পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা খুবই ‘সম্ভব’ বলে মনে করছেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
Published : 11 Mar 2025, 06:29 PM
প্রধান উপদেষ্টার অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ‘খুবই ভঙ্গুর’, আর এই দশ থেকে উত্তরণই হবে তার কাজের অগ্রাধিকার।
প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব নেওয়ার পর মঙ্গলবার সচিবালয়ে প্রথমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিশ্লেষণ এবং উন্নয়ন অধ্যয়ন’ বিষয়ে দুই যুগের বেশি সময় অধ্যাপনা করা আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, "অর্থনীতির অবস্থা খুবই ভঙ্গুর। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার সুযোগ নেই, আপনারা বুঝে নেবেন।
“কালকে প্রধান উপদেষ্টা অর্থনীতিকে গাজা সিটির সাথে তুলনা করেছেন। আকেলমন্দ কি লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়, আপনারা বুঝে নেবেন।"
বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতির সবই যে পরস্পর সম্পর্কিত, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনি একটা সরকারকে বলছেন ইন্টেরিম। এই শব্দটাই তো বিনিয়োগের জন্য অসুবিধাজনক। একজন বিনিয়োগকারী চিন্তা করবে যে এসব অন্তর্বর্তীর পলিসির কী স্থায়িত্ব থাকবে? বিনিয়োগ করতে তারা ভাববে। রাজনীতির সাথে অর্থনীতির একটা সম্পর্ক আছে।"
পাচারের টাকা ফেরত আসবে
পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব মন্তব্য করে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, "অত্যন্ত সম্ভব। আপনারা শুধু শক্ত থাকবেন। অনেকেই পাচার হওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে অফার করেছেন। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা। উনার যে ওয়েট, সেটা ইতোমধ্যে আপনারা হয়ত অনুমান করতে পারছেন।
“যেসব স্থানে টাকা গেছে, এতে সেসব দেশ উপকারভোগী। আন্তর্জাতিক আইন আছে, যেহেতু তারা উপকারভোগী, তাই সহজে তারা এটা ছাড়বে না। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টাকে উনারাই অফার করছেন। এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য। আমরা অতিদ্রুত কাজ করছি। আশা করছি আমরা সফল হব।"
কারা প্রস্তাব দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা বলা সম্ভব না। এগুলো বললে কাজে সমস্যা হবে। কিছুতো গোপনীয়তা মানতে হবে। যারা টাকা নিয়ে গেছে তারাতো বসে নেই। এ জন্যই একটা গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। এরমধ্যে যতটুকু বলা সম্ভব সেটুকুই বলছি। এর বেশি বললে আমাদের কাজটা বন্ধ হয়ে যাবে।
"এখানে আইনের ইস্যু আছে, প্রপার আইন করতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে মিল রেখে। আপনি ধরলেই তো টাকা ফেরত আনতে পারবেন না। এখানে কতগুলো মাধ্যম আছে। এসব বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাচ্ছি। বিশ্ব ব্যাংকসহ অনেকেই কাজ করছে।"
বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন তথ্য যে নির্ভরযোগ্য নয়, সে কথা তুলে ধরে সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, “বাংলাদেশের ২০১৫ সালের পর থেকে ট্রেড ডেটা জাতিসংঘকে সরবরাহ করা হয় নাই। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার রোধে এটা খুবি কার্যকর তথ্য। কিন্তু যখন তথ্য দেওয়া বন্ধ হয়ে গেল, তখন বুঝলাম কিছু একটা ঘটছে।”
কাজের ক্ষেত্রে নিজের অগ্রাধিকার বলতে গিয়ে আনিসুজ্জামান বলেন, “ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য যে ডেভেলপমেন্ট ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে, এটা নিয়ে কিছু কাজ করতে হবে।
"আমাদের বৈদেশিক ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের উপরে চলে গেছে। ২০১০ সালের পর থেকে বৈদেশিক ঋণের প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেড়েছে। একই সঙ্গে ডমেস্টিক রিসোর্স মবিলাইজেশন অনেক কমে গেছে। এক সময় আমাদের ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও ১১/১২ শতাংশ ছিল। এখন সেটা ৭ শতাংশে নেমে গেছে। সুতরাং অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবস্থাপনার দিকে আমার নজর দিতে হবে। শেয়ার বাজারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বিগত দিনে আমাদের প্রত্যেকের আয় বেড়েছে। তাহলে আমাদের রেভিনিউ তো অনেক বেশি হওয়ার কথা ছিল। "