চূড়ান্ত হিসাবে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
Published : 16 Feb 2024, 07:54 PM
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রান্তিক ভিত্তিক হিসাব প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশের জিডিপি বেড়েছে ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ হারে। আর গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ হিসাবে এ বছর প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে ২ দশমিক ৬৯ শতাংশীয় পয়েন্ট।
জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের এই প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকের তুলনায়ও কম। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এপ্রিল-জুনে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বৃহস্পতিবার জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করে। তাতে দেখা যাচ্ছে,চূড়ান্ত হিসাবে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাময়িক হিসাবের তুলনায় কমে গেছে।
সাময়িক হিসাবে গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। চূড়ান্ত হিসাবে তা কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। এরপর আসে মহামারী। তাতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি নেমে যায় ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে, যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
মহামারীর ধাক্কা সামলে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে। দুঃসময় কাটিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সরকার বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। কিন্তু ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির দুর্দশা থেকে মুক্ত থাকার উপায় ছিল না বাংলাদেশের। প্রাথমিক হিসেবে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ অর্জিত হওয়ার ধারণা দেওয়া হলেও চূড়ান্ত হিসাবে তা ছয় শতাংশের নিচে নেমে গেল।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার, যদিও এ লক্ষ্যমাত্রাকে ‘উচ্চাভিলাষী’ বলেছিলেন অর্থনীতিবিদরা।
এতদিন অর্থবছর শেষে জিডিপির প্রাথমিক হিসাব এবং কয়েক মাস পর চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করত বাংলাদেশ সরকার। তাতে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যেত না বলে অভিযোগ ছিল অর্থনীতিবিদদের।
এখন আইএমএফ –এর ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত মানতে প্রতি তিন মাসে একবার (প্রান্তিকভিত্তিক) জিডিপির হিসাব প্রকাশ শুরু করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।
ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সত্যিকার অর্থে দেশে এবারই প্রথম জিডিপির ত্রৈমাসিক হিসাব করা হয়েছে। এর আগে গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকের যে হিসাব দেওয়া হয়েছিল, সেটা আগের অর্থবছরের প্রতিবেদন থেকে তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল।”
জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের জিডিপির প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই তিন মাসে কৃষি এবং সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে মোট জিডিপির হিসাবে।
পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ছিল ২ দশমিক ০৭ শতাংশ।
সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে আরো বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সেবা খাতে ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও এবার তা নেমে এসেছে মাত্র ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশে।
তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এই খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ।