লোহার টুকরা ৫০০ গজ উড়ে গিয়ে প্রাণ কাড়ল শামসুলের

সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের বিস্ফোরণে কাঁপল অনেক দূরের বাড়িঘরও।

মিন্টু চৌধুরীচট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2023, 04:15 PM
Updated : 4 March 2023, 04:15 PM

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মহাসড়কের পাশে যে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, সেখান থেকে একটি লোহার টুকরা উড়ে গিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে বসে থাকা এক ব্যক্তির প্রাণ কেড়েছে।

শামসুল আলম নামের ৬৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির সেখানে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়, লোকজন তাকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বয়োজ্যেষ্ঠ এ ব্যক্তির প্রাণহানির কারণ হওয়ার পাশাপাশি শিল্পের কাজে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদনের এ প্ল্যান্টে বিকট বিস্ফোরণে অনেকের দেহের বিভিন্ন অংশ উড়ে যেতে দেখেছেন স্থানীয়রা।

ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরের বাড়ি-ঘরও কেঁপে ওঠে; ভেঙে পড়ে জানালার কাঁচ বলে জানিয়েছেন তারা।

শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সোনাইছড়ি ইউনিয়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বেসরকারি সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় শামসুলসহ এখন পর্যন্ত ছয়জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন দুই ডজনেরও বেশি মানুষ।

শামসুলের বড় ভাই ওবায়দুর মোস্তফা জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে একটা লাকড়ির দোকানে শামসুল বসেছিলেন।

“২৫০ থেকে ৩০০ কেজি ওজনের একটা লোহার টুকরা চারকোল দোকানের টিনের চালার উপর এসে পড়ে। চালাসহ টুকরাটি তার ওপর পড়লে ওনার প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়।”

বিস্ফোরণস্থল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পেরিয়ে আধা কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে অবস্থান চারকোলের ওই দোকানটির। সেখান থেকে খানিক দূরে জাহানাবাদ গ্রামে শামসুলের বাড়ি।

শনিবার সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আহাজারি করছেন শামসুলের স্ত্রী রেহানা বেগমসহ অন্য স্বজনেরা।

শামসুলের মেয়ে মালেকা সিদ্দিকা কাজল জানান, চারকোলের দোকানটি তার মামা মো. ইউসুফের। বিকাল বেলা করে সেই দোকানে বসতেন শামসুল। শনিবার বিকালেও দোকানে বসেছিলেন। বিস্ফোরণের পর লোহার একটা চাঁই উড়ে এসে দোকানের চালাসহ ভেঙে পড়ে।

বিস্ফোরণে স্টিল রি রোলিং কারখানা এবং জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য অক্সিজেন উৎপাদনের পুরো প্ল্যান্টটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিকট বিস্ফোরণের পর সিলিন্ডার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে আশেপাশে। ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরের বাড়ি-ঘরও কেঁপে ওঠে। ভেঙে পড়ে জানালার কাঁচ।

বিস্ফোরণের খবর শুনেই ঘটনাস্থলে যান জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

তিনি জানান, বিস্ফোরণ তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাও থাকবেন।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শাহজাহান শিকদার জানান, বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে তাদের কাছে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে। ৪টা ৫৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট সেখানে পৌঁছায়। পরে আরও ৮টি ইউনিট সেখানে যোগ দেয়। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।