এ সভায় চট্টগ্রামের আমদানিকারকরা উপস্থিত ছিলেন না; ছিলেন ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।
Published : 11 Dec 2023, 09:04 PM
দেশের বাজারে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ায় সীমান্তবর্তী জেলার আমদানিকারকদের ‘দায়ী করছেন’ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। তবে চট্টগ্রামের আমদানিকারকদের বিষয়ে তারা কিছু বলেননি।
তারা বলছেন, আমদানিকারকরা পেঁয়াজ পাঠিয়ে সেগুলোর দাম নির্ধারণ করে দেন। ওই দামের ওপর শুধু প্রতি কেজিতে ৪০ পয়সা করে কমিশন পান তারা। ফলে আমদানিকারকদের নির্ধারণ করে দেওয়া দাম ধরেই তাদের পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়।
সোমবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এমন অভিযোগের তির ছুঁড়লেন ব্যবসায়ীরা।
তাদের ভাষ্য, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে শুধু এ জেলায় অভিযান পরিচালনা করে তা সম্ভব নয়। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান তার কার্যালয়ে আমদানিকারকদের সঙ্গে ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। যদিও সেখানে কোনো আমদানিকারক উপস্থিত ছিলেন না; ছিলেন ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।
নিজের দেশের চাহিদা মেটাতে ভারত রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে রাতারাতি শনিবার দেশের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২২০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দামও প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এরপরই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অভিযানে নামে জেলা প্রশাসন। দেশব্যাপী অভিযানের পরও পেঁয়াজের বাজার চড়াই থাকে।
সভায় চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়াতদার সমিতির সহ-সভাপতি মো. আবুল কাশেম বলেন, “গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ৮৫-৯০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার তাদের কাছে খবর পাঠানো হয়েছে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে শনিবার ওই পেঁয়াজের দাম গিয়ে ঠেকে ১৫০-২০০ টাকায়।
“মূলত সোনা মসজিদ, ভোমরা এলাকায় বেশির ভাগ এবং ঢাকায় কিছু পেঁয়াজ আমদানিকারকদের অবস্থান। তারা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠায়। তাদের নির্ধারণ করে দেওয়া দামের সঙ্গে বাজারের অবস্থার সমন্বয় করে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়।”
কাশেমের দাবি, আমদানিকারকরা কত দামে আমদানি করেছে সেটা তাদের জানা নেই। শুধু চালান আর পরিবহন ভাড়ার দাম লিখে তাদের কাছে পণ্যগুলো পাঠানো হয়।
চট্টগ্রামের আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা দর ধরে পেয়াঁজ কেনেন না। কেজিতে ৪০ পয়সা কমিশনে মালামাল বিক্রি করেন। ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করলে যে কমিশন, ২০০ টাকাতেও একই কমিশন।
“কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত গিয়ে আমাদের জরিমানা করে, সে দায় আমদানিকারকরা নেয় না। জরিমানার টাকা আমরা পরিশোধ করি।”
বাজার মনিটরিংয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম সভায় বলেন, “অভিযানে গিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানে মালামালের সঠিক কাগজপত্র পাননি। একটি দোকানে বেশ কিছু পেঁয়াজ দেখা গেছে। আগে কেনা পেঁয়াজ কেন বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে-এমন প্রশ্ন করলে সেই ব্যবসায়ী জানান, নওগাঁ থেকে আমদানিকারক বেশি দামে বিক্রি করতে বলেছেন, তাই বিক্রি করছেন।”
দোকানে পণ্যের ক্রয়মূল্যের রশিদ না রাখার কথা জানিয়ে তৌহিদুল ব্যবসায়ীদের বলেন, “সবসময় অভিযানে গিয়ে দোকানে দামের কোনো কাগজ পাওয়া যায় না। সবাই আমদানিকারকদের দায়ী করেন। তবে আমরা যদি আইন প্রয়োগ করি, তাহলে দোকানের সব মালামাল জব্দ করতে পারব। কারণ কাগজ ছাড়া কোনো মালামাল রাখা হলে সেগুলো অবৈধ হিসেবে ধরা হবে।”
আড়তদার সমিতির নেতা জাহাঙ্গীর বলেন, আমদানিকারকদের এক টেবিলে আনতে না পারলে সাপ্লাই-চেইন ঠিক করা যাবে না। এর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে।
ডিসি ব্যবসায়ীদের প্রতি বলেন, “মুখে নির্ধারণ করে দেওয়া দামে আপনারা পণ্য বিক্রি করবেন না। কোনো আমদানিকার ইনভয়েস না দিলে তাদের কাছ থেকে মালামাল কিনবেন না।”