‘আদিবাসীরাও যেন দখল হয়ে না যায়’

“বাংলাদেশে অর্ধশতাধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখা জাতির জন্যই প্রয়োজনীয়,”- বলেন আবুল মোমেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2022, 01:35 PM
Updated : 9 August 2022, 01:35 PM

নদী, পাহাড়, জমি কিংবা জলাভূমির মতো আদিবাসীরাও যেন দখল হয়ে না যায় সে আহ্বান জানিয়ে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেছেন- তাদের স্বাতন্ত্র্য ও বৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে তিনি প্রাকৃতিক সম্পদ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষায় সমতলের মানুষকেও অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।

আবুল মোমেন বলেন, “এমন এক পটভূমিতে এই দিবসটি পালন করছি যখন কিছুদিন আগে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

“কিন্তু আমরা মনে করি, বাংলাদেশে অর্ধশতাধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখা জাতির জন্যই প্রয়োজনীয়।”

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে দেশেও তেমনটা হওয়া উচিত বলে জানান এই সাংবাদিক।

“পার্বত্য অঞ্চলের যে প্রাকৃতিক সম্পদ, তা রক্ষা করবার জন্য সেখানে জনবসতির একটি বিশেষ নীতি থাকা দরকার। সেটি বিশেষ অঞ্চল ঘোষিত হওয়া উচিত। এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকা দরকার।”

পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রেক্ষাপটে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমির অধিকার নিয়ে শর্তের উল্লেখ করে আবুল মোমেন বলেন, “সেটি এখনো বাকি রয়েছে। সেখানে যে ব্যাপক হারে সামরিকায়ন হয়েছে। সেটিও বন্ধ করা জরুরি।”

তিনি বলেন, “আজকে দেশে দখলদারদের ভীষণ উৎপাত দেখতে পাই। নদী, পাহাড়, জমি, জলাভূমি সবই দখল হয়ে যায়। এবং ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার হয়। এরকম প্রেক্ষাপটে আমরা নাগরিক অধিকারের কথা বলব।

“আদিবাসীরাও যেন দখল হয়ে না যায়। তাদের স্বাতন্ত্র্য, বৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে।”

দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষায় সমতলের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আবুল মোমেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, “তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি থেকে বুঝতে পারি সরকারকে অন্য রকম বুদ্ধি দেওয়ার লোকের এখন অভাব নেই। সরকারকে অজনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছে।

“আদিবাসী ইস্যুতেও সরকারকে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। দূরদর্শী হতে হবে। সমস্ত মানুষকে নিয়েই সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে হবে।”

ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান বলেন, “আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের যে দাবি সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সেটা তারা পায়নি। অথচ তাদের যে পরিচয় ‘আদিবাসী’ সেটিও আজকে কেড়ে নেবার পায়তারা হচ্ছে।

“কে কাকে কী সম্বোধন করবে সেটির নির্দেশনাও এখন দেওয়া হচ্ছে। আমরা আদিবাসী বলব, তারাও নিজেদের আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দেবে।”

১৯৯৭ সালে অনেক আশা নিয়ে শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারা আশায় ছিল অধিকার পাবে। কিন্তু ২৫ বছরে সেই চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি।

“চুক্তি যাতে বাস্তবায়ন না হয় এবং আদিবাসীরা যাতে আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দিতে না পারে সেজন্য একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তাদের ভূমি দখল করা হচ্ছে। বন উজাড় হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।”

‘ঐতিহ্যগত বিদ্যা সংরক্ষণ ও বিকাশে আদিবাসী নারী সমাজের ভূমিকা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবারের আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চট্টগ্রাম অঞ্চল’।

নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। সেখানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর চাকমা।

আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি তাপস হোড়, চট্টগ্রাম নগরের সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি চট্টগ্রামের সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, কবি সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান, কাউন্সিলর নীলু নাগ।

দিবসটি উপলক্ষে বিকালে জে এম সেন হলে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।