক্রিয়ায় জড়িত সন্দেহে ছয়টি এমএফএস ডিস্ট্রিবিউটরের তথ্য সম্বলিত গোয়েন্দা প্রতিবেদন সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে এবং দুটির কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, অনলাইন জুয়া, বেটিং, ফরেক্স ও ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন সংক্রান্ত স্টাডি পেপার বিভিন্ন অংশীজনদের সরবরাহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব অপরাধের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা এবং কঠোর শাস্তির বিধান সংযোজনসহ 'দি পাবলিক গ্যাম্বলিং এ্যাক্ট, ১৮৬৭' সংশোধনের লক্ষ্যে একটি খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হুণ্ডি প্রতিরোধে ২২৯টি মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং তা কার্যক্ষেত্রে যথাযথ প্রয়োগের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
বিদেশে অবৈধভাবে বিভিন্ন এমএফএস প্রতিষ্ঠানের লোগো ব্যবহার করে যাতে হুণ্ডি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন