বাস্তবায়ন অগ্রগতি কম হওয়ায় বরাবরের মতো এবারও এডিপি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
Published : 27 Feb 2024, 10:48 PM
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যয় সাশ্রয়ের প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন কার্যক্রমে; চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৭ শতাংশ।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় অর্থ ব্যয়ের এ হার গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, অগ্রাধিকার ছাড়া অন্য প্রকল্পগুলোর কার্যক্রমে ধীরগতির কারণেই মূলত বাস্তবায়নের অগ্রগতি কম হয়েছে। অনেক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পেও ব্যয় সাশ্রয়ী নীতি অনুসরণ করায় চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এডিপি বাস্তবায়নের সাল ও মাসওয়ারী যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে এডিপিতে অর্থ ব্যয়ের এত কম হার গত ১৩ বছরের মধ্যে আর দেখা যায়নি। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল ২৮ শতাংশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে এডিপির আওতায় দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে তার ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার মোট ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল। বাস্তবায়ন অগ্রগতি কম হওয়ায় সরকার বরাবরের মতো এবারও এডিপি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।
বাস্তবায়ন কম হওয়ার বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সংকটের আশংকায় সরকার সতর্কতা হিসেবে তুলনামুলক কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়েছে। মূলত বাস্তবায়ন কম হয়েছে এ কারণেই।
সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ২৮%, ৭ বছরে সর্বনিম্ন
“সারাবিশ্ব ব্যাপী যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি…এটা অনুযায়ী আমরা একটু স্লো এগোচ্ছি। যেগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এগুলোতে বরাদ্দটা কম দেওয়া হচ্ছে। যেগুলো একদম জনবান্ধব প্রকল্প ওই গুলোতেই চাহিদা অনুযায়ী অর্থ ছাড় করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “সারাবিশ্বই এখন আর্থিক সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এখনও আমাদের সেভাবে সংকট না হলেও সতর্কতা হিসেবে অগ্রাধিকার প্রকল্প ছাড়া কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে অর্থছাড় কমানোর সরকারের নির্দেশনা রয়েছে।“
এ সময় আইএমইডি সচিব উদাহরণ দিয়ে বলেন, “চলতি অর্থবছরের এডিপিতে আইএমইডির জন্য একটি গাড়ি কেনার বরাদ্দ ছিল। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কম গুরুত্বপূর্ণ বলে চলতি অর্থবছরে এ গাড়ি কেনার জন্য অর্থ ছাড় করা হয়নি।“
এভাবেই কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থায়ন কমিয়ে দেওয়ার কারণেই এবার এডিপি বাস্তবায়ন কম দেখা যাচ্ছে। আবার গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে ঠিকই চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, বলেন তিনি।
আইএমইডির হালনাগাদ এ প্রতিবেদনেও সরকারের অর্থ সাশ্রয়ী নীতির নির্দেশনার প্রতিফলন দেখা গেছে। এতে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ছাড় বা খরচ করেছে মাত্র ২৫ শতাংশ। আর প্রকল্পে বিদেশি অর্থায়ন খাতে ব্যয় হয়েছে ৩০ শতাংশ। দুই ব্যয়ের গড় দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাওয়া ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গড় বাস্তবায়ন হয়েছে ২৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সরকার দুই লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার যে এডিপি অনুমোদন দিয়েছে, তাতে প্রায় ৮০ শতাংশই বরাদ্দ পেয়েছে এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ (থোক বরাদ্দসহ)। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
এছাড়া পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৩৬ শতাংশ, রেল মন্ত্রণালয় ৩৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ, সেতু বিভাগ ৩৫ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ প্রায় ৩১ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে ২৬ শতাংশ করে।
বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, শিল্প মন্ত্রণালয় ১৯ শতাংশ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ১৩ শতাংশ, এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ মাত্র ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ বরাদ্দ খরচ করতে পেরেছে।