মে দিবসে চট্টগ্রামে অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল প্রত্যাহার দাবি

বিলটি পাস হলে শ্রমিকদের জীব্ন ‘দাসপ্রথায়’ ফিরে যাবে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম টিইউসির নেতা তপন দত্ত।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2023, 12:35 PM
Updated : 1 May 2023, 12:35 PM

অত্যাবশকীয় পরিষেবা আইনের মাধ্যমে শ্রমিকদের ‘যতটুকু’ অধিকার আছে, তাও কেড়ে নেয়ার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রামের ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) নেতারা।

সোমবার মে দিবসের আলোচনা সভায় জেলা সভাপতি তপন দত্ত বলেন, “দেশের বর্তমান শ্রম আইনে শ্রম আইনে শ্রমিকদের অধিকার অর্ধেক খর্ব করা হয়েছে; যেটুকু আছে পরিষেবা আইনের মাধ্যমে সেটাও কেড়ে নেয়ার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে।”

অত্যাবশ্যক পরিষেবার ক্ষেত্রে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা সরকারের হাতে দিয়ে গত ৬ এপ্রিল সংসদে একটি আইন করার প্রস্তাব ওঠে। আইনটি পাস হলে কোনো ব্যক্তি ‘বেআইনি’ ধর্মঘট করলে বা চলমান রাখলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পাশাপাশি সরকার প্রয়োজন মনে করলে জনস্বার্থে কোনো প্রতিষ্ঠানে লকআউট ও লেঅফ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে।

এসব বিধান রেখে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল– ২০২৩’ সংসদে উত্থাপন করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান। পরে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তপন দত্ত বলেন, “বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের ওপর যে ধরনের জুলুম চালানো হয়, তার মধ্যে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল’ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। বিলটি পাস হলে শ্রমিকরা আগের মত দাসপ্রথায় ফিরে যাবে। তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার খর্ব হবে।”

এদিন নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলের সামনে সমাবেশ শেষে লাল পতাকার মিছিল বের করা হয়। চা শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, পরিবহন, পোশাকসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাতে অংশ নেন।

তপন দত্তের সভাপতিত্বে সংগঠনটির যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল চৌধুরী, ফজলুল কবির মিন্টু, হোটেল শ্রমিক নেতা মো. হানিফ, চা শ্রমিক নেতা সজীব দাশসহ শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা সমাবেশে বক্তব্য দেন।

এদিকে মে দিবস উপলক্ষে আলাদা আলোচনা সভা ও শোভাযাত্রার আয়োজন করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন।

সভাপতি তপন চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে চট্টগ্রামের সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আবহমানকাল ধরে শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রাম চলে আসছে। যা চলবেই…

“সাংবাদিকরাও তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করে আসছে। ঐক্যের মধ্যে আলাদা শক্তি আছে। শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হলে মালিকপক্ষ লাভবান হয়। শ্রমিকরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে মালিকপক্ষ কখনোই তাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে না।”

আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের একটি মিছিল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে জামালখান চেরাগী পাহাড় ঘুরে আবার প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।

সিইউজের যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন রেজা, সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস, সিইউজের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী বক্তব্য দেন।

এর বাইরে চট্টগ্রামের ছয়টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত মোর্চা ‘সম্মিলিত মে দিবস উদযাপন পরিষদের’ উদ্যোগে ‘রক্তে ধোয়া মে, তোমায় সেলাম’ স্লোগানে মে দিবসের অনুষ্ঠান করেছে।

উদীচী চট্টগ্রাম জেলার সহসভাপতি সুনীল ধরের সঞ্চালনায় জামালখান চত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতি লেখক ও সাংবাদিক জসীম চৌধুরী সবুজ, চট্টগ্রাম থিয়েটারের দল প্রধান দীপক চৌধুরী, সৃজামী সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দলপ্রধান সুজিত চক্রবর্তী, বোধন আবৃত্তি পরিষদের সঞ্জয় পাল, ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদের দল প্রধান নন্দদুলাল গোস্বামী ও উদীচী সাধারণ সম্পাদক অসীম বিকাশ দাশ বক্তব্য দেন।

চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির আলোচনাসভা

চট্টগ্রাম জেলা কমিউনিস্ট পার্টি এদিন চট্টগ্রামে দলীয় কার্যালয়ে মে দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা করেছে।

এতে অংশ নিয়ে দলটির সভাপতি শাহ আলম বলেন, “শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায় করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। আজ মে দিবসের চেতনা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এই মে দিবস পৃথিবীর সব মানুষকে জাগিয়ে তুলেছে, শ্রমিক শ্রেণিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।

“পৃথিবীতে শ্রেণি বৈষম্য আজ চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে। একুশ শতাব্দীতে সেটা আরও চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাবে। পুঁজিবাদীরা দেশীয় অর্থনীতিসহ আন্তর্জাতিক অর্থনীতিকে সেদিকে নিয়ে যেতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে।”

শ্রমিকের ন্যুনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের আট ঘণ্টার বেশি কাজ করানো হয়। বাড়তি কাজ বা ওভারটাইম করালে মজুরির দ্বিগুন টাকা মালিকপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে।

চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীরের সঞ্চালনায় সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য, ফরিদুল ইসলাম, অমিতাভ সেন, শ্যামল লোধ, হোটেল শ্রমিক মো. শাহজাহান ও যুবনেতা অভিজিৎ বড়ুয়া বক্তব্য দেন।

এদিকে বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি আবু হানিফ ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান মে দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে ২০ হাজার টাকা মজুরির দাবি জানিয়েছেন।

কর্মসময় ৮ ঘণ্টা নিশ্চিতের দাবি শ্রমিক দলের

মে দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের শ্রমিক সমাবেশে কর্মসময় আট ঘণ্টা নিশ্চিত করার দাবি তুলেছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দল।

নগরীর কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্র ঘোষিত শোভাযাত্র ও শ্রমিক সমাবেশে হয়।

সমাবেশে বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক শ্রমমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো প্রতিবছর শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান করে। কিন্তু বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো শ্রমিকদের আট ঘণ্টা শ্রমের দাবি এখনও পূরণ করে নাই।

“তাই আন্দোলনের মাধ্যমেই শ্রমিকদের আট ঘণ্টা শ্রমের দাবি আদায় করতে হবে।”

আওয়ামী লীগ সরকার শ্রমিকের কোনো কোনো মূল্য নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নিজেদের আখের গোছানোর জন্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি করে জনগণকে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।

“শ্রমজীবী মানুষ আজ পরিবার পরিজন নিয়ে দিশেহারা। জনগণের কোনো মূল্য আওয়ামী লীগের কাছে নেই, কারণ তারা ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছে। যদি জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে হয়, তাহলে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করতে হবে।”

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক সমাজের ভূমিকা আন্দোলনকে সফল করেছিল; বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে শ্রমিকদেরকে কঠিন আন্দোলনে শরিক হতে আহ্বান জানান নোমান।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহারের সঞ্চালনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যরিষ্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বক্তব্য দেন।