তিন দিনের ব্যবধানে পাচারের সময় চট্টগ্রাম থেকে আরও দুইটি রাজ ধনেশ পাখি উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার রাতে চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া কলেজ গেট এলাকায় একটি বাস ধেকে ওই রাজ ধনেশ পাখি দুটি উদ্ধারের পাশাপাশি একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চন্দনাইশ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন।
গ্রেপ্তার মো. মিজানুর রহমান (৪৭) পাবনা জেলার বেড়া থানার সিংহাসন গ্রামের ফজিআর রহমানের ছেলে। পাখি দুটি পাচারের অভিযোগে বন্যপ্রাণী আইনে তাকে চারমাসের কারাদণ্ডও দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ওসি আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিজানুর স্বীকার করেছে এই রাজ ধনেশ পাখি দুটিও আগেরবারের মত বান্দরবান জেলার আলীকদম থেকে নিয়ে আসা হয়। পরিকল্পনা ছিল চট্টাগ্রামের চান্দনাইশ হয়ে ঢাকার গাজীপুর দিয়ে সাতক্ষীরা দিয়ে পাখিগুলো ভারতে পাচার করে দেওয়া হবে।“
গোপন খবরের ভিত্তিতে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “মিজানুর চকরিয়া থেকে ওই বাসে উঠেছিল। এরপর রাত পৌনে ১২টার দিকে গাছবাড়িয়া কলেজ গেট এলাকায় শ্যামলী পরিবহনের বাসে তল্লাশি চালিয়ে দুটি রাজ ধনেশসহ মিজানুর রহমানকে আকট করা হয়।“
মিজানুরকে চন্দনাইশের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) উপস্থিতিতে চার মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, উদ্ধার হওয়া ধনেশ পাখি দুটি বনবিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাঁশখালী এলাকায় ‘অন টেস্ট’ লেখা একটি নম্বরবিহীন অটোরিকশা থেকে চারটি রাজ ধনেশ পাখি উদ্ধার করে দুইজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ওই চক্রটি সম্পর্কে ওসি আনোয়ার বলেন, “তাদেরও চান্দনাইশ রুট ব্যবহারের কথা ছিল। কিন্তু পরে তারা পথ পরিবর্তন করে বাঁশখালী এলাকা দিয়ে যায় এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। “
ওইদিন রাজ ধনেশ পাচারে দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর ওসি কামাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেছিলেন “একটি চক্র এই পাখিগুলো পাচারে জড়িত। চারটি রাজ ধনেশকে আনা হয় বান্দরবানের আলীকদম এলাকা থেকে। এরপর কক্সবাজারের চকরিয়া রুট দিয়ে পেকুরা এবং বাঁশখালী থানা দিয়ে আনোয়ার মইজ্জ্যারটেক হয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।“
গ্রেপ্তারের পর দুইজনকে সেদিন ভ্রাম্যামাণ আদালত ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছিল।
রাজ ধনেশ
বাংলাদেশে যে চার প্রজাতির ধনেশ পাখির দেখা মেলে তার মধ্যে রাজ ধনেশ (Great Indian Hornbill) অন্যতম।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের গহীন বনে এই প্রজাতির ধনেশ পাখির বাস। কালো রঙের বড় আকৃতির এই পাখির শরীরের মাঝ বরাবর পালকে সাদা ছোপ থাকে।
‘অদ্ভুত’ দর্শন ঠোঁটের জন্য বিখ্যাত ধনেশ পাখি। রাজ ধনেশের কাস্তের মত বাঁকানো ঠোঁটের গোড়া আর কপাল কালচে, গলা হলুদ। লেজে সাদার উপর কালো রঙের পট্টি থাকে। চোখে লাল বলয় থাকে।
ধনেশ পাখি জোড়ায় জীবনযাপন করে। একটি নির্দিষ্ট এলাকার বলয়ের মধ্যেই ধনেশ সারাজীবন কাটায়।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) এর লাল তালিকায় রাজ ধনেশ পাখিতে ‘সংকটাপন্ন’ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।