পট পরিবর্তনের পর বন্ধ হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ; কোথাও কোথাও বাড়ছে দুর্ভোগ।
Published : 17 Sep 2024, 01:39 AM
ময়মনসিংহ থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তৌসিফ আহমেদ। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে আটকে আছেন গাজীপুর চৌরাস্তার সিগন্যালে। বিরক্তি নিয়ে এ পথে নিয়মিত চলাচলকারী এই ব্যক্তি বললেন, এই ফ্লাইওভারের কাজটা হয়ে গেলে কোনো জ্যাম ছাড়া বিরক্তকর এ জায়গা থেকে কত সুন্দর করে চলে যাওয়া যেত। সবসময় এখানে মাত্র এক কিলোমিটার যেতে আধা ঘণ্টার বেশি লেগে যায়।
তৌসিফ বিরক্তি প্রকাশ করলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখালেন গাজীপুরের বাসিন্দা জীবন হাসান। বলেন, “গত ১০ বছর ধরে দেখতেছি এই জায়গায় জ্যাম লাগে। আর ৫ বছর ধইরা দেখতেছি ফ্লাইওভারের কাজ করতেছে। কিন্তু কাজ আর শেষ হয় না। এই বছরে শেষ হওয়ার কথা ছিল শুনছিলাম। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর থেকে আর ফ্লাইওভারের কাজ করতে দেখি না। দুর্ভোগ যে শেষ হবে কবে কে জানে।”
ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে সরকার পতনের আগে ও পরের সহিংসতার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিআরটি প্রকল্পের কাজ আর শুরু হয়নি। যানজট কমাতে চলমান গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের ঠিকাদার ও সাব- ঠিকাদারদের কর্মীদের আর কাজে দেখা যায়নি।
শুধু এ প্রকল্প নয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলটির প্রভাবশালী ঠিকাদারদের যেমন দেখা মিলছে না, তেমনি সরকারের সমর্থনপুষ্ট ঠিকাদাররাও কাজে নেই। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ থমকে আছে।
সড়ক থেকে সেবা খাত প্রায় সব জায়গায় একই অবস্থা। শুধু ঢাকা কিংবা গাজীপুর নয়, দেশের প্রায় সবখানেই ঠিকাদাররা পরিস্থিতি বুঝতে সময় নিচ্ছেন। এলাকায় এলে ঝামেলায় পড়বেন কি না কিংবা চলমান কাজের বাকিটুকু করলে ঠিকঠাক টাকা পয়সা পাবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে থাকার কথা বলছেন ঠিকাদাররা।
নতুন সরকারের কাছে শেখ হাসিনার সময়ে পাস করানো প্রকল্পগুলোর গুরুত্ব থাকবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কার শেষ নেই ঠিকাদারদের মনে।
বড় প্রকল্পের পাশাপাশি ছোট প্রকল্পের কাজগুলোও স্থবির হয়ে পড়েছে। হামলার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ নেতাদের মতোই আত্মগোপনে রয়েছে দলটির অঙ্গ সংগঠন ও আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত অনেক ঠিকাদার। সরকারের সমর্থনপুষ্ট ঠিকাদাররাও প্রকাশ্যে আসতে সময় নিচ্ছেন। এসব ঠিকাদারদের বড় অংশ মূলত দীর্ঘদিন ধরে সড়ক ও ড্রেন সংস্কার-নির্মাণের কাজ করে আসছিলেন।
সব মিলিয়ে থমকে গেছে দেশের চলমান উন্নয়নমূলক কাজগুলো। যেগুলো কাজ চলছে, সেগুলোও যেন প্রয়োজনের তুলনায় কম লোক দিয়ে চালানো হচ্ছে। এতে গতি হারিয়েছে প্রকল্পের অগ্রগতি।
এছাড়া বন্ধ আছে যন্ত্রপাতি কেনা, চলমান কাজের বিল, আর্থিক ও প্রশাসনিক কাজের অনুমোদনসহ উন্নয়ন কাজ সম্পর্কিত অনেক কিছুই।
এ পরিস্থিতিতে ঠিকাদাররা দাবি করছেন, কোন কাজটা হবে আর কোনটি হবে না সরকার যেন অতি দ্রুত সে বিষয়ে একটা নির্দেশনা দেয়। কাজ বাতিল হলে বড় ধরনের আর্থিক লোকসান এড়াতে সরকারি ঘোষণা দিকে তাকিয়ে তারা।
পিছিয়ে কাজ, দুর্ভোগে মানুষ
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কাজ শেষ করে ডিসেম্বরে গাজীপুরের বিআরটি প্রকল্পের পথে গাড়ি চালানোর আশা থাকলেও তা এখন আর হয়ে উঠবে না বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের আন্দোলনের সময় এ প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে। এতে অনেক পিছিয়ে গেছে বাস্তবায়নের কাজ। আর দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
সড়ক ও জনপথের অধীনে বাস্তবায়ন হচ্ছে বিআরটি প্রকল্পের গাজীপুর অংশ। প্রকল্প পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ বলেন, আন্দোলনের সময় ১৩টি স্টেশনে পোড়ানো হয়েছে। চৌরাস্তার কাছে ফ্লাইওভারের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছিল।
“আন্দোলন, সরকার পরিবর্তন-সব মিলিয়ে একটা ইফেক্ট তো আছেই। তবুও ঠিকাদাররা কাজগুলো শুরু করেছে আবার। কাজ পুরোদমে শুরু হতে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে।”
প্রকল্প পরিচালক ঠিকাদারদের কাজে ফেরার কথা বললেও গত সপ্তাহে এ প্রকল্প এলাকা ঘুরে কোথাও কাজ চলমান দেখা যায়নি। এ তথ্য তুলে ধরলে তিনি বলেন, “আপনি হয়ত কোথাও পাবেন না। তবে চৌরাস্তাতে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকামুখী ফ্লাইওভারের কাজ চলছে টুকটাক। অন্যান্য প্রজেক্টে যেভাবে কাজ স্থবিরভাবে চলছে এটাও তেমনই।”
এ প্রকল্পের উপর অনেক ঝড়ঝাপ্টা যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কন্ট্রাক্টররা হতভম্ব হয়ে আছে যে তারা কিভাবে কী করবে। তাদের মালামালের কেমন ক্ষতি হয়েছে সেটা নির্ধারণ করতেছে। এরপর আমাদের জানাবে। আমরাও চেষ্টা করতেছি কাজ শুরু করানোর জন্য। এখন আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করছি। এরপর বলা যাবে কাজ কতদিনে শেষ হয়।”
বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মোট সাড়ে ২০ কিলোমিটার রাস্তার এই প্রকল্পে ফ্লাইওভার ৯টি ও স্টেশন রয়েছে ২৫টি, যেগুলোর মধ্যে ১৩টিই আগুনে পোড়ানো হয়েছে।
রাজধানীতে জাতীয় সংসদ থেকে সংসদ সদস্যদের আবাসিক এলাকায় যাওয়ার আন্ডারপাসটির নির্মাণ কাজও সরকার পতনের সময় থেকেই বন্ধ রয়েছে। বর্তমান অবস্থা জানতে সেখানে কথা বলতে চাইলে দায়িত্বশীল কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কতটুকু কাজ বাকি জানতে প্রকৌশলীদের খোঁজ করেও সেখানে তাদের দেখা মেলেনি।
প্রকল্প এলাকার আশপাশে ঘুরছিলেন নিরাপত্তা কর্মী আব্দুর রউফ মিয়া। কথা হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ”কাজ এহন বন্ধ আছে। আমারে রাখছে খালি দেহাশোনা করার লইগ্যা। কাজের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।”
সংসদ ভবন এলাকার আশপাশে রিকশা চালান হারুনুর রশীদ। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি আন্ডারপাস প্রকল্পের ভেতরে-বাইরে কোনো লোককে কাজে দেখেননি।
”সরকার চইলা যাউনের পর থেইকা এই কাম বন্ধ দেখতাছি। লেবাররাও চইলা গেছে। কাম একেবারে বন্ধ। মাইনষে এক পাশের টিনও খুইলা ফালাইছে।”
আন্ডারপাস প্রকল্পের কাজটি করছিল কনস্টেক অ্যান্ড টেকনোলজি লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি কোম্পারিন। এটির প্রকৌশলী আরিফ বলেন, কাজ করা হবে কিনা সেটার বিষয়ে কোনো আপডেট না পাওয়ায় তা আপাতত বন্ধ রয়েছে।
”আমরা শুনেছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নাকি বলেছে, যেগুলো কাজ একান্ত জরুরি সেগুলো চলবে। আর যেগুলো একান্ত জরুরি না, সেগুলো কিছু লস দিয়ে উনারা আপোস করে দিবে।”
এ প্রকল্পের কাজ ১০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছিল বলে তুলে ধরেন তিনি। বললেন, আন্দোলনে সহিংসতা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কাজের লোকজন সব চলে গেছে।
দেশের বড় ঠিকাদারি কোম্পানির একটি তমা কনস্ট্রাকশন, যেটির অধীনে ডেমরা, সিলেট ও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। তবে সবগুলো কাজেই এসেছে স্থবিরতা।
এর কারণ হিসেবে কোম্পানিটির নাম প্রকাশ না করার শর্তে যান্ত্রিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, “দেশের অন্যান্য কাজের যে অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন আমাদেরও একই অবস্থা। আর আন্দোলনের সময় প্রকল্পগুলোয় টুকটাক ইনসিডেন্স হয়েছে।”
তবে আগের সরকারের সময়ে প্রভাবশালী ঠিকাদার কোম্পানি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তমা কনস্ট্রাকশনের কাজ বাতিল হবে না বলে মনে করেন তিনি।
তার ভাষ্য, “দেশের বাইরের ফান্ডিংয়ে ও জনসাধারণের জন্য যে কাজ হয় সেটা তো বাতিল করার কিছু নাই। এটা নিয়ে আমাদের টেনশন নাই। অনেক নতুন কাজের টেন্ডার হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো হবে কি না, না কি পরে হবে সেটা ঠিকাদারদের আলাদা চিন্তার বিষয় আছে।“
