“দেশের বিরুদ্ধে, জনগণের বিরুদ্ধে এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে,” বলেন তিনি।
Published : 24 Jan 2024, 07:00 PM
একাত্তরের পরাজিত শক্তির ‘অনেক প্রেতাত্মা ছদ্মবেশে’ দলের ভেতরে ঢুকে পড়েছে মন্তব্য করে তাদের ‘বিতাড়িত করে দলকে পরিশুদ্ধ’ করার কথা বলেছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন।
বুধবার আদালত ভবনের প্রবেশ পথে নির্মিত শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় নাছির বলেন, “দেশের বিরুদ্ধে, জনগণের বিরুদ্ধে এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। এদেশের জনগণ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা সহ অসংখ্য নেতাকর্মী এখনো নিরাপদ নয়।
“এছাড়া একাত্তরের পরাজিত শক্তির অনেক প্রেতাত্মা ছদ্মবেশে দলের ভিতরেও ঢুকে পড়েছে। এদেরকে চিহ্নিত করে দল থেকে বিতাড়িত করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে এবং অবশ্যই দল, দেশ ও জাতিকে পরিশুদ্ধ করা হবে।”
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বন্দরনগরীর লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল। ওইদিন বেলা ১টার দিকে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকটি আদালত ভবনের দিকে আসার সময় গুলিবর্ষণ শুরু হয়। ওইদিন পুলিশের গুলিতে মোট ২৪ জন মারা যান।
পরে চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংক সংলগ্ন ‘চট্টগ্রাম গণহত্যায়’ নিহত শহীদদের স্মরণে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি রায় দেয় আদালত। তাতে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
বুধবার চট্টগ্রাম গণহত্যার ৩৬তম বার্ষিকীতে আয়োজিত আলোচনা সভায় নাছির বলেন, “১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি সংগঠিত চট্টগ্রাম গণহত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে সারাদেশের মধ্যে একমাত্র চট্টগ্রামে প্রয়াত জননেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলন ও প্রতিবাদ গড়ে ওঠায় চট্টগ্রাম গণহত্যাকারীদের বিচার হয়েছে।
“দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো পলাতক। তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।”
নাছির বলেন, “সেদিন যে বর্বর তাণ্ডব চালানো হয়, তাতে ২৪টি প্রাণ ঝড়েছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছিলেন। তারপরও উনাকে বারবার হত্যার প্রচেষ্টা হয়েছে।
“২০০৪ সালে ২১ অগাস্ট খালেদা জিয়া ও তার কুসন্তান তারেক জিয়ার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। সেইদিন আইভী রহমানসহ ২৬টি প্রাণ ঝড়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মী স্প্রিন্টার বিদ্ধ হয়ে এখনো যন্ত্রনায় ভুগছেন।”
সভায় সভাপতির বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও অবৈধ সামরিক জান্তা কখনো মেনে নিতে পারেনি। জিয়াউর রহমানও চাননি শেখ হাসিনা দেশে ফিরুক।
“তাই শেখ হাসিনার প্রাণনাশের জন্য আজ পর্যন্ত ২১টি ব্যর্থ হত্যা প্রচেষ্টা হয়েছে। তাকে হত্যার ধারাবাহিক অপচেষ্টা শুরু করেছিলেন স্বৈরাচারী সেনাশাসক এরশাদ।”
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সে সময়ের সিএমপি কমিশনার রকিবুল হুদার নির্দেশে পুলিশ পাখি শিকারের মত নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যার তাণ্ডব চালিয়েছিল মন্তব্য করে মাহতাব বলেন, “সেইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে আদালত ভবনের মুখে শেখ হাসিনা ট্রাকের উপর দাঁড়িয়েছিলেন।
“তখন আমিসহ অনেক নেতাকর্মী উনার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তোমরা মানুষ দেখেছ, কিন্তু গণঅভ্যুত্থান দেখোনি। শেখ হাসিনার কথা সত্য হয়েছিল। তারই নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন হয়।
মাহতাব বলেন, “অগণতান্ত্রিকভাবে অবৈধ পন্থায় শেখ হাসিনার সরকারকে ধাক্কা দেওয়া যাবে না এবং যায়নি। কারণ আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত রায়ে এবং অসংখ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে।”
নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ ও চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, নির্বাহী সদস্য মহব্বত আলী খান এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান মিন্টু বক্তব্য দেন।
এর আগে সভামঞ্চ থেকে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন তার বিদেশ সফরকালে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার ঘোষণা দেন।