মামলাটি হয়েছে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবসারের বিরুদ্ধে।
Published : 21 Sep 2022, 01:09 AM
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘মানহানিকর ও হুমকিমূলক’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবসারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার নগরীর চান্দগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল চৌধুরী দুলাল।
চান্দগাঁও থানার ওসি মঈনুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতারা বলছেন, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বরের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিকে বানচাল করতে মামলা করা হয়েছে।
মামলার বাদী মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী মোস্তফা কামাল চৌধুরী দুলাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিম মাদারবাড়িতে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে নুরুল আবসার মাননীয় মেয়রকে নির্দেশ করে মানহানিকর বক্তব্য দেন।”
মামলার এজাহারে বলা হয়, এমন ‘মানহানিকর ও হুমকিমূলক’ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে ব্যাপক প্রচার হওয়ায় ‘প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি চরম মর্যাদাহানি, নিরাপত্তা হুমকির মুখে এবং সিসিসি’র সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।
মামলার বাদী মোস্তফা কামাল বলেন, “মেয়র মহোদয় দেশে নেই। তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছেন। তাই আমি মামলা করেছি।”
ভাড়ার ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে সিসিসির উদ্যোগের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৩ সেপ্টেম্বর গণ মিছিল করতে যাচ্ছে। সেই কর্মসূচির প্রস্তুতি হিসেবে ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকায় উঠান বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকে নুরুল আবসার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেছিলেন, “আমরা এখানে যারা আছি, তারা ১১ ধরনের ট্যাক্স দিয়ে এই শহরে বসবাস করছি। কারও বাপের ভিটায় বসবাস করছি না আমরা। এই, এই মেয়র, তোর বাপের ভিটায় বসবাস করছি না আমরা। এই মেয়র, সাবধান হয়ে যাও তুমি।”
নির্বাচনের সময় মেয়র রেজাউলের পক্ষে প্রচার চালিয়ে এখন ভোটারদের ‘গালাগালি’ শুনতে হচ্ছে বলেও দাবি করেন আবসার।
চট্টগ্রাম সিটিতে ‘গলাকাটা’ গৃহকর প্রত্যাহার দাবি, আন্দোলনের ‘হুমকি’
মামলার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলা-হামলা হতে পারে জেনেই আমরা আন্দোলনে নেমেছি। অনুষ্ঠান চলাকালে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। কেন আন্দোলন করছি তা নিয়ে।
“এরপর বক্তব্যে আমি চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলেছি। পাবলিক মিটিং এ মানুষ অনেক কথাই বলে। অনেক কথাই হয়। আমি তুই-তুমি বলেছি, এটা আমাদের নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীরও ভাষা। উনার কাছেই আমরা শিখেছি।”
মামলা আইনিভাবে মোকাবেলার কথা জানিয়ে আবসার বলেন, “আন্দোলনও চলবে।”
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আমির উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২ দিন ধরেই মামলার গুঞ্জন ছিল। আগেরবারও আন্দোলনের সময় মামলা হয়েছিল। পরিকল্পিত মামলা এ মামলা করা হলো। আমাদের কর্মসূচি চলবে।”
সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদে ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হলে করদাতা সুরক্ষা পরিষদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর তা স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম। পরে গত জানুয়ারিতে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়নের ওপর চার বছর আগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে সিসিসি আবেদন করলে ওই মাসেই তা প্রত্যাহার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি ‘ভাড়ার ভিত্তিতে’ বর্ধিত হারে গৃহকর আদায়ে সিটি করপোরেশন তৎপর হলে গত মাসখানেক ধরে স্থানীয় পর্যায়ে জনসংযোগ শুরু করে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। এরপর ২ সেপ্টেম্বর জনসভা থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর গণমিছিলের কর্মসূচি দেয় তারা।
নাছিরের সময় করদাতা সুরক্ষা পরিষদ আন্দোলনে নামলে তাতে সমর্থন দিয়েছিলেন প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমসহ চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনরা।
পরে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে খোরশেদ আলম সুজন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পুনর্মূল্যায়ন অনুসারে বর্ধিত গৃহকর আদায়ের অনুমতি চাইলে তাতে সম্মতি দিয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।