‘সরকার কোন প্রকল্প করবে তা অজানা ঠিকাদারদের’
ঠিকাদারি কোম্পানি রিলাইয়েবল বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল বলেন, “আমরা ঠিকাদাররা একটা শঙ্কার মধ্যে আছি যে, যেসব কাজ চলমান রয়েছে সেসবের কোনটা যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে গুরুত্ব পাবে, আর কোনটা কম গুরুত্ব পাবে তা নিয়ে।
“আগের সরকার চেয়েছে তার মতো পরিকল্পনা করে কাজ করবে। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হলে নতুন সরকার নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আগায়। গুরুত্ব কম বিবেচনা করে অনেক সময় প্রকল্প বাদও যায়। তাই এটা নিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে শঙ্কার শেষ নেই।”
জুলাইয়ে আন্দোলনের পর থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলো বন্ধ থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কোন প্রকল্পের কাজ হবে বা হবে না আমাদের এমন একটা গাইডলাইন দিয়ে দিক। এই সরকার যদি বলে গত সরকারের আমলের কোনো ওয়ার্ক অর্ডার থাকবে না, তাহলে ঠিকাদারদের কী হবে? তাই দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের সব কাজ ক্লোজ হয়ে আছে।”
১৯৯৮ সালে লাইসেন্স পাওয়া শফিকুলের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে বর্তমানে নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও গোপালগঞ্জে কাজ রয়েছে। কিন্তু নতুন সরকারের কাছে এইসব কাজ টিকবে কিনা তা অজানা থাকায় তিনি সামনে এগোতে পারছেন না বলে দাবি করেন।
সরকারি সব বিভাগ মিলে ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বন্ধ রয়েছে বলে ঠিকাদারদের অনুমানের কথা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, দেশে ৯৯ শতাংশ কাজ বন্ধ রয়েছে। আর যারা কাজ চলমান রেখেছে তারা জনবল কমিয়ে দিয়ে আতঙ্ক নিয়েই নামে মাত্র কাজ করছে।
রাজধানীর গাবতলীর গৈদারটেক এলাকায় উত্তর সিটির অধীনে চলছিল ড্রেনেজ লাইন নির্মাণের কাজ। অর্ধেকের কাছাকাছি কাজ হয়েছিল। আন্দোলন আর সরকার পতনের পর এখন কাজ গতি হারিয়েছে।
উত্তরার খালপাড়েও মিলছে একই চিত্র। ড্রেনেজ লাইন খননের কাজ চলছিল রাজউকের অধীনে। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সেটাও গতি হারিয়েছে।
রাজধানীর নতুন বাজারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে এপ্রিল মাসে রাস্তার পাশের ড্রেনের কাজ পেয়েছিলেন একজন ঠিকাদার।
নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ঠিকাদার আওয়ামীপন্থি হওয়ায় বর্তমান সরকারের কাছে তার কাজ টিকবে কিনা এমন শঙ্কায় ছিলেন। পরে আরেক দলের পরিচিতি এক কর্মীকে কাজটা করতে দিয়েছেন, যাতে কাজটা বাদ না যায়। যাকে কাজটা দিয়েছেন তার সঙ্গে শর্ত হচ্ছে- লভ্যাংশ থেকে তাকেও ভাগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, ”আমি যে এই টেন্ডারের কাজ করব, এটা পরে বাতিল করে দেয় কিনা সেই ভয়ে আছি। দায়িত্বশীল কারও সঙ্গে কথাও বলতে পারছি না যে আমার কাজটা নিয়ে আগাবো কি না। আগের সরকারের অধীনে নির্বাচন থেকে শুরু করে অনেক কিছুই বাদ দিচ্ছে। এই অবস্থায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলো টিকে কিনা সেটা বলা কঠিন।”
এই ঠিকাদার থেকে জানা গেল, তার আরেক ঠিকাদার বন্ধু ছয় মাস আগে কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় সাত কিলোমিটার রাস্তার দরপত্র পেয়েছিলেন। জুন মাসে কাজ শুরু করে আধা কিলোমিটার রাস্তার কাজও করেছিলেন। বাকি কাজের জন্য তার পূর্ণ প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু এখন আর বাকি কাজ করার সাহস পাচ্ছেন না।
