পরিবারের অভিযোগ, থানায় ডেকে নিয়ে ‘মানসিক নির্যাতন আর টাকা দাবির’ ঘটনায় ‘অপমানে’ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে রাফি।
Published : 21 Dec 2023, 01:34 PM
চট্টগ্রামে সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে এক তরুণ ও তার মা-বাবাকে কোতয়ালি থানায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কয়েক ঘণ্টা পর সেই তরুণের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে।
বন্দরনগরীর লালখানবাজার টাঙ্কির পাহাড় থেকে বুধবার রাতে তার লাশ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে খুলশী থানা পুলিশ।
মিনহাজুল ইসলাম রাফি নামের ২১ বছর বয়সী ওই তরুণ নগরীর একটি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি টাঙ্কির পাহাড় এলাকার অটোরিকশা চালক মো. মামুনের ছেলে।
পরিবারের অভিযোগ, থানায় ডেকে নিয়ে ‘মানসিক নির্যাতন আর টাকা দাবির’ ঘটনায় ‘অপমানে’ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে রাফি।
তবে পুলিশ বলছে, জিডির তদন্তের স্বার্থে রাফিকে থানায় ডাকা হয়েছিল। তাকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন করা হয়েছে। কোনো টাকাও দাবি করা হয়নি।
কোতয়ালি থানায় গত ৯ ডিসেম্বর জিডি করেছিলেন এক তরুণী। ওই জিডির বিষয়ে রাফি ও তার মা-বাবাকে সেই থানায় ডাকেন পরিদর্শক (তদন্ত) আরমান হোসেন।
রাফির মা রানু বেগম বলেন, “আমার ছেলের সাথে এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রেম ভেঙে যাওয়ায় আমার ছেলের মোবাইলে তার ছবি আছে অভিযোগ করে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিল।”
বুধবার বিকালে পরিদর্শক আরমান ফোন করে থানায় ডাকেন জানিয়ে রানু বেগম বলেন, সন্ধ্যার আগে তারা থানায় যান। বেশ কিছুক্ষণ থানায় বসিয়ে রাখার পর পরে তার ছেলের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় পুলিশ।
এরপর আরমান ‘২ লাখ টাকা চান’ বলে অভিযোগ করেন রানু বেগম। তিনি বলেন, “আমরা দিতে পারব না বলায় এক লাখ টাকায় নেমে আসে। তাতেও আমাদের আপত্তি থাকায় ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। আমরা তাও দিতে পারব না বলি। পরে তার পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে পাঁচ হাজার টাকা দিতে পারব বলি।”
রাফির খালাত বোনের স্বামী মো. কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সন্ধ্যায় রাফির বাবা-মা থানা থেকে আমার বাসায় আসে এবং থানায় কী হয়েছে সেগুলো বলছিল। রাত ১০টার দিকে আমার বাসায় খবর আসে, রাফি ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।”
থানার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিদর্শক আরমান হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক তরুণীর সাথে রাফির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ কারণে তাদের কিছু ‘ইন্টিমেট ছবি’ ছিল রাফির মোবাইলে। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় ছেলেটি বিভিন্নভাবে ওই মেয়েকে হুমকি দিয়েছে।
“তাদের ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেবে বলেছে। তার বাবাকেও হুমকি দিয়েছে। আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করে তার সাথে সম্পর্কের কথা বলেছে।”
এ ঘটনায় সেই তরুণী ৯ ডিসেম্বর জিডি করেন জানিয়ে আরমান বলেন, “তদন্তের স্বার্থে তাকে (রাফি) ডাকা হয়েছিল। এমন না যে তাকে আমরা ধরে নিয়ে এসেছি। তার বাবা-মাও সাথে ছিল। ছেলেটির বাবা-মার ধারণা, তাদের ছেলে কিছু জানে না, সে ভদ্র।
“থানায় বাবা-মার সামনে ছেলেটি সব স্বীকার করছে। ছেলেটি কিছু ছবি ডিলিট করেছে, কিছু ছবি মোবাইলে ছিল। তদন্তের স্বার্থে তার মোবাইলটি জব্দ করা হয়েছে। তার বাবা-মা বিষয়টি জানতে পেরে অনুশোচনা হয়েছে। বলেছে তারা শাসন করবে। সব শুনে বলেছে, তাদের ছেলে ভুল করে ফেলেছে। ছেলেটি এক মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তখন তারা বলেছে শাসন করবে।
“তখন আমি তাদের বলেছি, এটা পুলিশ ম্যাটার না, অন্যায় পুলিশের সাথে করেনি। মেয়েটির পরিবারের সাথে করেছে। তাদের সাথে কথা বলেন। তখন তারা থানা থেকে চলে গেছেন।”
টাকা দাবির বিষয়ে রাফির মায়ের অভিযোগের বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তার বাবা একজন সিএনজি ড্রাইভার, তার কাছ থেকে কেন আমি টাকা দাবি করব? জিডির তদন্তের স্বার্থে যদি কোন প্রশ্ন করা হয় সেটি কি আমার দোষ?
“যাদের ছেলে হারিয়েছে তারা অনেক কিছু বলতে পারে। আমার এখানে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আছে। ভাগ্য ভালো, যদি বাবা-মা সাথে না থাকত তাহলে আরও অন্য কিছু তারা বলত।”
লাশ উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলশী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আত্মহত্যার খবর পেয়ে রাতে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
“আমরা মৃত তরুণের বাবা-মাকে থানায় আসতে বলেছি। তারা যে অভিযোগ করবে, সেভাবে মামলা নেওয়া হবে।”