বহু বছর পার হলেও সাক্ষীর অভাবে শেষ হচ্ছে না আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার।
Published : 12 Feb 2023, 05:53 PM
বাঁশখালীতে ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সাড়ে ১৯ বছর ধরে বিচারাধীন মামলায় সাক্ষীদের হাজির করতে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
রোববার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এইচ এম শফিকুল ইসলাম এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী।
এই মামলার মোট সাক্ষী ৫৭ জন হলেও ২৩ জনের সাক্ষ্য এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা আদালতের পিপি ইফতেখার সাইমুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাক্ষ্যগ্রহণের ধার্য দিন থাকলেও সাক্ষীরা আজ আসেনি। অবশিষ্ট ৩৪ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে উইটনেস ওয়ারেন্ট (সাক্ষী হাজিরের পরোয়ানা) জারি করেছেন আদালত।
“তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ সদস্য এবং পিএম (ময়নাতদন্ত) রিপোর্ট দাখিলকারী ডাক্তারসহ সকল সাক্ষী হাজির করতে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।”
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনেই আদালতের এই আদেশ হয়েছে।
এই মামলায় শুনানির পরবর্তী দিন আগামী ৬ মার্চ। সেদিন যদি সব সাক্ষী একসঙ্গেও হাজির হন, তবে টানা সাক্ষ্যগ্রহণ হবে বলে জানান পিপি ইফতেখার সাইমুল।
“বহু বছর পার হলেও সাক্ষীর অভাবে বিচার কাজ শেষ হচ্ছে না। আমরা চাই এ বিচার কাজ শেষ হোক। সকল সাক্ষীর প্রতি আহ্বান আপনারা সাক্ষ্য দিতে আসুন।”
নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল বলেন, “এই মামলাটি শেষ করতে সংশ্লিষ্ট সবা্রই আন্তরিক হওয়া দরকার। অনেক সময় সাক্ষীরা সাহস ও উৎসাহ পেলে সাক্ষ্য দিতে আসেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ শুরু থেকে সম্পৃক্ত সকল রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগী হতে পারেন সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে উৎসাহী করতে।”
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর গ্রামের শীলপাড়ায় তেজেন্দ্র লাল শীলের ঘরের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে গান পাউডার ছড়িয়ে আগুনে পুড়িয়ে নারী-শিশুসহ ১১ জনকে হত্যা করা হয়ছিল ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর।
বাবা-মাসহ পরিবারের ১১ সদস্যকে হারিয়ে ১৯ বছর ধরে বিচারের আশায় ঘুরছেন পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য বিমল শীল।
গত কয়েক বছর ধরে মামলাটি আছে একই তিমিরে। চার-পাঁচ মাস পরপর তারিখ পরে। কিন্তু হাজির হয় না কোনো সাক্ষী। ৩৮ আসামির মধ্যে শুধু একজন কারাগারে, জামিনে আছেন ১৮ জন, বাকি ১৯ জন পলাতক।
সেই ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহত হন- তেজেন্দ্র লাল শীল (৭০), তার স্ত্রী বকুল শীল (৬০), ছেলে অনিল শীল (৪০), অনিলের স্ত্রী স্মৃতি শীল (৩২), অনিলের তিন সন্তান রুমি শীল (১২), সোনিয়া শীল (৭) ও চার দিন বয়সী কার্তিক শীল, তেজেন্দ্র শীলের ভাইয়ের মেয়ে বাবুটি শীল (২৫), প্রসাদি শীল (১৭), অ্যানি শীল (৭) এবং কক্সবাজার থেকে বেড়াতে আসা আত্মীয় দেবেন্দ্র শীল (৭২)।
বাঁশখালী হত্যার ১৭ বছর: বিচারের অপেক্ষা আর কত?
বাঁশখালী হত্যা: ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
তেজেন্দ্র লাল শীলের ছেলে বিমল শীল বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ২০১৯ সালের ২৩ জুন উচ্চ আদালত এই মামলার বিচার ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছিল। এরপর পেরিয়ে গেছে ৪৩ মাস।
২০০৩ সালে মামলা হওয়ার পর সাত তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার হ্লা চিং প্রু ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ডাকাতির উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগ, খুন ও লুটতরাজের অভিযোগে ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটিতে সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের নতুন অভিযোগ আনে। ওই বছরের ১৯ এপ্রিল নতুন করে ওই ধারায় ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয়।
২০১২ সালের ১২ মে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ওই বছরের ২ অক্টোবর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ২০১৩ সালের নভেম্বর আবার তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি ফেরত আসে। এখন ওই আদালতেই চলছে বিচার।