ঠিকাদাররা বলছেন, স্থানীয় সরকার, সিটি করপোরেশনসহ সব দপ্তর-অধিদপ্তরের জ্যোষ্ঠ প্রকৌশলী যারা প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে আছেন তারাও একই দায়িত্বে থাকবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহে আছেন। সবকিছুই পরিবর্তনের মুখে রয়েছে। যে কারণে তারাও কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ণ ও পরিদর্শন (আইএমইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ঠিকাদারদের কাজের গতি বুঝতে তাদের আরেকটু সময় লাগবে।
সরকার পরিবর্তনের কারণে গুরুত্ব অনুযায়ী আগের কাজ চলমান থাকবে না কি না এমন শঙ্কায় অনেক ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন। এ বিষয়ে অবগত আছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা হতে পারে। কিন্তু এটার সংখ্যা তো বলা যাবে না। এই সংখ্যা কত সেটা পেতে আরও কয়টা দিন অপেক্ষা করতে হবে।
”আমরা মান্থলি রিপোর্ট রেডি করি। কয়েকদিন পরে আমরা পর্যালোচনা করে দেখব। যদি প্রোগ্রেস কম থাকে আমরা ইমিডিয়েটলি মিটিং করব। এরপর সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিব।”
জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত অনেক ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কী রকম-এমন প্রশ্নে বলেন, ”ক্ষতির পরিমাণ আমরা অ্যাড্রেস করি না। এটা বরং আপনারা অ্যানালাইসস করে বের করতে পারবেন। তবে ঠিকাদাররা চাইলে অধিক জনবল দিয়ে কাজের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। আর মেয়াদ বাড়ানো লাগলে নিয়ম অনুযায়ী মেয়াদ বাড়াবে।“
আইএমইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে তাদের অনুমোদিত প্রকল্প ২২৭টি। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সবগুলোই চলমান রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ৫ শতাংশ হয়েছে আবার কিছু ৯৫ শতাংশও হয়েছে এমন আছে। আগামী বছরের জুন মাসে এই অর্থ বছর শেষে ৪০ থেকে ৫০টি প্রকল্প শেষ হবে।
এগুলোর বেশির ভাগ তিন বছর মেয়াদী হওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, কোনো কোনো প্রকল্পে অধীনে অনেক ঠিকাদার রয়েছে। সব মিলিয়ে হাজারের বেশি ঠিকাদার রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন,
বর্তমানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে ছোট বড় মিলিয়ে ১২৬টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। কতগুলো কাজ শেষ হয়েছে সেটার তালিকা আরও পরে হয়। কিছু প্রকল্প আছে এখন কাজ শেষের দিকে, আবার কিছু প্রকল্প আছে কাজ অনেক বাকি।
”ঠিকাদাররা কাজ ভালো করলে ভালোভাবে পেমেন্ট পাবে। আমাদের টেন্ডারের শর্ত মেনেই তাদের কাজ করতে হবে। ঠিকাদাররা স্পষ্ট জানেন বরাদ্দ আছে কিনা। আর আমাদের বরাদ্দ না থাকলে আমরা কাজ করতে বলি না। আমরা ঠিকাদারদের সবসময় তাড়া দেই কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করেন। মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে।”
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনের ১২৬টি প্রকল্পে কতজন ঠিকাদার রয়েছে সেটা তিনি বলতে পারেননি।
সরকার পতনের পর থেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আত্মগোপন রয়েছেন। তিনিই আবার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকায় প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি নিয়ে কেউ বলছেন না। তিনি না থাকায় ব্যাপক বিড়ম্বনায় পড়েছেন বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকাদাররা।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে প্রকল্পগুলো চলতেছে এগুলো রিভিও করতে হবে। কোনটা কোন পর্যায়ে আছে বা প্রকল্প কি ধরনের, সেখানে অর্থায়ন করতে হবে। এখন তো অর্থেরও টান। কোনটা স্থগিত রাখা হবে, কোনটা তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে সেগুলো নিয়ে যাচাই বাছাই করতে হবে, আর সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনেক প্রকল্প আছে যেগুলোর প্রয়োজনই ছিল না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এমন জায়গায় একটা পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো বন্ধ করে দিলেই দেশের জন্য উপকার হবে। এই বিষয়ে যাচাই-বাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।