গৃহকর নিয়ে ‘প্রকৃত পরিস্থিতি’ তুলে ধরতে আগামী ২১ অক্টোবর এ গণশুনানি হবে।
Published : 23 Sep 2022, 08:21 PM
চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতির বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানোর পাশাপাশি গণশুনানির ঘোষণা এসেছে এ সংগঠনের গণমিছিলের কর্মসূচি থেকে।
শুক্রবার বিকালে বন্দরনগরীর কদমতলী মোড়ে পরিষদের পূর্ব ঘোষিত গণমিছিল থেকে আগামী ২১ অক্টোবর গণশুনানির ডাক দেওয়া হয়।
এর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান পরিষদ নেতারা। পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে গৃহকরের বিষয়টি সমাধান করতে মেয়রকে আহ্বান জানান তারা।
সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্যের অভিযোগে তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল চৌধুরী দুলাল ২১ সেপ্টেম্বর পরিষদের সভাপতি নুরুল আবসারের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
শুক্রবারের কর্মসূচিতে নুরুল আবসার না এলেও তার স্ত্রী সৈয়দা তাহমিনা আবসার উপস্থিত ছিলেন।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমির উদ্দিন বলেন, “মেয়র মহোদয় দৃশ্যপট থেকে সরে গিয়ে মামলা দিয়েছেন। একটা হাস্যকর বিষয় নিয়ে এ মামলা। আমাদের সভাপতি নুরুল আবসার চট্টগ্রামের ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। এটাই চট্টগ্রামের ভাষার টোন। এভাবেই চট্টগ্রামের মানুষ কথা বলে।
“আমরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। যারা সিটি করপোরেশনের টেন্ডার লুটেপুটে খেতে চায় তারাই এখন ষড়যন্ত্র করছে। তারা মেয়রকে তোষামোদ করে এ পথে এনেছেন। মেয়র পদে যে থাকেন তারা সেখানে জুটে যায়।”
আমির উদ্দিন বলেন, “মেয়র সাহেব যদি জনগণের পালস বুঝতে না পারেন, তাহলে উনাকেও চলে যেতে হবে। আপনারা ১৭% কেন ৫০% হোল্ডিং ট্যাক্স নেন। তবে ভাড়ার ভিত্তিতে ট্যাক্স হবে না।
“এখন তিনি (মেয়র) নরম সুরে কথা বলছেন। কিন্তু আপিলের নামে যে দুর্নীতি হয়েছে, তার কী হবে? চট্টগ্রামের মানুষ আজ জেগে উঠেছে। সিটি করপোরেশন, ওয়ার্ড কার্যালয়গুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। একটা সনদ নিতে গেলে ঘুষ দিতে হয়। চট্টগ্রামের দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রামবিদ্বেষী হবেন না। সাবধান হয়ে যান। আমরা কোনো সংঘর্ষে জড়াতে চাই না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আগেও করেছি, ভবিষ্যতেও করব।”
২১ সেপ্টেম্বর মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারীর মামলার পর গত দুদিনে মেয়রের অনুসারীরা থানায় আরও দুটি জিডি করেছেন।
পরিষদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে আমির উদ্দিন বলেন, “১ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অভিযাত্রা করব। মিছিল-সমাবেশ ও কমিটি করব।
“২১ অক্টোবর এখানে (কদমতলী মোড়) গণশুনানি হবে। যাদের ট্যাক্স ধার্য হয়েছে, তারা সেই কাগজ আনবেন। চট্টগ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আসবেন। সাবেক মেয়রদের এবং বর্তমান মেয়রকেও দাওয়াত দেব। উনিও আসুক, সবার উপস্থিতিতে শুনানি হবে। মানুষ কি সমস্যায় পড়েছে সবাই জানুক।”
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের উপদেষ্টা মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “আমরা ন্যায়ের পথে যুদ্ধে নেমেছি। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আজকের আন্দোলনের পথে নেমেছে। এখানে যদি এভাবে কর নিতে পারে সারাদেশে সব সিটি করপোরেশনে এভাবে কর চাপিয়ে দেবে।
“আপনি শুধু মেয়র নন, অভিভাবকও বটে। নিজগুণে নুরুল আবসার ভাইয়ের মামলা তুলে নিন। আপনার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাল্লাহ।”
নুরুল আবসারের স্ত্রী তাহমিনা আবসার বলেন, “আমার স্বামীকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। নতুন প্রবর্তিত গৃহকর পদ্ধতি নিয়ে যে আন্দোলন চলছে, সেটি উনার একার আন্দোলন নয়।
“তিনি চট্টগ্রামবাসীর জন্য আন্দোলন করছেন। তিনি ভীত নন। আমাদের কর দিতে হবে। কর না দিলে সরকার চলবে কীভাবে? তবে গলাকাটা কর আমরা দিব না। আপনারাও কেউ দেবেন না।”
পরিষদের মুখপাত্র হাসান মারুফ বলেন, “আমরা চট্টগ্রামের মানুষ নিজস্ব ঢঙে কথা বলি। এ জন্য যদি কারও মান চলে যায়, তবে আমরা প্রশ্ন করি এত ঠুনকো মান দিয়ে আপনারা কেমনে চলেন। কারও অসম্মান করার জন্য বক্তব্য আমাদের সভাপতি দেননি।”
মেয়রের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি আমাদের পিতা। নগরের পিতা। আপনি এ প্রশ্নের জবাব দেবেন। আপনাকে আমরা অসম্মান করতে চাই নাই। মামলা, হামলা ও সাধারণ ডায়েরি করে এ আন্দোলন থামানো যাবে না।”
১৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিম মাদারবাড়িতে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ আয়োজিত এক উঠান বৈঠকে পরিষদ সভাপতি নুরুল আবসার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেছিলেন, “আমরা এখানে যারা আছি, তারা ১১ ধরনের ট্যাক্স দিয়ে এই শহরে বসবাস করছি। কারও বাপের ভিটায় বসবাস করছি না আমরা। এই, এই মেয়র, তোর বাপের ভিটায় বসবাস করছি না আমরা। এই মেয়র, সাবধান হয়ে যাও তুমি।”
সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদে ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হলে করদাতা সুরক্ষা পরিষদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর তা স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
পরে হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম। গত জানুয়ারিতে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়নের ওপর চার বছর আগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে সিটি করপোরেশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই মাসেই তা প্রত্যাহার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি ‘ভাড়ার ভিত্তিতে’ বর্ধিত হারে গৃহকর আদায়ে সিটি করপোরেশন তৎপর হলে গত মাসখানেক ধরে স্থানীয় পর্যায়ে জনসংযোগ শুরু করে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। এরপর ২ সেপ্টেম্বর জনসভা থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর গণমিছিলের কর্মসূচি দিয়েছিল তারা।
সিদ্দিকুল ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস পপি, আইনজীবী আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর ও বিশুময় দেব শুক্রবারের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ।
আরও পড়ুন