ভবন হেলে পড়ার ঘটনায় ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
Published : 25 Nov 2023, 11:17 PM
চট্টগ্রামের রৌফাবাদে শীতল ঝরনা খালের পাড়ে হেলে থাকা ভবন ও পাশের আরো চারটি ভবন থেকে ১০০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ভবন হেলে পড়ার ঘটনায় ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
স্থানীয় সরকারের উপপরিচালককে প্রধান করে গঠিত এই কমিটিতে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ, সিটি করপোরেশন, সিডিএ, ফায়ার সার্ভিস ও পিডব্লিউডি'র একজন করে প্রতিনিধি এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখা হয়েছে।
কমিটি প্রয়োজনে চট্টগ্রাম প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করবে এবং ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, হেলে পড়া ভবনটি এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় পাশের অন্য চারটি ভবনে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কেউ বসবাস করতে পারবেন না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
"বাসিন্দাদের আশপাশের বিদ্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সেখানে তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।"
শনিবার বিকেলে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার রৌফাবাদ এলাকায় শীতল ঝরনা খালের পাড়ে তৈয়বিয়া হাউজিং সোসাইটির খোরশেদ ম্যানসন নামের চারতলা ভবনটি হেলে যায়।
ওই ভববনের পিছনের খালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের পূর্ত কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। ভবন হেলে পড়ার খবরে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও র্যাবও ঘটনাস্থলে যায়।
রাতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাদিউর রহিম জাদিদ, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক, চাঁন্দগাও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফেরদৌস আরা ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট হেলে থাকা ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়।
ঝুকিপূর্ণ বিবেচনায় আশপাশের আরো চারটি ভবন থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে মোট ১০০টি পরিবারকে।
সিডিএ এর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ওই ভবন মালিক সিডিএ এর প্ল্যান লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণ করেছে। খালের অ্যালাইনমেন্ট থেকে ভবনটি ১৫ ফুট দূরে থাকার কথা। তা তো করেইনি বরং খালের সীমানার ওপর ভবন নির্মাণ করেছে।
"প্রায় এক বছর আগে থেকে সেখানে সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড খালের কাজের জন্য মাপ শুরু করে। তখন পাশের অন্য একটি ভবন মালিক নিজে ভবনের অংশ বিশেষ ভেঙেছেন। কিন্তু এই ভবনটির মালিক একবার সময় নিয়েও খাল সংলগ্ন অংশ ভাঙেননি। পরে তাতে রাজি হননি। উল্টো তিনি মুচলেকা দিয়েছেন খালের কাজের সময় কিছু হলে এর দায়িত্ব তার নিজের।"
কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “এখন ভবনটির যে পরিস্থিতি, তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। হয়ত পুরো ভবনটিই ভেঙে ফেলতে হবে। পুরোটা দেখে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব।"
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পূর্ত কাজের প্রকল্প পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং বিগ্রেডের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী বলেন, “শীতল ঝরনা খালে প্রকল্পের কাজ চলছে। সেখানে যে ভবনটি হেলে পড়েছে সেটির পিছনের দেয়াল খালের জিরো লাইনের উপর।
“খালের কাজ শুরুর আগে ভবন মালিককে আমরা বলেছি ওয়ার্কিং স্পেস দিতে। তিনি রাজি হননি। বরং তিনি লিখিত দিয়েছেন কাজের জন্য তিনি জমি ছাড়বেন না। ভবনের কিছু হলে দায়িত্ব তার।”
ভবন মালিকের কাছ থেকে লিখিত পাওয়ার পর খালের মাটি কাটার কাজ শুরু করেছেন জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী বলেন, “এরপরও আমরা খালের অংশে শিট পাইল দিয়েছি। তারপর মাটি কাটা কেবল শুরু করা হয়েছে। তখন ওই ভবনের দুটি কলাম ফেইল করেছে। এতে ভবনটি হেলে গেছে।
“ভবনটির ফাউন্ডেশন (ভিত্তি) খালের তলা থেকে অনেক উপরে হওয়ায় এবং ফাউন্ডেশন দুর্বল হওয়ায় সেটি হেলে গেছে। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।”
ভবনটির মালিক মো. খোরশেদুল আলম ঘটনার পর উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, তিনি খালের কাজ শুরুর আগে লিখিত দিয়েছেন। খালের মাটি কাটার কাজ শুরুর পর শনিবার ভবনটি হেলে পড়েছে।
এ সংক্রান্ত মুচলেকায় ভবন মালিক মো. খোরশেদুল আলমের স্ত্রী মোছাম্মৎ মিলি কাউছার (জমির মালিক) লেখেন, "জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করার সময় আমার তফসিলভুক্ত সম্পত্তির কোনো ক্ষতি সাধন হলে আমি নিজেই দায় বহন করিব এবং সম্পত্তির নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিব। চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প কাজে নিয়োজিত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করিব না।"
এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি নগরীর ষোলশহর এলাকায় একটি চারতলা ভবন হেলে যায়। ভবনটির লাগোয়া চশমা খালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলার সময় ওই ঘটনা ঘটে।
তারও আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সদরঘাট থানার পার্বতী ফকিরপাড়া এলাকায় খননের সময় গুলজার খাল সংলগ্ন তিনতলা ও দোতলা ভবন দুটি হেলে পড়ে। পরে ভবন দুটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল।