অটোরিকশায় করে পাচার হচ্ছিল রাজ ধনেশ, দুই জনের কারাদণ্ড

এক জোড়া রাজ ধনেশ চার লাখ টাকায় পাচারকারী চক্র বিক্রি করে থাকে বলে পুলিশের ভাষ্য।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2023, 11:57 AM
Updated : 26 May 2023, 11:57 AM

পাচারের সময় চট্টগ্রামে বাঁশখালী এলাকায় ‘অন টেস্ট’ লেখা একটি নম্বরবিহীন অটোরিকশা থেকে চারটি রাজ ধনেশ পাখি উদ্ধার করে দুইজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বৃহস্পতিবার রাতে বাঁশখালী থানার গুণাগরি এবং আনোয়ারা থানার মইজ্জ্যার টেক এলাকা থেকে এই রাজ ধনেশ পাখি পাচারের ঘটনায় জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে বাঁশখালী থানার ওসি কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তার দুজনের মধ্যে অটোরিকশা চালক মো. সেলিমের (৪২) বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার দীঘার পানখালি গ্রামে। আর মিজানুর রহমনের (৪২) বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা থানার পূর্ব খোস্তাকাটায়।

ওসি কামাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “একটি চক্র এই পাখিগুলো পাচারে জড়িত। চারটি রাজ ধনেশকে আনা হয় বান্দরবানের আলীকদম এলাকা থেকে। এরপর  কক্সবাজারের চকরিয়া রুট দিয়ে পেকুরা এবং বাঁশখালী থানা দিয়ে আনোয়ার মইজ্জ্যারটেক হয়ে  চট্টগ্রাম নগরীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।“

গ্রেপ্তারের পর সেলিম ও মিজানুরকে ভ্রাম্যামাণ আদালত ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছে বলে জানান ওসি।

তারা বণ্যপ্রাণী পাচারের একটি ‘চক্রের’ সদস্য জানিয়ে কামাল উদ্দিন বলেন, “আলীকদম থেকে এই চক্রটি এভাবে আগেও কয়েকবার ধনেশ পাখি নিয়ে এসেছে। এই পাখিগুলো ভারত হয়ে অন্যান্য দেশে পাচার করা হয় বলেও স্বীকার করেছে সেলিম ও মিজানুর।“

ওসি বলেন, “গোপন খবরের ভিত্তিতে বাঁশখালীর গুণাগরি এলাকায় অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রামমুখী একটি অটোরিকশাকে প্রথমে আটক করা হয়। ‘অন টেস্ট’ লেখা নম্বরবিহীন ওই অটোরিকশাটির ইঞ্জিন কাভারের উপরে বাঁশের তৈরি খাঁচার ভিতরে আরেকটি বেতের ঝুড়িতে চারটি রাজ ধনেশ পাখি পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে অটোরিকশা চালক সেলিম জানিয়েছে, তার দায়িত্ব ছিল আলিকদম থেকে পাখিগুলো মইজ্জ্যারটেকে মিজানুর রহমানের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

“সেলিমের দেওয়া তথ্যে মইজ্জ্যারটেকে অভিযান চালিয়ে মিজানুরকে গ্রেপ্তারের পর তিনি জানিয়েছেন, তার কাজ হল ওই পাখিগুলোকে চট্টগ্রাম নগরীতে অন্য কারও কাছে নিয়ে যাওয়া।“

এক জোড়া রাজ ধনেশ পাখি চার লাখ টাকায় পাচারকারী চক্র বিক্রি করে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য। 

ওসি কামাল উদ্দিন বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ এর ৩৪(খ) ধারার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় গ্রেপ্তার দুজনের প্রত্যেককে ছয় মাস করে কাদাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বন বিভাগের কর্মকর্তারা এবং সহকারী কমিশনারের (ভূমি) উপস্থিতিতে।

উদ্ধার হওয়া রাজ ধনেশ পাখি চারটি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় পাঠানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ওসি।

রাজ ধনেশ

বাংলাদেশে যে চার প্রজাতির ধনেশ পাখির দেখা মেলে তার মধ্যে রাজ ধনেশ (Great Indian Hornbill) অন্যতম।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের গহীন বনে এই প্রজাতির ধনেশ পাখির বাস। কালো রঙের বড় আকৃতির এই পাখির শরীরের মাঝ বরাবর পালকে সাদা ছোপ থাকে।

‘অদ্ভুত’ দর্শন ঠোঁটের জন্য বিখ্যাত ধনেশ পাখি। রাজ ধনেশের কাস্তের মত বাঁকানো ঠোঁটের গোড়া আর কপাল কালচে, গলা হলুদ। লেজে সাদার উপর কালো রঙের পট্টি থাকে। চোখে লাল বলয় থাকে।

ধনেশ পাখি জোড়ায় জীবনযাপন করে। একটি নির্দিষ্ট এলাকার বলয়ের মধ্যেই ধনেশ সারাজীবন কাটায়।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) এর লাল তালিকায় রাজ ধনেশ পাখিতে ‘সংকটাপন্ন’ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।