ঘণ্টায় ৫০ কেজি পাতা তোলেন উপলক্ষী, পাচ্ছেন প্রথম ‘চা পুরস্কার’

জাতীয়ভাবে প্রথমবারের মত চালু করা এ পুরস্কার আরও সাত ক্যাটাগরিতে পাচ্ছে সাত চা বাগান।

মিন্টু চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2023, 09:21 PM
Updated : 3 June 2023, 09:21 PM

উপলক্ষী ত্রিপুরা ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চা পাতা তুলছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নেপচুন বাগানে; জন্ম-বেড়ে ওঠাও তার চা পাতার দুলনীতে। সেই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এবার পাচ্ছেন শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারীর পুরস্কার।

তিন পুরুষের ধারাবাহিকতায় চা শ্রমিক হিসেবে কাজ করা ৪৫ বছরের এ শ্রমিক ঘন্টায় চা পাতা উত্তোলন করতে পারেন প্রায় ৫০ কেজি।

এক বছরে তিনি উত্তোলন করেছেন ২৮ হাজার ৩৪৪ কেজি চা পাতা; যা তাকে এনে দিচ্ছে ‘জাতীয় চা পুরস্কার’। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ চা বোর্ডের এ পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন উপলক্ষী ত্রিপুরা। পুরস্কার হিসেবে চা বোর্ডের পক্ষ থেকে এক ভরি ওজনের সোনার ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হবে।

আটটি ক্যাটাগরিতে দেওয়া পুরস্কারের মধ্যে একমাত্র চা শ্রমিক হিসেবে ‘শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারী’র সম্মাননা পাচ্ছেন উপলক্ষী। বাকি সাত ক্যাটাগরিতে সাত চা বাগান পেতে যাচ্ছে এবারের পুরস্কার।

চা শ্রমিক উপলক্ষী ত্রিপুরার জন্ম ১৯৭৮ সালে ফটিকছড়ির নেপচুন চা বাগানে।

এ বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিন পুরুষ ধরেই তার পরিবারের সদস্যরা চা বাগানের কাজে যুক্ত। সেও ছোটবেলা থেকে বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করে। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চা পাতা উত্তোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত।

উপলক্ষী দিনে এক ঘণ্টায় ৪৯ দশমিক ৯০ কেজি চা পাতা তুলতে পারেন জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, এবার শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারী (উত্তোলনকারী) হিসেবে আমাদের বাগানের এই শ্রমিক চা বোর্ডের এই পুরস্কার পাচ্ছেন। এজন্য বাগানের সবাই গর্বিত।

উপলক্ষী ত্রিপুরার এক ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে দুইজন ইস্পাহানী গ্রুপের মালিকানাধীন এ নেপচুন চা বাগানে কাজ করেন। তার স্বামী বিশু কুমার ত্রিপুরাও চা বাগানের শ্রমিক। তার ছোট তিন মেয়ে বাগানের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

মেজ মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, চতুর্থজন স্থানীয় বিদ্যালয়ের নবম এবং ছোট মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

রোববার মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে জাতীয় চা পুরস্কার দেওয়া হবে। সেজন্য উপলক্ষী বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, পুরস্কার পাব এটা জেনে ভালো লাগছে। এটা চা পাতা তোলার কাজ করা শ্রমিকদের জন্য ভালো সংবাদ।

অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমি পড়ালেখা করিনি। আমার জন্ম, বড় হওয়া বিয়ে সবই এই চা বাগানে। ছোটবেলা থেকেই এখানে কাজ করছি। কাজ করতে করতেই দ্রুত চা পাতা তোলার কাজ শিখেছি।

পড়ালেখা করা তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ যেন সুন্দর হয় এজন্য এখনও কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে তিনি সবার আর্শীবাদ কামনা করেন।

ডেপুটি ম্যানেজার রিয়াজ বলেন, চা পুরস্কার উত্তোলনকারী ক্যাটাগরিতে মনোনীত করতে চা বোর্ডের কর্মকর্তারা বাগানে এসে উপলক্ষীসহ অন্যান্য শ্রমিকের চা পাতা উত্তোলনের পরিমাণ রেকর্ড করেছেন। আমাদের আরও একজন নারী শ্রমিক বছরে ২৭ হাজার ৫১১ কেজি পর্যন্ত উত্তোলন করতে পেরেছিলেন।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপ সচিব মো. রুহুল আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২০২২ সালের কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে আট ক্যাটাগরিতে প্রথমবারের মতো জাতীয় চা পুরস্কার- ২০২৩ দেওয়া হচ্ছে।

চা শ্রমিকরা কত কেজি পাতা উত্তোলন করছেন সেটির ভিত্তিতে মজুরি পান জানিয়ে তিনি বলেন, বোর্ডের পক্ষ থেকে যাচাই বাছাই করে করে সর্বোচ্চ উত্তোলনকারী নির্বাচন করা হয়েছে।

একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী চা বাগান হিসেবে জাতীয় চা পুরস্কার পাচ্ছে শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগান। হবিগঞ্জের বাহুবল এলাকার মধুপুর চা বাগান পাচ্ছে সর্বোচ্চ গুনগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগান হিসেবে। আবুল খায়ের কজ্যুমার প্রডাক্টস শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক, পঞ্চগড় সদরের আনোয়ার সাদাত সম্রাট শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী, শ্রীমঙ্গলের জেরিন চা বাগান শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা বাগান ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাচ্ছে।

এছাড়া পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় অবস্থিত কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লিমিটেড বৈচিত্র্যময় চা পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ কোম্পানি ক্যাটাগরিতে এবং ঠাকুরঘাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গিতে অবস্থিত সুলতান টি ও গ্রিনফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার পাচ্ছে।